ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

হালদায় মা মাছ রক্ষায় নজরদারি বাড়াল প্রশাসন

নিজস্ব সংবাদদাতা, ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম

প্রকাশিত: ১০:৫০, ১৯ মে ২০২৪

হালদায় মা মাছ রক্ষায় নজরদারি বাড়াল প্রশাসন

হালদা নদী।

দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র ও বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হালদা নদীর মা মাছ, গাঙ্গেয় ডলফিন ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় নজরদারি বাড়াতে নতুন ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে অকেজো হয়ে পড়া ক্লোজ সার্কিট বা সিসি ক্যামেরাগুলোর মেরামত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে নৌপুলিশ কর্তৃপক্ষ।

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আটটি উন্নতমানের সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে নদীর গুরুত্বপূর্ণ প্রজনন এলাকা (হাটহাজারির মদুনাঘাট থেকে আমতুয়া পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার) নজরদারি করে আসছিল নৌপুলিশ। বছর খানেক আগে দুটি ক্যামেরা অকেজো হয়ে পড়ে। সম্প্রতি, প্রাকৃতিক দুর্যোগে আরও চারটি নষ্ট হয়। 

মঙ্গলবার নষ্ট হওয়া ক্যামেরার খুঁটিতে দুটি নতুন ক্যামেরা বসানোসহ চারটি ক্যামেরা মেরামত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ নৌ পুলিশের চট্টগ্রাম অঞ্চলের পুলিশ সুপার আ ফ ম নিজাম উদ্দিন।

পুলিশ সুপার জানান, হালদায় স্থাপন করা সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে পুলিশ ফাঁড়ি এবং নৌপুলিশের ঢাকায় অবস্থিত উপমহাপরিদর্শকের কার্যালয় থেকে হালদার নজরদারি করা হয়। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কারেন্টজাল পেতে মা মাছ শিকার, ইঞ্জিনচালিত নৌযান চলাচল নিয়ন্ত্রণের ফলে হালদা নদীর মা মাছের সুরক্ষার পাশাপাশি গাঙ্গেয় ডলফিনের মৃত্যুর হার কমেছে। এমন কী চলিত মৌসুমে একটি ডলফিনের ক্ষতি হয়নি।

হালদা বিশেষজ্ঞ শফিকুল ইসলাম বলেন, ২০১৮ সালে হালদা থেকে বালু উত্তোলন ও বালুবাহী ড্রেজার এবং যান্ত্রিক নৌ চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। একই সঙ্গে নদীতে জাল পাতার ওপরও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। সিসি ক্যামেরা বাড়ানো গেলে হালদা নদীতে অসাধুদের অপতৎপরতা কমে যাবে। 

হালদাপাড়ের মানুষকে সচেতনতা, সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও প্রশাসনের নজরদারির কারণে গেল বছর গাঙ্গেয় ডলফিন ও মা মাছের মৃত্যু হয়নি। নিরাপদ হালদায় চলতি মৌসুমে নমুনা ডিমের চেয়ে বেশি পরিমাণে ডিম ছেড়েছে মা মাছ।

এদিকে,বজ্রসহ বৃষ্টি হওয়ায় প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননকেন্দ্র হালদা নদীতে ৭ মে  ডিম ছেড়েছে কার্পজাতীয় (রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালবাউশ) মা মাছ। বিশেষজ্ঞরা একে নমুনা ডিম বললেও সংগ্রহকারীরা বলছেন, ডিমের পরিমাণ বেশি। 

ওইদিন ভাটার সময় সকাল ছয়টার পর থেকে নমুনা ডিম দেখা যায় নদীর পাঁচ থেকে সাতটি স্থানে। এছাড়া বেলা ১১টার পর জোয়ারের সময় নদীতে ৮ থেকে ১০টি স্থানে মা মাছগুলো ডিম ছাড়া শুরু করে।

হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মনজুরুল কিবরিয়া দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেন, প্রজননের ঠিক একদিন আগে ফটিকছড়ির ভুজপুর রাবার ড্যাম থেকে জমাকৃত বিষাক্ত পানি হালদায় ছেড়ে দেওয়ায়  মা মাছের প্রজননে খারাপ প্রভাব ফেলেছে। ফলে মা মাছ নির্দিষ্ট সময়ে ডিম ছাড়েনি। 

তিনি আরো জানান, প্রজনের আগে ওই রাবার ড্যামের বিষাক্ত পানি ছাড়লে প্রজননে প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ পানিতে প্রচুর পরিমাণি কেমিক্যাল সার ও কীট নাশক ঔষধ থাকায় পানি বিষাক্ত হয়ে পড়ে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

 এসআর

×