ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘ফাগুনের নবীন আনন্দে’

জনকণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২১:০৯, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

‘ফাগুনের নবীন আনন্দে’

পহেলা ফাল্গুন উপলক্ষে বগুড়ায় আমরা ক’জন শিল্পী গোষ্ঠীর বসন্ত উৎসব

গাছের কচি পাতায় ফাগুনের ছোঁয়া। দখিনা বাতাসে ভেসে আসা কোকিলের কুহুকুহু কলতানে ঘর ছেড়েছে তারুণ্য। হলুদে হলুদে ছেয়ে গেছে প্রকৃতি আর নারীতে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজনে ঋতুরাজকে আলিঙ্গনের মধ্য দিয়ে পালন করা হয় বসন্ত উৎসব। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতাদের পাঠানো-
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

ঊষার নির্মল স্নিগ্ধতায় বসন্ত এসেছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেজেছে ক্যাম্পাস রঙিন সাজে। যোগ হলো ভিন্ন রকম আমেজ। হাস্যোজ্জ্বল ক্ষণ অবারিত। একে একে সম্পন্ন হলো কর্মসূচির। দিনটি পার হল স্বতন্ত্রভাবেই। এভাবেই বুধবার দিনব্যাপী বিশ^বিদ্যালয় দিবস, বসন্ত দিবস, সংগঠনের যুগপূর্তি, ভালোবাসা দিবস আর সরস্বতী পূজার দিনটি কাটল শাবির। এদিন ৩৪ বসন্তে পদার্পণ করেছে দেশের প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এই বিশ্ববিদ্যালয়। এ উপলক্ষে সকালে পতাকা উত্তোলন, বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, বেলুন উড়ানো ও কেক কাটা হয়।

এ সময় সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ব্রিটিশ আমল থেকে সিলেট অঞ্চলে বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য যারা সংগ্রাম করেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. কবির হোসেন বলেন, ‘৩৪ বছরে অনেক সংকটই আমরা পাড়ি দিয়েছি। বর্তমান সংকটগুলো ঘুচিয়ে সামনের দিনে বিশ^বিদ্যালয় আরও সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাবে।’ পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘শেষ বর্ষের এমন আয়োজন আবেগ আপ্লুত করেছে। গত কয়েক বছর উৎসবে ভাটা পড়েছিল। তবে এবার পুরোটাই ভিন্ন চিত্র।
 
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়
শাহজাদপুরে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামে প্রতিষ্ঠিত রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ণাঢ্যভাবে উদযাপিত হয়েছে বসন্ত বরণ উৎসব।
ফালগুনের প্রথম দিনের সকালে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আনন্দমুখর পরিবেশে একাডেমিক ভবন-১ থেকে শোভাযাত্রাসহ একাডেমিক ভবন-৩ এ পৌঁছে। বসন্ত বরণ উৎসবের উদ্বোধন করেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. শাহ্ আজম। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ট্রেজারার প্রফেসর ড. ফিরোজ আহমেদ, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মো. ফখরুল ইসলামসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যান ও শিক্ষকবৃন্দ।

আলোচনা সভা শেষে অনুষ্ঠিত হয় বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মনোমুগ্ধকর পরিবেশনায় আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে ওঠে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় একাডেমিক ভবন প্রাঙ্গণ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তানভীর আহমেদ।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
‘বাতাসে বহিছে প্রেম, নয়নে লাগিল নেশা, কারা যে ডাকিল পিছে, বসন্ত এসে গেছে’। শিল্পী অনুপম রায়ের এই গানের আবহে ঋতুরাজ বসন্তকে বরণ করেছে রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয় (রাবি)। বসন্ত উৎসবের পাশাপাশি পহেলা ফাল্গুনে পালিত হয়েছে সরস্বতী পূজা। 
বুধবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের আয়োজনে শুরু হয় ‘বসন্ত উৎসব-১৪৩০’। এদিন সকাল ১০টায় উৎসবের উদ্বোধনের পর এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে। এরপর চারুকলা প্রাঙ্গণে কাঁথা পোড়ানো, পিঠা বিলি ও রং খেলা আয়োজন করা হয়। পরে চারুকলা মুক্তমঞ্চে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এদিকে বিশ^ ভালোবাসা দিবসে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ ছিল প্রেম বঞ্চিত সংঘের বিক্ষোভ মিছিল।

সুষ্ঠু প্রেমের দাবিতে প্রায় দেড় শতাধিক প্রেম বঞ্চিত শিক্ষার্থী এদিন বেলা ১১টার দিকে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ ও গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন করে। দিবসটি উপলক্ষে প্রেম বঞ্চিত সিংগেলরা ক্যাম্পাসে অসহায়দের মাঝে খাবার বিতরণ ও বৃক্ষরোপণ করেন তারা।

বরিশাল
বুধবার পহেলা ফাল্গুন বসন্ত উৎসবে বরিশাল সরকারি মহিলা কলেজ মাঠে বসন্ত উৎসবে আয়োজন করা হয় পিঠা উৎসবের। বিভিন্ন ধরনের পিঠার স্টলগুলোতে শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকদের বিভিন্ন নামের পিঠা খাওয়াসহ বাসা বাড়িতে কিনে নেওয়ার জন্য উপচে পড়া ভিড় ছিল। দিনব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার সঙ্গে বাসন্তী উৎসবকে বর্ণিল করতে নানা রঙের পোশাক ছাড়াও ফুল দিয়ে সেজে অনুষ্ঠানে আসে মহিলা কলেজের ছাত্রীরা।

অনুষ্ঠানে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। অপরদিকে বুধবার বিকেলে নগরীর জগদ্বীশ সারস্বত স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে বসন্ত বরণ উৎসবের আয়োজন করে সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘উদীচী এবং বরিশাল নাটক’। বসন্ত বরণ উপলক্ষে নগরীর ফুলের দোকানগুলোতে উপচে পড়া ভিড় ছিল। বাঙালির প্রাণের উৎসব বসন্ত বরণ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবসকে নির্বিঘœ এবং শান্তিপূর্ণ করতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

রাজশাহী
‘মধুর বসন্ত এসেছে মধুর মিলন ঘটাতে। মধুর মলয়-সমীরে মধুর মিলন রটাতে। ঋতুরাজকে এমন আলিঙ্গনের আহ্বান জানিয়ে রাজশাহীতে বরণ করা হয়েছে বসন্তকে। দুয়ারে বুধবার আগুন রাঙা বসন্ত দেখে সবার মন যেন ছুটে গেছে সবুজ অরণ্যে। গাছের কচি পাতায় ফাগুনের ছোঁয়া। দক্ষিণা বাতাসে দূর থেকে ভেসে আসা কোকিলের কুহু কুহু কলতানে আজ তাই ঘর ছেড়েছে তারুণ্য। তাইতো মধুময় যৌবনের উদ্যমতা বয়ে আনার বসন্তে আজ মেতে উঠেছে রাজশাহী।

বাঁধ ভাঙা আনন্দ, উচ্ছ্বাস ও উদ্বেলতায় নানা আয়োজনে সবাই ঋতুরাজকে সাড়ম্বরে বরণ করেছে দিনভর নানা আয়োজনে। বুধবার পয়লা ফাল্গুন সকাল থেকেই বসন্তবরণ উৎসবে মুখোরিত হয়ে উঠেছে এই নগর। এদিকে ছিল ভালোবাসা দিবস এবং সরস্বতী পূজাও।

মাগুরা
বুধবার  মাগুরায় বসন্ত উৎসব ও  বিশ্ব ভালোবাসা দিবস পালিত হয়েছে। বসন্ত ও  বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে শহরের ফুলের দোকানে উপচে পড়া ভিড় পরিলক্ষিত হয়েছে। ফুলের দোকানগুলোতে ব্যাপক ফুলের আমদানি লক্ষ্য করা যায়। নানা ধরনের বাহারি ও ফুলের তোড়া ক্রয় করতে নানা বয়সের মানুষ দোকানে ভিড় করেন। জারভেরা, গ্লøাডিউলাস, লাল গোলাপ, গাদাসহ নানা ধরনের ফুল এসেছে দোকানে। তবে এ বছর লাল গোলাপ ও মাথার ফুলের ব্র্যান্ডের চাহিদা সব থেকে বেশি।

ঝিনাইদহ
পহেলা ফাল্গুন উপলক্ষে ঝিনাইদহে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল জমজমাট পিঠা উৎসব। বাহারি নানা প্রকারের পিঠার প্রদর্শন করা হয় স্টলগুলোতে। বুধবার সকালে শহরের চারুগৃহ শিশুস্বর্গ স্কুলে এ পিঠা মেলার উদ্বোধন করেন সদর উপজেলা চেয়ারম্যান রাশিদুর রহমান রাসেল। ভাপা পুলি, পাটি সাপটা, পাতা নকশিসহ বাহারি নামের পিঠার স্টল দেওয়া হয়। আর সেখানে বাসন্তিসহ নানান সাজে সেজে শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষ অংশ নেয়। সৃষ্টি হয় উৎসবের আমেজ। সঙ্গে সেখানে ছিল বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন।

হালুয়াঘাট
ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে নানা আয়োজনে বসন্তবরণ ও পিঠা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বুধবার সকাল থেকে পৌরশহরের সানফ্লাওয়ার স্কুল মাঠে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আর পিঠা উৎসবের মধ্য দিয়ে বসন্তবরণ উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।

এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবিদুর রহমানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন ময়মনসিংহ-১ আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদুল হক সায়েম। বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মিসেস ঝর্ণা ঘোষ, ভাইস চেয়ারম্যান শাখাওয়াত হোসেন ফকিরসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষিকাবৃন্দ।

×