ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কেসিসি ও বিসিসি নির্বাচন

উৎসবের আমেজে প্রার্থীদের প্রচার শুরু

জনকণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৩:১০, ২৭ মে ২০২৩

উৎসবের আমেজে প্রার্থীদের প্রচার শুরু

ওপরে বাঁ থেকে- বরিশাল সিটি নির্বাচনে নৌকা ও হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থীর গণসংযোগ। নিচে বাঁ থেকে- কেসিসি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীর গণসংযোগ 

খুলনা ও বরিশালে সিটি নির্বাচনের প্রার্থীরা ব্যাপক প্রচার ও গণসংযোগ করছেন। প্রতীক বরাদ্দের পরদিনই খুলনায় আটঘাট বেঁধে প্রচারে নেমেছেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। শুক্রবার প্রতীক নেওয়ার পর কেউ কেউ স্বল্প পরিসরে গণসংযোগে নামলেও শনিবার সকাল থেকেই নগরীর বিভিন্ন স্থান প্রার্থীরা প্রচারে নামেন। তারা প্রার্থীদের দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি ও উন্নয়নের বার্তা।
বরিশালে নির্বাচনী প্রচারে সরগরম হয়ে উঠেছে গোটা নগরী। মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের ব্যানার ও পোস্টারে ছেয়ে গেছে নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক ও পাড়া-মহল্লার অলিগলি। দুপুর দুইটার পর নগরজুড়ে ব্যাটারিচালিত রিক্সা ও ইজিবাইকে মাইক লাগিয়ে প্রার্থীদের পক্ষে প্রচার চালানো হচ্ছে। নগরীর সদর রোডের অশ্বিনী কুমার টাউন হল চত্বর থেকে নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে প্রচার শুরু করেন হাতপাখা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম। এসময় তার সঙ্গে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয়, জেলা ও মহানগরের নেতার উপস্থিত ছিলেন।

অপরদিকে লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইকবাল হোসেন তাপস দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেছেন। নগরীর কালুশাহ সড়কের আলেকান্দা এলাকা থেকে বিএনপি ঘরানা স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী কামরুল আহসান রূপন তার টেবিল ঘড়ি মার্কার সমর্থনে আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু করেছেন।
খুলনায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক সকালে নগরীর রূপসা এলাকার পাইকারি মাছ বাজার, কাঁচাবাজার, রূপসার মোড় ও আশপাশের এলাকায় গণসংযোগের মাধ্যমে দিনের কর্মসূচি শুরু করেন। তার পর তিনি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় যান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মাজার জিয়ারত করতে। বিকেলে আবার তিনি খুলনা প্রেসক্লাবের ব্যাংকুয়েট হলে সাংবাদিকদের সঙ্গে  মতবিনিময়সহ নগরীর বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ করেন।
এ ছাড়া জাতীয় পার্টির প্রার্থী শফিকুল ইসলাম মধুকে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে ২৪ ও ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের গল্লামারী ও আশপাশের এলাকায় গণসংযোগ করেন। এ ছাড়া সোনাডাঙ্গা ও নগরীর নিউমার্কেট এলাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে তিনি প্রচার চালান। এ ছাড়া ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী আব্দুল আউয়ালকে হাতপাখা ও জাকের পার্টির মেয়র প্রার্থী এসএম সাব্বির হোসেন গোলাপ ফুল প্রতীক নিয়ে নানা এলাকায় গণসংযোগ করেছেন। 
এদিকে অনেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচার শুরু করেন কাউন্সিলর প্রার্থীরা। 
নৌকা মার্কাকে বিজয়ী করার আহ্বান ॥ নির্বাচনী মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের যতো অপপ্রচারই হোকনা কেন, দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী, সমর্থক ও জনপ্রতিনিধিদের একজোট হয়ে নৌকা মার্কাকে বিজয়ী করার আহ্বান জানিয়েছেন মেয়র প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাতের বড় ভাই জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপি।
তবে সাদিক অনুসারীদের বাদ দিয়েই ভোটারদের মন জয় করে নির্বাচনে বিজয় ছিনিয়ে আনতে দিনরাত কাজ করছেন সাদিকবিরোধী নেতাকর্মীরা। মেয়র প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাতের সমর্থকরা কোনো অবস্থাতেই সাদিক অনুসারীদের সঙ্গে ঐক্য করতে চাচ্ছেন না।

তারা (সাদিক অনুসারী) যেন নির্বাচনী প্রচারে না নামেন তেমনটি চাইছেন। খোকন অনুসারীদের দাবি, বর্তমান মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহর সময়কার বিতর্কিত সব কর্মকা-ে এমনিতেই তাদের প্রার্থীকে মাঠ গোছাতে চরম বেগ পেতে হচ্ছে। তারপরেও তারা যেভাবে মাঠ গুছিয়ে এনেছেন তাতে আগামী ১২ জুনের নির্বাচনে নৌকা মার্কার শতভাগ বিজয় নিশ্চিত হবে। এই মুহূর্তে সাদিক অনুসারীরা প্রচারে নামলে গোছানো নির্বাচনী মাঠ পুনরায় নষ্ট হবে।
নৌকার বিপক্ষে যাওয়ার সুযোগ নেই ॥ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় সভাপতির বক্তব্যে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, সকল ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নৌকা প্রতীকের বিজয় নিশ্চিত করতে হবে।

বর্তমান মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ মনোনয়ন না পাওয়ায় তার সমর্থকদের মনে কষ্ট থাকতে পারে। কিন্তু সাদিকের স্থানে কিন্তু দলের মনোনয়ন পেয়েছে আমার একমাত্র ছোট ভাই ও সাদিকের চাচা খোকন সেরনিয়াবাত। একথা সবাইকে মাথায় রাখতে হবে। আর নৌকা কিন্তু আমাদের অস্তিত্বের প্রতীক। নৌকা মার্কাকে বিজয়ী করা মানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিজয়ী করা। তাই আগামী ১২ জুনের নির্বাচনে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।
ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে এগিয়ে যেতে হবে ॥ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সিটি নির্বাচন আমাদের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ জানিয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রমাণ করতে হবে শেখ হাসিনা জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব। নৌকাই মানুষের মুক্তির পথ। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে ষড়যন্ত্র চলছে। সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে আমাদের আরও ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। 
নির্বাচনের পূর্বে ফিরছেন না সাদিক ॥ মনোনয়ন বঞ্চিত বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ নির্বাচনের পূর্বে বরিশালে ফিরছেন না। বিষয়টি নিশ্চিত করে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম বলেন, দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সাদিক আব্দুল্লাহ নির্বাচনের পূর্ব বরিশালে আসবেন না, তবে তিনি ঢাকায় অবস্থান করেই নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় দলীয় প্রার্থীকে সহযোগিতা করবেন। ঢাকায় বসে নেতাকর্মীদের দিকনির্দেশনা প্রদান করবেন।
কথায় নয়, কাজে বিশ্বাসী ॥ আপনারা আমাকে ভোট দিন, আমি কাজ দিয়ে এ ঋণ পরিশোধ করব। আপনারা আমাকে মেয়র নির্বাচিত করে প্রধানমন্ত্রীর হাতকে শক্তিশালী করলে, প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতায় আমি শক্তিশালী উন্মুক্ত বরিশাল সিটি করপোরেশন উপহার দেব। নগরীর ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের উঠান বৈঠকে এসব কথা বলে ভোটারদের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চেয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাত। এসময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার, মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি আফজালুল করিম, মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদুল হক খান মামুন প্রমুখ।
অতীতে জনগণের প্রতি অতিরিক্ত জুলুম করা হয়েছে ॥ গত ১০ বছরে নগরীকে অনেক পিছিয়ে নেওয়া হয়েছে। একটু বৃষ্টি হলে কোথাও কোথাও বুক সমান পানি জমে যায়। এখনো অনেক স্থানে সরকারি ব্যবস্থাপনায় বিদ্যুৎ পৌঁছেনি। বরিশালবাসীকে যে অবহেলা করা হয়েছে তা দুঃখজনক। জনগণের প্রতি সবচেয়ে বেশি জুলুম করা হয়েছে অতিরিক্ত মাত্রার ট্যাক্স বসিয়ে। আমাকে মেয়র নির্বাচিত করা হলে হোল্ডিং ট্যাক্স মানুষের সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা হবে। নগরীর ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে অনুষ্ঠিত নৌকা মার্কার উঠান বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কথাগুলো বলেছেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা মার্কার মেয়র প্রার্থী বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত।

ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মেজবাহুল ইসলাম দিপুর সভাপতিত্বে উঠান বৈঠকে বক্তব্য রাখেন, নৌকার নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার, মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আফজালুল করিম, সাবেক সাংসদ জেবুন্নেসা আফরোজ হিরনসহ অন্যান্যরা।
সর্বোচ্চ ভোটে আমি নির্বাচিত হবো ॥ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত হাত পাখা মার্কার মেয়র প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম বলেছেন, গণসংযোগের সময় মানুষ যেভাবে আমাকে আশ্বস্ত করছে, তাতে আমার মনে হচ্ছে মানুষ ভোট দেওয়ার সুযোগ পেলে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে আমি বিজয়ী হবো ইনশাআল্লাহ। তিনি আরও বলেন, নির্বাচন কমিশনের বিগত প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনগুলোর কারণে আমরা ফলাফল হাতে পাবার আগ পর্যন্ত শঙ্কামুক্ত নই। শনিবার দুপুরে নগরীর বাংলাবাজার এলাকায় গণসংযোগকালে তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেছেন। বিকেলে হাত পাখার প্রার্থী নগরীর ৯ নম্বর ওয়ার্ডের নগর ভবন এলাকা, রসুলপুর কেন্দ্রীয় মসজিদ, ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কেডিসি, শিল্পকলা একাডেমি এবং ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের সোনা মিয়ার পোল এলাকায় গণসংযোগ করেছেন।

×