ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

মসিক নির্বাচন

প্রচারের শেষদিনে মিছিল শোডাউন, শক্তির মহড়া

স্টাফ রিপোর্টার, ময়মনসিংহ

প্রকাশিত: ০০:০৯, ৮ মার্চ ২০২৪

প্রচারের শেষদিনে মিছিল শোডাউন, শক্তির মহড়া

ময়মনসিংহ সিটি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী সাদেকুল হক খান মিল্কী ও ইকরামুল হক টিটুর ভোট প্রার্থনা

নির্বাচনী প্রচারের শেষ মুহূর্তে চলছে টাকার খেলা। ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন-মসিক নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রভাবশালী প্রার্থীদের অনেকেই টাকা ছড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ভোটের আগে মাঠ দখল ও ভোট নিশ্চিত করতেই কোনো কোনো প্রার্থী শেষমেশ এই চেষ্টা করছেন। যদিও এখন পর্যন্ত হাতেনাতে টাকা ছড়ানোর প্রমাণ দিতে পারেননি কেউ। 
একাধিক ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীর অভিযোগ, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর অনেকেই শেষ মুহূর্তে টাকা ছড়িয়ে ভোট কেনার চেষ্টা করছেন। একেবারেই খুব কাছের ও নিজস্ব লোক দিয়ে বিভিন্ন এলাকায় এজেন্টদের মাধ্যমে এই টাকা ছড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দান, অনুদান ও ব্যক্তিগতভাবে সাহায্য সহায়তার আড়ালে এই টাকা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। অত্যন্ত গোপনে ও কৌশলে সতর্কতার সঙ্গে ঘরে ঘরে, বাড়ি বাড়ি গিয়ে টাকা ছড়ানো হচ্ছে।

কোনো কোনো প্রার্থী এক্ষেত্রে নারীকর্মী সমর্থকদের ব্যবহার করছেন। একশ্রেণির নারীকর্মী কখনো একা ও কখনো দলবেঁধে বাড়ি বাড়ি ও পরিবারে গিয়ে নানা ছলছুঁতায় ভোটারদের কাছে টাকা বিলিবণ্টন করছেন। প্রতিপক্ষের অনেক প্রার্থী টাকা ছড়ানো প্রতিরোধে রাত জেগে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে এলাকায় এলাকায় পাহারা বসিয়েছেন। 

ময়মনসিংহ নগরীর ১৪ ওয়ার্ডের রেডিও প্রতীকের কাউন্সিলর প্রার্থী হারুন-অর-রশিদ হারুন অভিযোগ করে জানান, তার ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বী কাউন্সিলর প্রার্থী জয়নাল আবেদীনসহ একাধিক কাউন্সিলর প্রার্থী শেষ মুহূর্তে অত্যন্ত কৌশলে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট কেনার জন্য টাকা ছড়াচ্ছেন। জয়নাল আবেদীনের পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা দু’একজন করে বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে এই টাকা বিলিবণ্টন করছেন বলেও জানান তিনি।

নিশ্চিত পরাজয় জেনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা ভোটারদের মধ্যে এভাবে টাকা ছড়িয়ে ভোট নিশ্চিত করতে চাইছেন। ভোটের আগ মুহূর্তে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের এভাবে টাকা ছড়ানোর বিষয়টি স্থানীয় নির্বাচন কমিশনকে তিনি জানিয়েছেন বলে দাবি করেন। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের টাকাসহ হাতেনাতে ধরতে নিজ এলাকায় বিভিন্ন গ্রুপের কর্মীদের পাহারায় বসিয়েছেন। এ ব্যাপারে কাউন্সিলর প্রার্থী জয়নাল আবেদীনের বক্তব্য জানতে একাধিকবার মোবাইল ফোনে কল করলেও তিনি তা রিসিভ করেননি। 
সম্প্রসারিত ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের ঝুড়ি প্রতীকের কাউন্সিলর প্রার্থী আবু বক্কর সিদ্দিক সাগর অভিযোগ করে জানান, তার ওয়ার্ডে রেডিও প্রতীকের কাউন্সিলর প্রার্থী এমদাদুল হক ম-লের পরিবারের সদস্য, স্বজন ও বিশ্বস্ত কর্মীরা রাতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে টাকা ছড়িয়ে ভোট কেনার চেষ্টা করছেন। নির্বাচনী শেষ মিছিলে যোগদানকারী ভোটারদের তিনি গোপনে টাকা বিলিবণ্টন করেছেন বলেও দাবি করেছেন কাউন্সিলর প্রার্থী সাগর।

তবে এই অভিযোগ ডাহা মিথ্যা দাবি করে কাউন্সিলর প্রার্থী এমদাদুল হক ম-ল জানান- জয়ের কোনো সম্ভাবনা না থাকায় প্রতিদ্বন্দ্বী কাউন্সিলর প্রার্থী আবু বক্কর সিদ্দিক সাগর তার বিরুদ্ধে এই ধরনের মিথ্যাচারে লিপ্ত হয়েছেন। 
নগরীর ১২ নম্বর ওয়ার্ডের ঠেলাগাড়ি প্রতীকের কাউন্সিলর প্রার্থী শরাফ উদ্দিন অভিযোগ করে জানান, তার ওয়ার্ডের একজন ধনকুবের কাউন্সিলর প্রার্থী টাকা ছড়িয়ে ভোটের আগে মাঠ দখলে রাখার চেষ্টা করছেন। অভিযোগ ওই কাউন্সিলর প্রার্থী কখনো নিজে, আবার কখনো তার পুত্র ভোট চাওয়ার নামে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ও বস্তি এলাকায় টাকা ছড়িয়ে ভোট কেনার চেষ্টা করছেন।

তিনি জানান সরকারের স্থানীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো চাইলে টাকাসহ হাতেনাতে ধনকুবের এই কাউন্সিলর প্রার্থীকে আটক করতে পারবে। শেষ মুহূর্তে ভোটের আগে টাকা ছড়ানোর একই ধরনের অভিযোগ রয়েছে নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে। হাতে কোনো প্রমাণ না থাকায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মেয়র প্রার্থী জানান, প্রতিপক্ষের একজন প্রভাবশালী মেয়র প্রার্থী কর্মীদের মাধ্যমে বিভিন্ন ওয়ার্ডে নির্বিচারে টাকা ছড়াচ্ছেন।

প্রচারের শেষ মুহূর্তে এভাবে টাকার খেলা শুরু হওয়ায় ভোটের ফলে প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই মেয়র প্রার্থী। হাতি প্রতীকের মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাদেকুল হক খান মিল্কি টজু আশঙ্কা প্রকাশ করে জানান, ভোটের আগ মুহূর্তে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের টাকার খেলা নির্বাচনে নিশ্চিত প্রভাব ফেলবে। স্থানীয় সচেতন মহল সূত্রগুলোর দাবি, ভোটের আগ মুহূর্তে স্থানীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নজরদারি বাড়ালে হাতেনাতে টাকাসহ আটক হতে পারেন অনেকে।

সূত্রের দাবি, শেষ মুহূর্তে সন্দেহভাজন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও তার ঘনিষ্ঠজনদের তল্লাশি করলেও মিলতে পারে টাকা বিলিবণ্টনের প্রমাণ। দোরগোড়ার নির্বাচনকে সামনে রেখে অর্থলোভী একশ্রেণির ভোটার ঈদের আনন্দে প্রার্থীদের ছড়ানো টাকা  লুফে নিচ্ছে। বিশেষ করে হতদরিদ্র ও নি¤œ আয়ের একশ্রেণির নারীকর্মী প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে নেমে বেশ অর্থ কামিয়ে নিয়েছেন। এসব নারীকর্মী দলবেঁধে, কখনো একাকী একাধিক প্রার্থীর  পক্ষে প্রচারপত্র বিলিবণ্টন করেছেন।

প্রচারের শেষদিন বৃহস্পতিবার অনেক প্রার্থী মিছিল ও শোডাউনের মাধ্যমে তাদের প্রচার কাজ শেষ করেছেন। মূলত মিছিল-শোডাউনের মাধ্যমে শেষদিন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা তাদের শক্তি ও সমর্থকদের পাল্লা কতটা ভারি তা জানান দিয়েছেন।
নগরীর সেহরা মুন্সিবাড়ি এলাকায় কাউন্সিলর প্রার্থী আব্দুল মান্নান ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নগদ টাকা বিলি করছেন, এমন খবরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে এলাকায় উত্তেজনা দেখা দেয়। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও আপলোড করা হয়। এতে দেখা যায়, সেহরা মুন্সিবাড়ি এলাকার ঝাড়ু বিক্রেতা এনামুল হক ১০০০ টাকার দুটি নোট দেখিয়ে বলছেন, এই টাকা কাউন্সিলর প্রার্থী আব্দুল মান্নান তাকে দিয়েছেন।

আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, একই এলাকার খলিফা পট্টির আহেলা ৫০০ টাকার দুটি নোট দেখে বলছেন, কাউন্সিলর প্রার্থী আব্দুল মান্নান তাকে দিয়ে গেছেন। কাছাকাছি সময়ের এই দুটি ঘটনার কিছু আগে কাউন্সিলর প্রার্থী আব্দুল মান্নানকে সেহরা মুন্সিবাড়ি ও খলিফা পট্টিতে দেখা গেছে। কাউন্সিলর প্রার্থী আব্দুল মান্নান ওই এলাকায় গণসংযোগের জন্য যাওয়ার কথা বললেও এনামুল হক ও আহেলা কেন টাকার বিষয়ে তার নাম বলছেন, তা তার জানা নেই বলে জানান।
আগামীকাল ৯ মার্চ ইভিএমে অনুষ্ঠিতব্য ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের চার ও জাতীয় পার্টির একজনসহ মোট পাঁচ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

×