
আসন্ন কোরবানির ঈদে বিক্রির জন্য সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার পোরজনা ইউনিয়নের উল্টাডাব গ্রামের কৃষক আবু সাঈদ সাধু সরদার প্রস্তত করেছেন ২২ মণ ওজনের সোহাগ বাবু নামের একটি ষাড় গরু। অস্টেলিয়ান জাতের এ ষাড় গরুটি এক নজর দেখতে সাধু সরদারের বাড়িতে প্রতিদিনই নানা বয়সের শত শত মানুষ এসে ভিড় করছেন। ক্রেতারাও এসে সাধ্যমত দামদর করছেন। ফলে গরুটিকে নিয়ে চারদিক হৈ চৈ পড়ে গেছে।
এ বিষয়ে কৃষক আবু সাঈদ সাধু সরদার বলেন, ২ বছর আগে তার গোয়ালের শংকর জাতের একটি শাহীয়াল গাভী সাদাকালো ডোরাকাটা এড়ে বাছুর জন্ম দেয়। বাছুরটির আকার আকৃতি ও ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি বড় ও হৃষ্টপুষ্ট হওয়ায় আদর করে তার নাম রাখা হয় সোহাগ বাবু। সেই থেকে তিনি সোহাগ বাবুকে পুত্র স্নেহে পরম যত্নে আদর সোহাগ দিয়ে লালন পালন করছেন। সোহাগ বাবুকে নিজ হাতে খাওয়ানো থেকে শুরু করে সবকিছুই করেন সাধু সরদার। সোহাগ বাবুকে লালণ পালন করাই এখন তার একমাত্র কাজ। প্রতিদিন খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে নিজ হাতে শুরু করেন সোহাগ বাবুর পরিচর্চা। গোবর ফালানো থেকে খাওয়ানো ও সাবান শ্যাম্পু দিয়ে গোসল করানোর কাজ চলে সকাল ১০টা পর্যন্ত।
এরপর নিজে গোসল ও খাওয়া সেরে কাস্তে হাতে বেড়িয়ে পড়েন চক পাথারে সোহাগ বাবুর জন্য তাজা ঘাস সংগ্রহে। সারাদিন চক পাথারে ঘুরে রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে সংগ্রহ করেন সোহাগ বাবুর জন্য বাছাই করা তাজা লকলকে সবুজ ঘাস। এরপর আড়াই মণ ওজনের বিশাল ঘাস বোঝাই বস্তা মাথায় নিয়ে বাড়ি ফেরেন। এই ফাঁকে সোহাগ বাবু আয়েসের সাথে শুয়ে বসে জাবর কাটতে থাকেন। সাধু সরদার ঘাসের বোঝা নিয়ে বাড়ি ফিওে ক্লান্তি ঝেড়ে সেই ঘাস পরিষ্কার পানিতে ভালো ভাবে ধায়ে খেতে দেন সোহাগ বাবুকে। আয়েশ করে খেয়ে সোহাগ বাবু যখন বিশ্রম নিতে থাকে সেই সময় সাধু সরদার দুপুরের খাওয়া সেরে নেন।
এরপর বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে সোহাগ বাবুর নানা পরিচর্চা। টানা ২ বছর ধরে ক্লান্তিহীন ভাবে সাধু সরদার আদরের সোহাগ বাবুর যত্ন করে আসছেন। ফলে এক নজর দেখতে একমাত্র মেয়ের বাড়িতে যাওয়ার সময়ও পান না তিনি। সাধু সরদার জানান, সোহাগ বাবুকে বাজারের যেনো তেনো খাবার খাওয়ান না। উন্নত মানের, খইল, সোলা, খেষারি, ভুট্টা, মাসকালাই কিনে নিজ হাতে তা গুড়ো করে গুড়ের পানি ও স্বাদ মত লবণ যুক্ত কওে সোহাগ বাবেিক সকাল সন্ধ্যা খাওয়ান। এতে বাজারের চেয়ে তার খরচ বেশি হলেও তিনি সোহাগ বাবুর খাওয়া দাওয়ার বিষয়ে কম্প্রোমাইজ করতে একে বারেই নারাজ।
সোহাগ বাবুর যত্ন পরিচর্চা ভালো ভাবে নিতে তিনি ২ বছর আগে নিজ ঘরের আরামের লেপ-তোষকের বিছানা ছেড়েছেন। এখন তিনি থাকেন সোহাগ বাবুর থাকার গোয়ালের পাশে ছোট্ট টিনের ছাউনির নিচে। রাত ভর নিজে না ঘুমিয়ে গভীর রাতে ২/৩ বার ঘুম থেকে উঠে তিনি সোহাগ বাবুর নির্গত গোবর ও চোনা পরিষ্কার করেন। যাতে সোহাগ বাবুর বিশ্রমের কোনো কষ্ট বা বেঘাত না ঘটে। সাধু সরদার আরও জানান, তার এখন বয়স হয়েছে। এরপরে গরুটির ওজন ও আকৃতি স্বাভাবিকের চেয়ে আনেক বড় ও বেশি হওয়ায় তারপক্ষে লালন পালন কষ্ট সাধ্য হয়ে পড়েছে।
এছাড়া বাজারে গো-খাদ্য খর, ভুষি, খইল, ভুট্টা, খেষারি, মাসকালাই, সোলার দাম দ্বিগুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় তার পক্ষে এতো অর্থের যোগান দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাই ছেলেদের পরামর্শে এ বছর কোরবানির ঈদে সোহাগ বাবুকে বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ক্রেতারাও এসে সোহাগ বাবুকে দেখছেন ও দরদাম করছেন। কিন্তু এখনও কেউ উপযুক্ত দাম না বলায় বেচা বিক্রি হয়নি। তিনি বলেন, সর্বসাকুল্যে সোহাগ বাবুর ওজন প্রায় ২২ মণ হবে। নিট মাংস হবে কমপক্ষে ১৫ মণ। সে হিসাবে ক্রেতারা গরুটির দাম সাড়ে ৪ লাখ টাকা বলেছেন। তিনি এর দাম আরও বেশির আশা করছেন।
সাধু সরদারের ছেলে রবিউল ইসলাম জানান, কাজের ফাঁকে ফাঁকে গরুটি লালন পালনে প্রায় সময়ই তিনি তার বাবাকে সহযোগিতা করেন। এছাড়া তার মা ও দুই ভাবি নানা ভাবে তার বাবাকে সাহায্য সহযোগিতা করে থাকেন। সোহাগ বাবুকে এক নজর দেখতে আসা আব্দুল্লাহ, তরিকুল ইসলাম ও জিল্লুর রহমান বলেন, লোকমুখে গরুটির কথা শুনে এক নজর দেখতে এসেছি। এতো বড় ষাড় গরু দেখে তারা উল্লাস প্রকাশ করেছেন।
লোকমান হোসেন নামের এক ক্রেতা বলেন, ষাড় গরুটি দেখে আমার পছন্দ হয়েছে। সাধ্য অনুযায়ী দামও বলেছি। কিন্তু গরুর মালিক এ দামে বিক্রি করতে রাজি হয়নি। তাই মন খারাপ নিয়ে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছি। তিনি বলেন, আমার আগেও আরও কয়েকজন দাম বলেছে। কিন্তু গরুর মালিক আরও বেশি দাম আশা করছেন। তবে তিনি কত দাম হেকেছেন তা বলতে রাজি হননি।
রাজু