
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় তামিম হোসেন (১৩) নামে এক স্কুলছাকে হত্যা করে ডোবায় লাশ ফেলে অটোরিকশা ছিনতাই করার দায়ে রিয়াজ হাওলাদার (২২) ও মো. রমজান মিয়া (১৫) নামে দুই আসামীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আজ বুধবার সকালে মঠবাড়িয়া থানা পুলিশ পাশ্ববর্তী পাথঘাটা থেকে তাদের গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতদের মঠবাড়িয়া জ্যেষ্ঠ বিচারিক আদালতে হাজির করে ১৬৪ ধারায় জবাবন্দীতে হত্যার দায় স্বীকার করে।
অভিযুক্ত আসামী রিয়াজ পাশ্ববর্তী পাথরঘাটা উপজেলার পূর্ব লেমুয়া গ্রামের মো. রিপন হাওলাদারের ছেলে ও মো. রমজান মঠবাড়িয়া উপজেলার দক্ষিণ মিঠাখালী গ্রামের মো. তোতা মিয়া হালাদারের ছেলে। অভিযুক্তদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছে আদালত।
নিহত তামিম হোসেন মঠবাড়িয়া পৌরশহরেরর দক্ষিণ মিঠাখালী মহল্লার অটোচালক ইয়াকুব আলী ফরাজির ছেলে। সে স্থানীয় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শেণীতে পড়ালেখা করছিলো।
মঠবাড়িয়া থানার উপ পরিদর্শক মো. রুহল আমীন মঠবাড়িয়া থানায় প্রেস ব্রীফিংয়ের মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ১০০ টাকা নিয়ে কিছুদিন আগে স্কুলছাত্র অটোচালক মো. তামিমের সাথে আসামীদের ঝগড়া ও হাতাহাতি হয়। এর জের ধরে গত বুধবার (৭ মে) পরিকল্পিতভাবে অটোচালক তামিমকে নির্জন পথে আটকে হত্যা করে উপজেলার টিকিকাটা গ্রামের সাইফী নগর মাদ্রাসা সংলগ্ন কৃষিজমির একটি ডোবায় লাশ ফেলে রেখে তার অটোরিকশা নিয়ে পালিয়ে যায় আসামীরা। পরদিন গ্রামবাসি ডোবায় লাশ ভাসতে দেখে থানায় খবর দিলে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায়। এ ঘটনায় নিহত তামিমের মা তাজেনুর বেগম বাদী হয়ে মঠবাড়িয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে পুলিশ তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে হত্যাকারিদের সনাক্ত করে গ্রেফতার করে।
নিহত অটোচালক তামিরে পরিবার জানায়, গত বুধবার বুধবার বিকেলে পঙ্গু বাবার অটোরিকশা নিয়ে বের হয়ে আর বাড়িতে ফেরেনি। দুর্বৃত্তরা অটোরিকশা ছিনতাই করে তামিমকে হত্যা করে লাশ মাঠের ডোবায় ফেলে রাখে। পরে হত্যাকারিরা তার অটোরিকশা ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করে ভাগভাটোয়ারা করে।
থানা ও পারিবারিকে সূত্রে জানাগেছে, মঠবাড়িয়া পৌরশহরের দক্ষিণ মিঠাখালী মহল্লার বাসিন্দা অটোচালক মো.ইয়াকুব ফরাজি সম্প্রতি সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে পঙ্গু হয়ে বাড়িতে শয্যাশায়ি। তিন সদস্যের পরিবারের ভরনপোষণ চলতো তার অটো চালিয়ে। চরম অর্থকষ্ট পড়ায় পরিবারের একমাত্র স্কুল পড়ুয়া ছেলে তামিম হোসেন স্কুলের ফাঁকে ফাঁকে বাবার অটোরিকশা চালিয়ে পরিবারে অর্থের জোগান দিত। গত বুধবার বিকালে সে বাবার অটোরিকশা নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়। এরপর সে আর বাড়িতে ফিরে আসেনি। পরদিন মঠবাড়িয়া উপজেলার টিকিাকাটা সাইফী নগর মাদ্রাসা সংলগ্ন কৃষিজমির ডোবায় লাশ ভাসতে দেখে গ্রামবাসি থানায় খবর দেয়। শিশুটির পরিবারের স্বজনরা খবর পেয়ে থানায় এসে তার লাশ সনাক্ত করে।
নিহত তামিম হোসন এর শোকাহত মা তাজেনুর বেগম বলেন, আমার স্বামী পঙ্গু হয়ে ঘরে পড়ে আছে। পেটের দায়ে আমার ছেলে মাঝে মাঝে বাবার অটোরিকশা চালিয়ে পরিবারে খরচ চালাত। আমার ছেলের হত্যাকারিদের কঠোর বিচার চাই।
মঠবাড়িয়া থানার অফিসার ইনচার্র্জ (তদন্ত) মো. আবদুল হালিম তালুকদার ঘটনা নিশ্চিত করে বলেন, গ্রামবাসির কাছে খবর পেয়ে শিশুটির লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তে পাঠানো হয়। শিশুটির পরিবার এ ঘটনায় হত্যা মামলা দায়ের করলে তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে হত্যাকারিদের সনাক্ত করে গ্রেফতার করা হয়েছে। আদালতে আসামীরা জবানবন্দীতে হত্যার দায় স্বীকার করেছে। আদালত আসামীদের কারাগারে পাঠিয়েছে।
রাজু