ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৭ মে ২০২৫, ২৩ বৈশাখ ১৪৩২

রায়পুরে পাকা সয়াবিন কাটতে ভয় পাচ্ছেন কৃষকরা

দাম নিয়ে হতাশা

প্রকাশিত: ২১:৪৩, ৬ মে ২০২৫

রায়পুরে পাকা সয়াবিন কাটতে ভয় পাচ্ছেন কৃষকরা

মেঘনার বুকচিরে উঠে আসা চর

নিজস্ব সংবাদদাতা, রায়পুর, লক্ষ্মীপুর ॥ মেঘনার বুকচিরে উঠে আসা চরগুলোতে এখন সোনালি সয়াবিনের জোয়ার। লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলার চর কাছিয়া, চর ঘাসিয়া, চর কানিবগা, চর জালিয়া, টুনির চরসহ ছয়টি চরজুড়ে চোখ ধাঁধানো সয়াবিনের শস্যক্ষেত। কিন্তু এ সৌন্দর্য এখন আর কৃষকের মনে আশার আলো জ্বালাতে পারছে না।

কারণ, ফসল কাটা নিয়ে রাজনৈতিক হুমকি, চাঁদাবাজি এবং অনিশ্চিত বাজারদরে হতাশ কৃষকের মুখে শুধু ক্লান্তি আর আতঙ্ক। কৃষক ইউনুস মিয়া বলেন, ‘গাছ ফল দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু কাটতে গেলেই ভয়, কেউ এসে ধাওয়া করে, কেউ আবার টাকা চায়। নিজের ফলানো ফসলেই যেন আমরা অপরাধী হয়ে গেছি।’
চরের জমিগুলোর অধিকাংশই সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত। বিগত এক দশকে রাজনৈতিক পালাবদলে এই জমিগুলো দখলবাজ নেতাদের হাতবদল হয়েছে বারবার। এক সময় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতাদের দখলে থাকা জমিগুলো এখন নিয়ন্ত্রণ করছে বিএনপির দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠী। চরভিত্তিক রাজনীতি আজ কৃষকের জীবিকাকে অস্তিত্বসংকটে ঠেলে দিয়েছে। চরের কৃষক রফিজ সরদার জানান, ‘প্রতি একরে ১০-১৫ হাজার টাকা চাঁদা না দিলে জমির ফসল কাটতে দেওয়া হচ্ছে না।

যারা দিচ্ছে, তারা কাটতে পারছে। যারা দিতে পারছে না, তাদের গাছ পেকে গেলেও মাঠে দাঁড়িয়ে আছে।’ বিএনপির দুইপক্ষের দ্বন্দ্বে রক্তপাতও ঘটেছে। গত ৭ এপ্রিল সংঘর্ষে নিহত হন দুজন, আহত হয় বেশ কজন। ঘটনাটি জমির দখল ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ছিল বলে জানায় স্থানীয় প্রশাসন। এ সংঘাতের নেতৃত্বে ছিলেন উত্তর চরবংশী ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি মো. ফারুক কবিরাজ ও কৃষক দলের উপজেলা সদস্যসচিব জিএম শামীম, দুজনই এখন পলাতক, এবং হত্যা মামলার আসামি।

রায়পুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইমরান খান বলেন, ‘ফসল যিনি চাষ করেছেন, ফসলের মালিক তিনিই। চাঁদা বা ভয়ভীতি মেনে নেওয়া হবে না। আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মাঠে আছি।’ রায়পুরে এবার রেকর্ড ৭,৫৪০ হেক্টর জমিতে সয়াবিন আবাদ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেলেও ফলন প্রত্যাশিত হয়নি। খরার কারণে গাছ ছোট হয়েছে, গুটি কম এসেছে, দানাও ছোট। প্রতি বিঘায় কৃষকের খরচ ৮-৯ হাজার টাকা হলেও, অনেকেই ৬ মণের নিচে ফলন পেয়েছেন। বর্তমানে বাজারে প্রতি মণ সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১,২০০-১,৩০০ টাকা দরে।

সয়াবিন চাষ শুধু অর্থনীতি নয়, চরাঞ্চলের মানুষের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ঋণের বোঝা শোধ করতে না পারলে কৃষককে গরু, ছাগল বিক্রি করে দিতে হয়। সন্তানদের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়, স্কুলের ফি বাকি পড়ে। স্থানীয় এক স্কুলশিক্ষক জানান, ‘লোকসান হলে ছাত্ররাই মাঠে যায়, বইয়ের পাতা ফেলে দেয়।’

×