
অ্যাম্বুলেন্সে করে অন্তঃস্বত্তা স্ত্রীকে নিয়ে সিজারিয়ান করাতে ঢাকায় যাচ্ছিল মাওলানা বিল্লাল ফকির। কিন্তু মাঝপথে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে এক নিমিষেই বাসের ধাক্কায় প্রাণ যায় একই পরিবারের ৪ জনসহ ৫ জনের। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায় অন্তঃস্বত্তা গৃহবধূ রোজিনা আক্তার। পরে রাজধানী ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে সিজারিয়ান হলে রোজিনার কোল জুড়ে আসে এক পুত্র সন্তান। নিহতদের গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরের মিঠাপুর গ্রামে চলছে শোকের মাতম।
এই ঘটনায় অভিযুক্ত বাস চালকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির পাশাপাশি নিহতের পরিবারে সহযোগিতার দাবি জানিয়েছেন স্বজন ও এলাকাবাসী। এদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মর্গে নিহতদের ময়না তদন্ত শেষ হয়। পরে মরদেহ নিয়ে আসা হয় মাদারীপুরে। সেখানে পারিবারিক কবরস্থানে চলছে দাফন প্রক্রিয়া।
স্বজনরা জানায়, বৃহস্পতিবার (৮ মে) সকালে মূমূর্ষু অন্তঃস্বত্তা স্ত্রী রোজিনা আক্তারকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছিলেন মাদারীপুরের মিঠাপুর এলাকার মাওলানা বিল্লাল ফকির। মাঝপথে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের মুন্সিগঞ্জের নিমতলা এলাকায় অ্যাম্বুলেন্সের চাকা ফেটে যায়। অ্যাম্বুলেন্স থামিয়ে চাকা পরিবর্তন করছিলেন চালক। এ সময় কুষ্টিয়া থেকে ঢাকাগামী গোল্ডেন লাইন পরিবহনের যাত্রীবাহী একটি বাস চাপা দিলে ঘটনাস্থলে মারা যান বিল্লাল, তার বাবা সামাদ ফকির, মা সাহেদা বেগম ও তার ছোটবোন আফসানা আক্তার এবং অ্যাম্বুলেন্স চালক মাহবুব সরদার। এই ঘটনায় আহত হন অন্তঃস্বত্তা গৃহবধুসহ অন্তত ৩ জন।
এক সঙ্গে একই পরিবারের ৪ জনসহ ৫ জন নিহতের ঘটনায় এলাকাজুড়ে চলছে শোকের মাতম। এই ঘটনায় অভিযুক্ত চালকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন স্বজন ও এলাকাবাসী। পাশাপাশি সরকারের কাছে নিহতদের পরিবারের পাশে থাকার অনুরোধও করেন তারা। এদিকে দুর্ঘটনার পর আহত অন্তঃস্বত্তা গৃহবধূ রোজিনাকে ভর্তি করা হয় রাজধানী ঢাকার ধানমন্ডির বেসরকারি একটি হাসপাতালে। সেখানে সন্ধ্যায় সিজারিয়ান করানো হলে ভুমিষ্ট হয় এক পুত্র সন্তান। এছাড়া নিহত বিল্লাল ফকিরের সংসারে মাদ্রাসা পড়ুয়া তিন মেয়ে রয়েছে।
প্রতিবেশি মুন্নি আক্তার বলেন, একসঙ্গে একই পরিবারের ৪ জন মারা যাবে এটা কখনই বুঝতে পারি নাই। এ শোক আমরা কি করে সইবো। এটা মেনে নেবার নয়।
বিল্লালের ফুফাতো ভাই মাওলানা গোলাম রহমান জানান, সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে একই পরিবারের ৪ জনসহ ৫ জনের। প্রিয়জনদের হারিয়ে পাগল প্রায় পরিবারের অন্য সদস্যরা। এলাকাজুড়ে শোকের মাতম। এই ঘটনায় দায়ী গোল্ডেল লাইন পরিবহনের চালকের ফাঁসি চাই। বেপরোয়া গতির কারনেই ঝড়ে গেল তাজা ৫টি প্রাণ। এই বিচার করতেই হবে।
এলাকাবাসী রুস্তুম মিয়া বলেন, নিহতের পরিবারে পাশে সরকার না দাঁড়ালে বাকি সদস্যরা ধুকে ধুকে মারা যাবে। আমাদের আশা সরকার ও প্রশাসন নিহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।
মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াদিয়া শাবাব জানান, একই সঙ্গে ৫ জন মারা যাবার ঘটনা খুবই মর্মান্তিক। নিহতদের পরিবারকে এখন সমবেদনা জানানো ছাড়া আর কিছুই দেয়ার নেই। এছাড়া সরকারিভাবে যত ধরনের সহযোগিতা করা যায়, সে ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসন পাশে থাকবে।
রিফাত