
.
বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সমন্বয় এবং তদারকির অভাবে হালদা নদীতে বেড়েছে দূষণ। ঘটছে মা মাছ ও ডলফিনের মৃত্যু। কয়েক বছরে মারা পড়েছে ৪৫টি ডলফিন। চোরের দল নির্বিচারে মা মাছ শিকার করছে। কলকারখানা ও খামারের নানা রকমের দূষণে নষ্ট হচ্ছে হালদার পানি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এশিয়ার মিঠাপানির প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র তদারকির অভাবে শিকারিরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। প্রতিবছর ডিম সংগ্রহের সময়টুকু (এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে জুন পর্যন্ত) ছাড়া দেখা মেলে না মৎস্য বিভাগের কর্তাদের। জেলা মৎস্য বিভাগের অধীনস্থ পুরো চট্টগ্রাম বিশেষ করে হাটহাজারী ও রাউজানে জনবল সংকট রয়েছে।
স্থানীয় চিহ্নিত জেলে ও মাছ চোররা প্রতিদিন ঘেরা জাল, বিষ ঢেলে ও বড়শি বসিয়ে মা মাছ ও ডলফিন শিকার করছে। এছাড়া ইঞ্জিনচালিত নৌকা চলাচল নিষিদ্ধ হলেও থেমে নেই বালু উত্তোলন। ফলে ইঞ্জিনচালিত নৌকার আঘাতে মারা পড়ছে মা মাছ ও ডলফিন।
সূত্র জানায়, ২০২১-২০২২ (জুলাই) এক বছরে ৬৮টি অভিযানে মাত্র দুজনকে ১৫ দিন ও একমাসের কারাদ- দেওয়া হয়েছে। তাই মাছ চোররা চিহ্নিত হলেও স্থানীয় প্রতিনিধিদের যুক্ত না করার কারণে ধরা পড়ে না। কারণ মাছ শিকারিরা মূলত রাত ও ভোরের সময় নদীর নির্জন জায়গায় জাল বসান। মাছ চোররা স্থানীয় ও চিহ্নিত। তাই নদীর পাড় এলাকায় তৎপরতা বাড়াতে হলে মাঠ পর্যায়ে যোগাযোগ বৃদ্ধি করতে হবে। হালদার দেখভালে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের যুক্ত করা গেলে মাছ শিকারিদের আইনের আওতায় আনা সহজ হবে।
চট্টগ্রাম নগরীর অক্সিজেন, আবাসিক এলাকা, বটতল ও আশপাশের কলকারখানার বর্জ্য বানশাহী খাল কুয়াইশ হয়ে হালদাতে গিয়ে পড়ে। একইভাবে বড়দীঘিপাড়ের ইছামতী ও কাটাখালী খাল হয়ে রাসায়নিক বর্জ্য হালদায় গিয়ে পড়ছে। এছাড়া হালদা নদীর আশপাশ এলাকায় অন্তত কয়েকশ’ গরুর খামার রয়েছে, যার কোনোটিতে নেই ইটিপি। এসব খামারের গোবরের বর্জ্য সরাসরি বা সংযুক্ত খাল হয়ে হালদায় পড়ছে। এছাড়া কুয়াইশ নজুমিয়াহাট বামনশাহী খাল হয়ে দূষণ বাড়লেও পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো খবর নেই।
আমানবাজারের পূর্বে বাথুয়া (সোনা তোয়ান্নের দোকান) এলাকায় একটি খামারের কয়েকশ’ গরুর বর্জ্য লালচন্দ্রবিল হয়ে হালদায় গিয়ে পড়ছে। বর্জ্যরে গন্ধে টিকতে পারছে না আশপাশের বাসিন্দা। রাউজান হাটহাজারীর বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠা ডেইরি ফার্ম, পোল্টি ফার্মের বজ্য খাল, ছড়া দিয়ে গিয়ে হালদা নদীতে পড়ছে। জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তথ্যমতে, উত্তর চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে ৩৮৯টি, রাউজানে আছে ৪৩৪টি এবং ফটিকছড়িতে কয়েকশ’ গরুর খামার রয়েছে।