ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৩ মে ২০২৫, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

চায়ের দোকানে চলছে পঙ্গু নগেনের সংসার

আতিকুর রহমান,কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টর, পটুয়াখালী

প্রকাশিত: ১৭:৫৯, ২১ মে ২০২৫

চায়ের দোকানে চলছে পঙ্গু নগেনের সংসার

ছবি: জনকণ্ঠ

নাম তার নগেন চন্দ্র নাথ। পঞ্চাশের বেশি বয়স।অজানা রোগের জন্য শরীর থেকে কেটে ফেলা হয়েছে দুই পা।করছেন পঙ্গুত্ব জীবন।কিন্তু জীবন ও জীবিকার তাগিদে বেঁচে নেয়নি ভিক্ষাবৃত্তি। হার মানেননি জীবন যুদ্ধে। একটি ছোট্ট চায়ের দোকানে চলছে পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জের পঙ্গু নগেনের সংসার। মির্জাগঞ্জ মাজার মোড়ে তার এই দোকান। এই দোকান দিয়ে  চলছে তার ঔষধ খরচ, পরিবারের ভরণপোষণ ও ছেলের লেখাপড়া। একসময় সুস্থ সবল জীবন ছিল তার।

দিনমজুরি করে বেশ ভালোভাবেই চলছিল নগেনর জীবন। পরিবার নিয়ে সুখে-শান্তিতে দিন কাটাতো। মির্জাগঞ্জ উপজেলার মির্জাগঞ্জ গ্রামের মহেন্দ্র চন্দ্র নাথের ছেলে তিনি।কিন্তু হঠাৎ একটা ঝড়ে তছনছ হয়ে গেলো জীবনটা। নিয়তির নির্মম খেলায় শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন আজ দু'টি পা তার। সময় টা ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর। ভয়াল সেই সিডরের রাত। ঘূর্ণিঝড় সিডরের তাণ্ডবে জলোচ্ছ্বাসে  তলিয়ে যায় উপজেলার রাস্তা-ঘাট।পানিতে  থৈথৈ রাস্তা দিয়ে সেই রাতে বাজার যাচ্ছিল নগেন।কোন কিছুতে সেসময় পায়ে আঁচর কাটে বলে জানান নগেন। শুরু হয় পায়ে জ্বালা-যন্ত্রনা।পরের দিন বরিশাল শেবাচিমে ডাক্তার দেখান।রিপোর্ট দেখে ডাক্তার বলেন বিষাক্ত কিছু পায়ে কামড় দিয়েছে।কিছু দিন পরে দুই ফুলে ফেটে যায়।

পরে বছর শেবাচিমে দুই পা কেটে ফেলা হয়।অতিরিক্ত  বেদনানাশক ঔষধ খাওয়া খাদ্য নালীও ছিদ্র হয়ে যায়। পরে খাদ্য নালি অপারেশন করা হয়।এখন আর যেনো পেড়ে উঠছে না নগেন।ছোট্ট এই দোকান চালিয়ে   দুই মেয়ের বিবাহও দিয়েছেন। ১৮ বছরের ছেলে জয় দেবনাথ সুবিদখালী সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির শেষ বর্ষের পরীক্ষার্থী। নগেন বলেন, এখন আমি খুবই অসহায় হয়ে পড়েছি।

দোকানে মালামাল উঠানোর মতো অর্থ নাই। সবকিছু কিনে খেতে হয়।সংসারের উপার্জনের মতো আর কেউ নাই। ভিক্ষা পছন্দ করি না।যতদিন বাঁচাবো সতৎভাবে পরিশ্রম করে  চলবো। কিছু সহায়তা পেলে দোকানে জিনিস পত্র ওঠাতাম। শুধু বসবাসের জন্য মাত্র ৭ শতাংশ জমি ছাড়া অন্য কোন সম্পদ নাই।

ইউএনও স্যারের নিকট দোকানে মালামাল উঠানোর জন্য কিছু সহায়তা চেয়ে আবেদন করেছি। মির্জাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ তরিকুল ইসলাম বলেন, আমরা সাধ্যমতো তাকে সহায়তা প্রদানের চেষ্টা করবো।

সাব্বির

×