ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৩ মে ২০২৫, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ভাঙ্গুড়া-নওগাঁ সড়কে কাজ বন্ধ, প্রাণ গেল বাবা-ছেলের

ছাইফুল ইসলাম খান, সংবাদদাতা, ভাঙ্গুরা, পাবনা

প্রকাশিত: ১৭:৫৬, ২১ মে ২০২৫; আপডেট: ১৮:১৩, ২১ মে ২০২৫

ভাঙ্গুড়া-নওগাঁ সড়কে কাজ বন্ধ, প্রাণ গেল বাবা-ছেলের

ছবি: জনকণ্ঠ

পাবনার চলনবিল অঞ্চলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ মাধ্যম ভাঙ্গুড়া-নওগাঁ সড়কে সংস্কারকাজ বন্ধ রয়েছে মাসের পর মাস। পাবনার ভাঙ্গুড়া-নওগাঁ সড়কে সংস্কারকাজ ফেলে গেছেন ঠিকাদার। নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই ঠিকাদার কাজ বন্ধ করে চলে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এলাকাবাসী—এমনটাই জানান দৈনিক জনকণ্ঠ-এর সংবাদদাতাকে। এই সড়কে ইতোমধ্যেই প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে।

জানা গেছে, ২০২০ সালের জুন মাসে প্রায় ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি নির্মাণ করা হয়। কিন্তু নির্মাণকাজে নিম্নমানের ইট ও অন্যান্য সামগ্রী ব্যবহারের কারণে মাত্র চার বছরেই সড়কটির অবস্থা নাজুক হয়ে পড়ে।

পরবর্তীতে ২০২৩–২৪ অর্থবছরে সড়কটির নৌবাড়িয়া চৌরাস্তা মোড় থেকে ময়দানদিঘী বাজার পর্যন্ত সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার অংশের সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বরাদ্দ ধরা হয় ৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা। দরপত্রের মাধ্যমে কাজ পায় বরেন্দ্র লিমিটেড নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পরে প্রতিষ্ঠানটি কাজটি হস্তান্তর করে রিজন আহমেদ নামে এক ঠিকাদারের কাছে।

২০২৩ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি কাজের ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া হয় এবং ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তা শেষ করার শর্ত ছিল। কিন্তু মাত্র ৪০ শতাংশ কাজ শেষ করেই প্রায় সাড়ে চার মাস আগে কাজ ফেলে যান রিজন আহমেদ। সড়কের একাধিক স্থানে খোয়া ও ইট স্তূপ করে রেখে তিনি উধাও হয়ে যান।

এর পরিণতিতে ঘটছে নানা দুর্ঘটনা। গত ১৫ মার্চ সড়কে পড়ে থাকা খোয়ার ওপর মোটরসাইকেলের চাকা স্লিপ করে এক বাবা ও তার শিশু সন্তান ট্রাকের নিচে পড়ে মারা যান।

পাটুল গ্রামের বাসিন্দা জব্বার আলী বলেন,
“এই সড়ক আমাদের জীবনযাত্রার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। প্রতিদিন শত শত যানবাহন চলাচল করে এ পথে। ভাঙ্গুড়া–নওগাঁ–মহিষ–সুতি হয়ে বিশ্বরোডের সঙ্গে যুক্ত হয় এই সড়ক। এখান দিয়েই ঢাকায় যাতায়াত হয়। অথচ রাস্তার বেহাল দশার কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা আর দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।”

স্থানীয় গাড়িচালক দুলাল আহমেদ বলেন,
“এই রাস্তায় গাড়ি চালানো এখন যেন যুদ্ধ। কখন কোথায় গাড়ির যন্ত্রপাতি ভেঙে পড়ে, বলা যায় না। ধুলাবালির কারণে সামনের রাস্তাও দেখা যায় না ঠিকমতো।”

দৈনিক জনকণ্ঠ-এর সংবাদদাতা জানতে চাইলে ঠিকাদার রিজন আহমেদ বলেন,
“আমি এখন পর্যন্ত মাত্র ২৫ শতাংশ বিল পেয়েছি। বাকি বিলটা পেলে আবার কাজ শুরু করব।”

এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী মো. রবিউল ইসলাম বলেন,
“আমরা সড়কটি পরিদর্শন করেছি। ঠিকাদারকে কাজ শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যদি তিনি কাজ না করেন, তাহলে চুক্তিভঙ্গের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এদিকে বর্তমানে ইরি-বোরো পাকা ধান কাটার মৌসুম চলছে। এলাকাবাসী জানান, ধান কেটে এই রাস্তা দিয়ে গাড়ি-ঘোড়া চালানো এখন এক মহাবিপদ। তারা হাট–বাজারে ধান বিক্রির জন্য যাতায়াত করতে পারছেন না। পাশাপাশি লেবারদের মজুরি ঠিকভাবে পরিশোধ করতে না পারায় লেবার ও জমির মালিকদের মধ্যে প্রতিনিয়ত ঝামেলা দেখা দিচ্ছে।

উল্লেখ্য, চলনবিল অঞ্চলের অর্থনীতি, কৃষি এবং সাধারণ মানুষের যাতায়াতের জন্য ভাঙ্গুড়া–নওগাঁ সড়ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সড়ক দ্রুত সংস্কার না হলে শুধু দুর্ভোগই নয়, বড় ধরনের দুর্ঘটনা ও অর্থনৈতিক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।

আলিফ

×