
মার্চ-এপ্রিল দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীতে ইলিশ ধরার জন্য মধ্যরাত থেকে নেমেছেন জেলেরা। ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা নদীতে বিচরণ করে মিলছে না কাক্সিক্ষত ইলিশ। ইলিশ না পেয়ে অনেক জেলে ফিরছেন খালি হাতে। তবে জেলেদের হতাশা কেটেছে পোয়া, শিলন, ভেলে, চেওয়া, ছোট চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পেয়ে। সদর উপজেলার তরপুচণ্ডী ইউনিয়নের আনন্দবাজার এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে জেলেদের কর্মচাঞ্চল্যতা। কেউ মাছ ধরার জন্য নদীতে নামছেন। আবার অনেকে জাল ঠিকঠাক করছেন। কেউ কেউ ধরে আনা মাছ পাড়েই বিক্রি করছেন।
আনন্দ বাজার এলাকার জেলে সুজন দেওয়ান বলেন, তিনি শুক্রবার রাত ৩টায় নদীতে নেমেছেন। নৌকায় ছিলেন ৩ জেলে। সকাল ১০টায় মাছ ধরা শেষে পাড়ে এসেছেন। পেয়েছেন পোয়াসহ ছোট প্রজাতির মাছ। বিক্রি করেছে ৪ হাজার ৮০০ টাকা।একই এলাকার জেলে মিজানুর রহমান বলেন, ভোরে নেমেছেন নদীতে। উঠে এসেছেন আকাক্সিক্ষত ইলিশ পাননি।ছোট মাছের সঙ্গে ৮ কেজি ওজনের পাঙ্গাশ মাছ পেয়েছেন জেলে আরিফুর রহমান ঢালী। তিনি বলেন, পাঙ্গাশসহ সব মাছ বিক্রি করেছেন ১৪ হাজার টাকা। নিষেধাজ্ঞা শেষে যে পরিমাণ মাছ পাওয়ার কথা ওই পরিমাণ মাছ জালে ওঠেনি। শহরের লঞ্চঘাট এলাকার জেলে বাচ্চু দেওয়ান বলেন, ভোরে নেমেছেন নদীতে। ইলিশ পাওয়া যায়নি। তবে পোয়া মাছ পেয়েছেন। চাঁদপুর সদর উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মির্জা ওমর ফারুক বলেন, ইলিশ পরিভ্রমণশীল মাছ। সাগর থেকে নদীতে আসে, আবার সাগরে চলে যায়। আশা করি জেলেরা তাদের কাক্সিক্ষত ইলিশ পাবে। শুধুই ইলিশই নয়, নদীর সব ধরনের মাছই মূল্যবান এবং জেলেরা পাচ্ছে। ইলিশের পোনা জাটকা রক্ষায় ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত দুই মাস চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী পর্যন্ত পদ্মা-মেঘনার প্রায় ৭০ কিলোমিটার অভয়াশ্রম ঘোষণা করে সরকার। এই সময় ইলিশসহ সব ধরণের মাছ আহরণ, ক্রয়-বিক্রয়, মজুত ও পরিবহন নিষিদ্ধ ছিল।
ভোলায় হতাশ
নিজস্ব সংবাদদাতা ভোলা থেকে জানান, দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে ইলিশের দেখা মিলছে না। জেলেরা কাক্সিক্ষত ইলিশ না পাওয়ায় কিভাবে ধারদেনা পরিশোধ করবে তা নিয়ে হতাশায় পড়েছেন। তবে মৎস্য কর্মকর্তা বলছে, আগামী পূর্ণিমার জোতে জেলেরা কাক্সিক্ষত ইলিশ পাবে। সেই আশায় অপেক্ষার প্রহর গুনছেন ভোলার দুই লক্ষাধিক জেলে। সংশ্লিষ্টরা জানান, ‘ইলিশসহ অন্যান্য মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে গত মার্চ ও এপ্রিল দুই মাস মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর ১৯০ কিলোমিটারজুড়ে সব ধরনের মাছ ধরার ওপর সরকার নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এতে করে সব ধরনের মাছ ধরা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ ছিল। সরকারের এই নিষেধাজ্ঞা শেষ হয় গত বুধবার মধ্যরাতে। তার পর থেকেই ভোলার নদীতে উৎসবমুখর পরিবেশে জেলেরা মাছ ধরতে নেমে পড়েন। সরেজমিন দেখা যায়, ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর চিরচেনা চিত্র ফিরে এসেছে। জেলেদের নৌকা ও ট্রলারে নদীতে চলছে মাছ ধরার ব্যস্ততা। নদীতীরের ঘাটগুলোতে উৎসবমুখর পরিবেশ। সারারাত নদীতে মাছ ধরার পর একে একে জেলেরা ইলিশা মাছঘাটসহ বিভিন্ন ঘাটে এসে পৌঁছাচ্ছেন।
নিষেধাজ্ঞা শেষের পর পরই আশা ছিল নদীতে জালে ভরপুর ইলিশ ধরা পড়বে। কিন্তু আশানুরূপ ইলিশ ধরা না পড়ায় হতাশ হয়েছেন জেলেরা। তাদের অভিযোগ, নদীতে মাছ কম এবং যে কয়টি ধরা পড়ছে তা আকারে ছোট। অনেকের নৌকায় মাত্র দুই-চারটি ইলিশ দেখা গেছে। গুটিকয়েক মাছ দিয়ে তাদের ট্রলারের খরচের টাকাও ঠিক মতো ওঠে না। জেলেরা জানান, দুই মাস নদীতে নামতে পারিনি। ধারদেনা করে সংসার চালিয়েছি। এখন যদি মাছ না পাই, তবে সেই দেনা শোধ করব কী করে?
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব বলেন, বৃষ্টি আসার সঙ্গে সঙ্গে ও পূর্ণিমার জো আসার পর নদীতে কাক্সিক্ষত বড় ইলিশ ধরা পড়বে। গতবারের তুলনায় এই ইলিশ উৎপাদন আরও বেশি পাওয়া যাবে।
প্যানেল