ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৮ জুন ২০২৪, ৫ আষাঢ় ১৪৩১

চট্টগ্রামে ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের পিলারে ‘ফাটল’, জনমনে আতঙ্ক-প্রশ্ন!

প্রকাশিত: ১৫:৪৪, ২৭ মে ২০২৪

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের পিলারে ‘ফাটল’, জনমনে আতঙ্ক-প্রশ্ন!

চট্টগ্রামে ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের পিলারে ফাটল

চার হাজার ২৯৯ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম নগরের লালখানবাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। 

দেশের দ্বিতীয় এ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন হলেও কাজ পুরোপুরি শেষ না হওয়ায় গাড়ি চলাচল শুরু হয়নি এখনো। কিন্তু এরমধ্যেই এক্সপ্রেসওয়ের র‍্যাম্পের চারটি পিলারে দেখা দিয়েছে ‘ফাটল’। কাজ শেষ না হওয়ার আগেই পিলারে ফাটল দেখা দেওয়ায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজের মান নিয়ে উঠছে নানা প্রশ্ন।

যদিও প্রকল্প-সংশ্লিষ্টদের দাবি, এগুলো কোনো গভীর ফাটল নয়, হেয়ারলাইন ক্র্যাক। এর ফলে অবকাঠামোর ওপর পড়বে না কোনো প্রভাব।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন- নকশার ত্রুটি ও স্প্যান বা পিলার দেবে যাওয়ার কারণে সৃষ্টি হতে পারে এমন ফাটল। এটি কতটা গভীর, কিংবা ঝুঁকি রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।

গত বছরের ১৪ নভেম্বর এক্সপ্রেসওয়েটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের ছয় মাস পেরোলেও এটি এখনো গাড়ি চলাচলের উপযোগী করতে পারেনি সিডিএ। এক্সপ্রেসওয়ের মূল অবকাঠামোতে পিলার সংখ্যা ৩৯৪টি।

পতেঙ্গা থেকে আসা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের একটি অংশ ওয়াসা মোড়ে আখতারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভারের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এর আগে লালখান বাজার এলাকায় সরকারি অফিসার্স কলোনির সামনে নেমেছে এক্সপ্রেসওয়ের একটি র‍্যাম্প। সেই র‍্যাম্পের অন্তত চারটি পিলার ও স্প্যানে দেখা দিয়েছে ফাটল। পিলার নম্বরগুলো হলো– পিআর-১, ২, ৩ ও আপওয়ার্ড পিয়ার বা ইউপিআর-২১।

প্রকৌশলীদের মতে, বেশকিছু কারণে হতে পারে এ ধরনের ফাটল। যার মধ্যে রয়েছে, কাঠামোগত ত্রুটি, ব্যাকগ্রাউন্ডের প্রস্তুতিতে ভুল, তাপমাত্রার পরিবর্তনে ব্যাকগ্রাউন্ডের সরণ, সারফেসের বিভিন্ন স্তরের বিচ্ছিন্নতা, প্লাস্টারের প্রসারণ ও সংকোচন, প্রয়োজনের অতিরিক্ত সিমেন্ট ব্যবহার, নির্মাণ শ্রমিকদের ত্রুটিপূর্ণ কাজ ইত্যাদি।

জানতে চাইলে প্রকল্পটির পরিচালক ও সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান জানান, এটি গভীর কোনো ফাটল নয়, হেয়ারলাইন ক্র্যাক। নির্মাণের সময় কংক্রিটের আধিক্যসহ নানা কারণে নির্মাণাধীন অবকাঠামোতে এ ধরনের ফাটল দেখা দেয়। 

তিনি বলেন, এটি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সক্ষমতায় কোনো প্রভাব ফেলবে না। ঠিকাদারের কাছ থেকে কাজ বুঝে নেয়ার সময় কোথাও কোনো ত্রুটি আছে কিনা তা খতিয়ে দেখে আমাদের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। ফলে নির্মাণকাজের মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠার সুযোগ নেই।

প্রকল্পটি যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড ও চীনের প্রতিষ্ঠান র‌্যাঙ্কন।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের প্রকল্প ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মনির হোসাইন বলেন, নির্মাণকাজের সময় নানা কারণে উপরিতলে এ ধরনের ফাটল হয়। তবে এগুলো গভীর কিংবা অবকাঠামোগত কোনো ফাটল নয়। কাজ শেষ হওয়ার আগে কোথায় কোথায় এমন ফাটল আছে, তা খুঁজে বের করে ঠিক করা হয়। এটি নির্মাণকাজেরই অংশ।

প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা এটিকে ‘হেয়ারলাইন ক্র্যাক’ বললেও এটির গভীরতা কিংবা ঝুঁকি রয়ে যাচ্ছে কিনা তা যাচাই করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

অবকাঠামো বিশেষজ্ঞ এবং চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. জিএম সাদিকুল ইসলাম বলেন, নির্মাণের সময় কোনো ত্রুটির কারণে ফাটল হয়ে থাকতে পারে। এটি নির্মাণাধীন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের জন্য ঝুঁকি তৈরি করবে কিনা, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা প্রয়োজন। এজন্য বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি উচ্চতর কমিটি গঠন করতে হবে। এরপর ফাটলের গভীরতা কতটুকু এবং কীভাবে তা মেরামত করা যাবে সবকিছু জানা যাবে।

বারাত

×