
আসন্ন ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামে কোরবানির পশুর সরবরাহ নিয়ে প্রাথমিকভাবে যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছিল, সেটি অনেকটাই কেটে গেছে। জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরে চট্টগ্রামে প্রায় ৮ লাখ ৬০ হাজার গরু, ছাগল, মহিষ ও ভেড়া কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে। অথচ জেলার পশুর চাহিদা রয়েছে প্রায় ৯ লাখের কাছাকাছি। এই সামান্য ঘাটতি পার্শ্ববর্তী জেলা কক্সবাজার, ফেনী ও নোয়াখালী থেকে পূরণ করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আলমগীর জানান, এবার পশু সরবরাহে বড় কোনো জটিলতা হবে না। খামারিদের সঙ্গে সমন্বয় করে পশু প্রস্তুতের সময় থেকেই তারা তথ্য সংগ্রহ করেছেন। ঘাটতি থাকলেও তা এমন নয় যে বাজারে সংকট হবে। বরং আগেভাগেই পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে যাতে আশেপাশের জেলা থেকে পশু আনায় কোনো বাধা না আসে।
তবে সংকট না থাকলেও, দাম নিয়ে দুশ্চিন্তা রয়েছে। খামারিরা বলছেন, চলতি বছর পশু খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় লালন-পালনের খরচও ব্যাপক হারে বেড়েছে। এর প্রভাব সরাসরি কোরবানির পশুর দামে পড়বে। পশু খাদ্যের মধ্যে গমের ভূষি, সয়াবিন খৈল, খড়সহ অন্যান্য উপাদানের দাম অনেকটাই বেড়েছে। এতে করে একজন খামারিকে প্রতিটি গরু লালন - পালনে অতিরিক্ত ৮ থেকে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত বেশি খরচ করতে হচ্ছে।
সীতাকুণ্ডের একজন খামারি মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, এ বছর তিনি ৫০টি গরু হাটে তুলবেন। কিন্তু গরু প্রতি খরচ আগের বছরের তুলনায় অনেক বেড়ে গেছে। তিনি জানান, "ভবিষ্যতে যদি বাজারে দাম না পাই, তাহলে বড় ধরনের লোকসান হতে পারে।"
এই অবস্থায় অনেকেই অনলাইন কোরবানির হাটের দিকে ঝুঁকছেন। জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর জানিয়েছে, বিগত বছরের মতো এবারও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পশু বিক্রির ব্যবস্থা থাকবে। এতে খামারিরা সরাসরি গরুর ছবি, ওজন ও দর দিয়ে ক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন। এতে মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাব কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এদিকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশও পশু পরিবহন ও হাট ব্যবস্থাপনায় কড়া নজরদারির ব্যবস্থা নিচ্ছে। নগরীতে বেশ কয়েকটি অস্থায়ী পশুর হাট বসবে, যেখানে থাকবে পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য মোবাইল টিম। হাটে যাতে ভুয়া ও অসুস্থ পশু বিক্রি না হয়, সে বিষয়েও সতর্কতা অবলম্বন করা হবে।
সব মিলিয়ে, চট্টগ্রামে কোরবানির পশুর বড় কোনো সংকট দেখা না গেলেও বাজার পরিস্থিতি ও দামের দিক থেকে ভোক্তা এবং খামারিদের মধ্যে চাপ বাড়ছে। একদিকে সরবরাহ ঠিক থাকলেও, উৎপাদন খরচ বাড়ায় পশুর দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন হতে পারে। ফলে এবার ঈদুল আজহার কোরবানি বাজার হবে অনেকটাই ব্যয়ের, যা সরাসরি প্রভাব ফেলবে সাধারণ মানুষের সিদ্ধান্তে।
এসএফ