ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১

বহিষ্কার করেও মাঠ থেকে সরানো যাচ্ছে না

বগুড়ায় বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন বিএনপি কর্মীরা

মাহমুদুল আলম নয়ন, বগুড়া অফিস

প্রকাশিত: ০০:২১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩

বগুড়ায় বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন বিএনপি কর্মীরা

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট বর্জন ও অসহযোগ আন্দোলনের পক্ষে বিএনপির লিফলেট বিতরণ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে বগুড়ার নির্বাচনী আসনগুলোর ভোটের ময়দান, নির্বাচনী আমেজে উৎসবমুখর হয়ে উঠছে। শহর থেকে গ্রামের মেঠোপথ, চায়ের স্টল থেকে বাড়ির উঠান সবখানেই এখন নির্বাচনী উত্তাপ। নির্বাচনী ডামাডোল থেকে কেউ পিছিয়ে থাকছেন না। পিছিয়ে নেই বগুড়ার বিএনপির বিদ্রাহী প্রার্থীর কর্মী সমর্থকরাও। বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছ থেকে নেতা কর্মীদের সরিয়ে নিতে কেন্দ্র ও জেলা নেতাদের হুঁশিয়ারিও কাজে আসছে না। এমনকি দল থেকে বহিষ্কারের পরেও বিএনপি নেতাকর্মীদের নির্বাচনী মাঠের জোয়ার থেকে সরানো যাচ্ছে না।

বিএনপির বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করায় এ পর্যন্ত জেলার ৪টি নির্বাচনী এলাকা থেকে বিএনপি যুবদল, ছাত্রদল, শ্রমিকদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রায় অর্ধশত নেতা কর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে দপ্তর সম্পাদক জানিয়েছেন, তারা কেন্দ্রের নির্দেশনায় ২২ জনকে বহিষ্কার এবং থানা কমিটির এক সভাপতিকে পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। তবে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জাতীয়তাবাদী যুবদল, ছাত্রদল ও শ্রমিকদল মিলিয়ে এর সংখ্যা প্রায় অর্ধশত।

সর্বশেষ বগুড়া-৪ আসনের কাহালু উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফরিদুর রহমান ফরিদকে অব্যাহতি এবং বগুড়া-১ আসনের সারিয়াকান্দি উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি মকবুল হোসেন ও ইউনিয়ন বিএনপির প্রচার সম্পাদক নাজমুল আলমকে বহিষ্কার করা হয়। বিএনপির এক বিদ্রোহী নেতা জানিয়েছেন নেতাকর্মীরা শুধু তার পক্ষেই নয় অন্য স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষেও নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন।
বগুড়ায় এবার বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা), বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ), বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) ও বগুড়া-৭ আসন (শাজাহানপুর-গাবতলী) থেকে নির্বাচনে না যাওয়ার দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে বিএনপি বিদ্রোহী নেতারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এদের প্রত্যেকে দলের জেলা পর্যায়ে শীর্ষ স্থানীয় দায়িত্ব পালন করেছেন। আর দুজন ইতোপূর্বে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হিসাবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। এদের মধ্যে ৪ বারের নির্বাচিত বিএনপি এমপিও রয়েছেন। বগুড়া জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির জানিয়েছেন, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে মনোনয়নপত্র দাখিল থেকে শুরু করে এপর্যন্ত শুধু বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের ২২ জন নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় নির্দেশে তাদের বহিষ্কার করা হয়।  

জেলা যুবদল জানিয়েছে এসব এলাকা থেকে ৯ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আর ছাত্রদলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে কাহালু ও সারিয়াকান্দি সোনতলার ইউনিয়ন পর্যায় থেকে তারা ৭ জনকে বহিষ্কার করেছেন। শ্রমিক দলের কাহালু শাখার সাধারণ সম্পাদককে বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচন করায় বহিষ্কার করা হয়েছে। বগুড়ায় বিএনপির বিদ্রোহী নেতাদের মধ্যে আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী বগুড়া-৪ আসনের চারবারের এমপি স্বতন্ত্র প্রার্থী ডা. জিয়াউল হক মোল্লা জানিয়েছেন, তার এলাকা থেকে বিএনপির ৯ জন এবং শ্রমিকদল, ছাত্রদল যুবদলের’ ১২/১৪ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি আরও বহিষ্কারের আশঙ্কা ব্যক্ত করে জানান, এতে দল ক্ষতি হচ্ছে।

বহিষ্কার করেও নেতাকর্মীদের তার পক্ষ থেকে নির্বাচনী মাঠ থেকে সরানো যাবে না বলে জানিয়ে বলেন, দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা সরাসরি ও প্রকাশ্যে তার পক্ষে কাজ করছেন। অনেকে লুকিয়ে কাজ করছেন। নেতাকর্মীরা নির্বাচনী মাঠে থাকায় বহিষ্কার করা হচ্ছে। এর কারণ হিসাবে তিনি দলের নেতৃত্ব একটি দুষ্ট চক্রের হাতে চলে গেছে বলে উল্লেখ করে বলেন, এ থেকে বের হতে না পারলে বিএনপির ভবিষ্যত অন্ধকার হয়ে পড়বে। বগুড়া-১ (সারিকান্দি-সোনাতলা) আসন থেকে ইতোপূর্বে বিএনপির মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচন করা এবং দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. শোক জানান নেতাকর্মীরা তার সঙ্গে কাজ করছেন।

তার এলাকা থেকে সবেচয়ে বেশি নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হচ্ছে বলে জানিয়ে বলেন, অবস্থা এমন পৌঁছেছে যে, নির্বাচনের পর তারা ‘জাতীয়তাবাদী বহিষ্কার দল’ গড়তে পারবেন। তিনি দাবি করেন, বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের অনেক নেতাকর্মী অন্য স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষেও কাজ করছে। জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদকের তথ্যানুযায়ী বিএনপির যে ২২ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে তার মধ্যে কাহালুতে ৭ জন, দুপচাঁচিয়ায় ২ জন, সারিয়াকান্দিতে ১১ জন ও শিবগঞ্জ ও সোনাতলা উপজেলায় ১ জন করে রয়েছেন। বিএনপির আরেক বিদ্রোহী নেতা বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার বাদল জানালেন, বহিষ্কারের বিষয়টি মাথায় রেখে দলের নেতাকর্মীরা গোপনে তার পক্ষে কাজ করছেন।

×