রাজৈর উপজেলার কুমার নদ থেকে বালু উত্তোলন করে নিচ্ছে অবৈধ ব্যবসায়ীরা
কোনো কিছুতেই থামছে না নদ-নদীতে অবৈধ বালু উত্তোলন ॥ দিন দিন অপ্রতিরোধ্য হচ্ছে ড্রেজার মালিক ও বালু ব্যবসায়ীরা। ২০২০ সালের অক্টোবরে জেলার নদ-নদীকে ড্রেজার মুক্ত ঘোষণা করেন সাবেক জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন। তখন কিছুদিন বন্ধ থাকলেও আবার তারা সক্রিয় হয়ে ওঠে, যা এখনো চলমান রয়েছে। শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর দিনে কিছুটা আড়ালে থাকলেও রাতভর কার্যক্রম চালাচ্ছে অসাধু বালু ব্যবসায়ীরা।
জেলা ও উপজেলার ২০-২৫টি স্পটে বালু উত্তোলনের কারণে ভাঙছে নদ-নদী, ফসলি জমি। ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে অনেক পরিবার। অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার পাচ্ছেন না এলাকাবাসী। যদিও প্রশাসন বলছে, বালু উত্তোলন বন্ধে অভিযান চলমান রয়েছে। বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত প্রভাবশালীরা। তাদের ব্যাপারে মুখ খুলতেও ভয় পান স্থানীয়রা
এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রাজৈর উপজেলার হরিদাসদী-মাহেন্দ্রদী, কবিরাজপুর, সদর উপজেলার শ্রীনদী, কালিরবাজার, ধুরাইল, পাঁচখোলার জাজিরার তালুক, মহিষেরচর, কালকিনির ফাঁসিয়াতলা, শিবচরের দত্তপাড়া, সন্ন্যাসীরচর, বন্দরখোলা, কাঁঠালবাড়ি, কুতুবপুরসহ জেলার ২০-২৫টি স্পটে নিয়মিত বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। দিনেরবেলায় ড্রেজারগুলো নদ-নদীর পাড়ে আড়ালে ও কাঁশবনে নোঙর করে রাখা হয়। সন্ধ্যার পর থেকে ভোর পর্যন্ত ড্রেজার মেশিন দিয়ে প্রতিদিন চলে বালু উত্তোলন। বছরের পর বছর এই কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে অসাধু একাধিক চক্র।
এতে ভাঙছে নদ-নদী, ফসলি জমি। ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব অনেক পরিবার। জেলার ৫টি উপজেলায় কাগজেকলমে ১৭টি নদ-নদী থাকলেও পদ্মা, পালরদী, ময়নাকাটা, কুমার, আড়িয়াল খাঁ, বিষারকান্দিসহ দৃশ্যমান নদ-নদীর সংখ্যা ৮টি। সরকারি ইজারা ছাড়াই প্রকৃতি ও পরিবেশের ক্ষতি করে এসব নদ-নদী থেকে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে প্রতিদিন লাখ লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় গড়ে ওঠা এসব অবৈধ বালু ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কাছে একাধিকবার অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার মিলছে না। রাজৈর উপজেলার হরিদাসদী-মহেন্দ্রদীর কালিবাড়ির কুমার নদ, কালকিনির ফাঁসিয়াতলার আড়িয়াল খাঁ নদ, শিবচরের কাঁঠালাবাড়ির মাগুরখ- এলাকায় পদ্মা নদী, সদরের শ্রীনদীর কুমার নদ ও পাঁচখোলার আড়িয়াল খাঁ থেকে বালু উত্তোলন করা হয় সবচেয়ে বেশি।
এসব এলাকায় নদনদী ভাঙনও বেশি। রাজৈরের হরিদাসদী-মহেন্দ্রদী ইউনিয়নের কালীবাড়ি এলাকার কহিনুর বেগম বলেন, রাত ৮টার পর শুরু হয় বালু উত্তোলন। এলাকার লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বালু ব্যবসায়ীদের পাহারা দেয়। কিছু বলতে গেলেই হামলা চালায়। আমরা এখন অসহায় হয়ে পড়েছি। কালীবাড়ি এলাকার যুবক নুর নবী বলেন, নদের দুইপাড়ের লোকজন বালু উত্তোলনে জড়িত। সবাই টাকা খেয়ে চুপ থাকে। নান্নু মাতুব্বর নামে আরেক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, বালু উত্তোলনের ফলে আমার কৃষিজমি নদে বিলীন হয়ে গেছে। এখন আমি অসহায়, নিঃস্ব হয়ে পড়েছি।
কালকিনির ফাঁসিয়াতলার বাসিন্দারা জানান, রাত যত গভীর হয় ততই বাড়ে আড়িয়াল খাঁ নদের ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন। ভোর হবার আগেই ড্রেজার মেশিন ও বাল্কহেড নিয়ে সরে পড়েন ব্যবসায়ীরা। অথচ প্রশাসন দিনেরবেলায় অভিযান চালায়, সেক্ষেত্রে তেমন কোনো কার্যক্রম দেখতে পায় না। স্থায়ীভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করতে হলে এর হোতাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনতে হবে।
মাদারীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নাজমুল ইসলাম বলেন, বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। প্রতিদিনই জেলা ও উপজেলা প্রশাসন থেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এই অভিযান পরিচালনা করছেন। কোথাও জেল, আবার কোথাও অনেককেই আর্থিক জরিমানা করা হচ্ছে। এই অসাধু ব্যবসায়ীদের পর্যায়ক্রমে সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।