ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৩ মে ২০২৫, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

পটুয়াখালীর কচ্ছপখালী খাল আজ মৃতপ্রায় 

অব্যাহত ভরাট, বাঁধ ও অব্যবস্থাপনার শিকার ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ খালটি

আবদুল্লাহ মানিক, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, কুয়াকাটা

প্রকাশিত: ১০:১১, ২৩ মে ২০২৫

পটুয়াখালীর কচ্ছপখালী খাল আজ মৃতপ্রায় 

দীর্ঘ বছর ধরে খনন না হওয়ায় পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার লতাচাপলী ইউনিয়নের কচ্ছপখালী স্লুইস গেট থেকে পূর্ব দিকে বিস্তৃত প্রায় ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ খালটি আজ মৃতপ্রায়। এক সময় এই খাল ছিল এলাকার কৃষি সেচ, মৎস্যজীবী কার্যক্রম এবং বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জলপথ। কিন্তু বর্তমানে খালের দুই পাশে গড়ে ওঠা অবৈধ বাঁধ, পুকুর ও ঘের, ভাঙাচোরা ব্রিজ-কালভার্ট এবং খননের অভাবে এটি কার্যত মৃত একটি জলাশয়ে পরিণত হয়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বছরের পর বছর ধরে কোনো ধরনের সরকারি উদ্যোগ না থাকায় খালটি ধীরে ধীরে তার প্রাকৃতিক রূপ হারিয়ে ফেলেছে। খালের দুই পাশে কাদামাটি জমে ধীরে ধীরে এটি ভরাট হয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি স্থানীয় কিছু ব্যক্তি খালের পাশে মাটি ফেলে বাঁধ নির্মাণ করে ছোট ছোট মাছের ঘের তৈরি করেছেন। কেউ কেউ আবার খালের মধ্যেই স্থায়ীভাবে পুকুর তৈরি করেছেন, যা খালের স্বাভাবিক প্রবাহকে সম্পূর্ণরূপে ব্যাহত করেছে।

অন্যদিকে, খালের উপর নির্মিত আয়রন ব্রিজ ও কালভার্টগুলো দীর্ঘদিন আগে ভেঙে পড়লেও সেগুলোর সংস্কার হয়নি। বরং এসব জায়গায় মাটি ফেলে সড়ক নির্মাণ করায় খালের জোয়ার-ভাটার স্বাভাবিক পানি চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে খালের পানিপ্রবাহ থেমে গিয়ে বিভিন্ন স্থানে পানির গন্ধ, কাদামাটি এবং আগাছায় ভরে উঠেছে পুরো জলপথ।

এর ফলে একদিকে কৃষকেরা চরম সেচ সংকটে পড়েছেন। মাঠে পানি পৌঁছানো না যাওয়ায় অনেক জমি অনাবাদি পড়ে আছে। অন্যদিকে বর্ষা মৌসুমে খালের দুই পাশের নিচু এলাকার বসতবাড়িগুলোতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে পরিবারগুলো মারাত্মক ভোগান্তির মধ্যে পড়ে। বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে গিয়ে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।

এলাকাবাসী জানান, তারা বহুবার প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের জানিয়েছেন, কিন্তু তেমন কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বিষয়টি নিয়ে তারা জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।

স্থানীয় কৃষক জামাল হোসেন বলেন, “এই খালটাই এক সময় আমাদের ফসলের প্রাণ ছিল। এখন পানি চাইলে পাম্প দিয়ে অনেক খরচ করে আনতে হয়, তাও ঠিকমতো পাওয়া যায় না। আর বর্ষায় তো বৃষ্টির পানি ঘরে ঢুকে যায়।”

এলাকার আরেক বাসিন্দা জাহাঙ্গীর জানান, “খালের আশপাশে যারা বসতি গড়েছে, তারা প্রতি বছর ভয় পায়—বৃষ্টি হলেই পানিতে ঘর ভাসে। খাল খনন না করলে এই অবস্থা থেকে মুক্তি নেই।”

এমতাবস্থায়, এলাকাবাসীর জোর দাবি—অবিলম্বে খালটি খননের উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি খালের দুই পাশে অবৈধ বাঁধ, ঘের ও পুকুর অপসারণ করে এর স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে ভাঙা কালভার্ট ও ব্রিজগুলো পুনঃনির্মাণ করে যোগাযোগ এবং পানি চলাচলের উপযোগী করতে হবে।

তারা আশা করছেন, সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এই দীর্ঘদিনের অবহেলিত সমস্যা সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে এলাকার কৃষি, পরিবেশ এবং জনজীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে।

নোভা

×