প্রায় ভেঙে পড়েছে রাজধানীর ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থা
প্রায় ভেঙে পড়েছে রাজধানীর ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থা। গত চারদিন যাবত বিভিন্ন সড়কে ট্রাফিক পুলিশের অনুপস্থিতিতে পুরোপুরি বিশৃঙ্খল হয়ে পড়েছে গণপরিবহন চলাচল। সড়কে যানবাহন চলাচল কম থাকলেও এলোমেলোভাবে চলাচলের কারণে অনেক স্থানে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এতে দীর্ঘ সময় যানজটে আটকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বলে যাত্রীরা জানান।
তবে অনেক সড়কের মোড়ে মোড়ে শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা নিজ উদ্যোগে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের সর্বাত্মক চেষ্টা করছে। বিশৃঙ্খল ট্রাফিক ব্যবস্থা সড়ক নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের হুমকি। তাই দ্রুত ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন করে তা ঠিক করার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
এ বিষয়ে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মো. সাইদুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, ‘ট্রাফিক পুলিশ ছাড়া একটি রাজধানী চলতে পারে না। গত চারদিন যাবত ঢাকা কোনো ট্রাফিক ব্যবস্থা নেই। এটা সড়ক নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের হুমকি।
তবে অনেক সড়কে শিক্ষার্থীরা নিজ উদ্যোগে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। এটা ভালো উদ্যোগ। তবে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রশিক্ষণের দরকার হয়। এটা শিক্ষার্থীদের নেই।’ তাই ঢাকায় দ্রুত ট্রাফিক ব্যবস্থা ঠিক করার পরামর্শ দেন তিনি।
সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, বুুধবার সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে গণপরিবহনের চাপ ছিল বেশি। তবে যাত্রীবাহী বাস-মিনিবাস চলাচল কিছুটা কম থাকলেও ব্যক্তিগত গাড়ি, সিএনজি অটোরিক্সা, মোটরসাইকেল, ব্যাটারি চালিত রিক্সা, রিক্স-ভ্যানসহ সব ধরনের গণপরিবহন চলাচল করতে দেখা গেছে। কিন্তু বিভিন্ন সড়কে ট্রাফিক পুলিশ না থাকায় এলোমেলোভাবে চলতে দেখা গেছে যানবাহনকে। তাই কিছুক্ষণ পর পর সড়কে দীর্ঘ যানজট তৈরি হতে দেখা গেছে।
রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকায় যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা। ঢাকার প্রবেশ মুখ যাত্রাবাড়ী এলাকা ব্যবহার করে প্রতিদিন ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-বরিশাল যানবাহন প্রবেশ ও বের হয়। কিন্তু গত চারদিন যাবত ট্রাফিক ব্যবস্থা ঠিক না থাকায় এলোমেলো ভাবে গাড়ি চলাচল করতে দেখা গেছে।
এতে তীব্র যানজট তৈরি হচ্ছে যাত্রাবাড়ী থেকে ডেমরা সড়ক, যাত্রাবাড়ী-শনিরআখড়া সড়ক, যাত্রাবাড়ী-পোস্তগোলা সড়ক ও যাত্রাবাড়ী-সায়েদাবাদ সড়কে। বুধবার এই সড়কগুলোতে আরও ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হয়। গাড়ির চাপ বেশি থাকায় দীর্ঘ সময় যানজটে আটকে থাকতে হচ্ছে বলে যাত্রীরা জানান। তবে বুধবার দুপুরের দিকে শিক্ষার্থীরা নিজ উদ্যোগে সড়কে যানজট নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। গাড়ির চাপ বেশি থাকায় হিমশিম খেতে হয় তাদের।
যাত্রাবাড়ী এলাকায় জুবায়ের নামের এক শিক্ষার্থী জনকণ্ঠকে বলেন, ‘ঢাকার কোনো সড়কে ট্রাফিক পুলিশ নেই। গত মঙ্গলবার থেকে আমরা নিজ উদ্যোগে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজ করছি। বুধবার থেকে সড়কে গাড়ির চাপ অনেক বেড়ে গেছে। প্রতিটি রাস্তায় গাড়ি ঠিক সময়মতো ছাড়তে হয়। এতে দীর্ঘ সময় যানজট তৈরি হচ্ছে। আমরা আসলে তেমন প্রশিক্ষিত নই।
তবুও চেষ্টা করছি। সাধারণ মানুষ একটু সহযোগিতা করলে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করা আরও সহজ হতো। কিন্তু দেখা যায় পথচারীরা ইচ্ছেমতো রাস্তা পারাপার হচ্ছে। মোটরসাইকেল ও রিক্সা উল্টোপথে প্রবেশ করছে। বাসগুলো যাত্রীর জন্য রাস্তা বন্ধ করে দাঁড়িয়ে রয়েছে।’ এর ফলে আরও যানজট সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানান তিনি।
রাজধানীর অন্যান্য এলাকায় একই অবস্থা। রাজধানীর বাংলামোটর এলাকায় জসিম নামের এক যাত্রী জনকণ্ঠকে বলেন, ‘যানজটের কারণে দেড়ঘণ্টা সময় লাগল যাত্রাবাড়ী থেকে বাংলামোটর আসতে। এর মধ্যে কয়েক স্থানে শিক্ষার্থীদের ট্রাফিক সিগন্যালে আটকে ছিলাম। এর মধ্যে সায়েদাবাদ, দয়াগঞ্জ, পল্টন মোড়, মৎস্যভবন, শাহবাগ ও বাংলামোটরে দীর্ঘ যানজট ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।’ এ ছাড়া আজকে আবার নয়া পল্টনে বিএনপি’র সমাবেশ। তাই কিছু সড়ক ছিল বন্ধ। এতে যানজট আরও বেড়ে গেছে বলে জানান তিনি।
এভাবে রাজধানীর বেশিরভাগ সড়কে পুলিশের অনুপস্থিতিতে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের। শিক্ষার্থীরা সড়কের সিগন্যালে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন। কেউ ট্রাফিক সিগন্যাল অমান্য করলেই তারা চালকদের আটকে দিতে দেখা গেছে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা সাধারণ মানুষকে রাস্তা পারাপারে সহায়তা করতেও দেখা যায়। শিক্ষার্থীদের এই চেষ্টাকে সাধুবাদ জানান সাধারণ মানুষ।
হেলমেটবিহীন চালকদের জরিমানা ॥ এদিকে শিক্ষার্থীরা ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি হেলমেটবিহীন মোটরসাইকেল আরোহীদের আটকে রাখা ও কোনো কোনো স্থানে জরিমানা আদায় করতে দেখা গেছে। রাজধানী জয়কালী মন্দির এলাকায় দেখা গেছে, হেলমেটবিহীন মোটরসাইকেল আরোহীদের আটকে জরিমানা আদায় করছে শিক্ষার্থীরা। তা আবার কোনো সংস্থা বা ফাউন্ডেশনের দান বক্সে রাখতে দেখা গেছে।
বিজয় সরণি ও কাজলা এলাকায় হেলমেট ছাড়া মোটরসাইকেল আরোহীদের ৫-২০ মিনিট আটকে রাখা হয়। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি রাস্তা পরিষ্কার ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজ করছেন ফায়ার সার্ভিস, বিভিন্ন সংগঠনের কর্মী ও আনসার সদস্যদের।
রাজারবাগ এলাকা রফিকুল ইসলাম নামে এক যুবক জানান, সড়কে পুলিশ ও ট্রাফিক পুলিশ নেই। শিক্ষার্থীরা সড়কে গাড়ির নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব নিয়েছেন। যা আমাদের জন্য খুব উপকার হয়েছে। এতে গাড়ি চলাচল অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে। তারা আসলে তাদের মতো করে চেষ্টা করছে। এটা কিন্তু প্রশংসনীয়।
রাজারবাগ এলাকায় ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করা এক শিক্ষার্থী জানান, দেশকে এখন গোছানোর পালা। যেহেতু এখনো কোনো সরকার গঠন হয়নি, এই মুহূর্তে পুলিশ বা ট্রাফিক পুলিশও নেই। তাই আমরা রাস্তায় যাতে যান চলাচলে সমস্যা না হয় তাই আমরা শিক্ষার্থীরা ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করছি। আমাদের আশপাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলো নিজেদের মধ্যে সমন্বয় করে দায়িত্ব পালন করছি। আমরা সবাইকে অনুরোধ করব সবাই যেন ট্রাফিক আইন মেনে চলে।