ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জমিসহ ঘর পেলেন ৬৯৬ ভুমিহীন পরিবার

যে যাই বলুক, হাসিনা ছাড়া আমাগো কেউ নেই

স্টাফ রিপোর্টার, বাগেরহাট 

প্রকাশিত: ২১:৪৮, ২২ মার্চ ২০২৩

যে যাই বলুক, হাসিনা ছাড়া আমাগো কেউ নেই

ভূমিহীন পরিবার

শেখ হাসিনা ছাড়া গরিবের তো আর কেউ নেই, তারে ছাড়া আমাগো মত গরিব মানুষ বাঁচতি পারবে না। কিরা আমাগো দিক তাকাবে। বুধবার সকালে বাগেরহাটে স্বাধীনতা উদ্যানে বসে কথাগুলো বলছিলেন ৬৫ বছরের বৃদ্ধা ফাতেমা বেগম। তিনি লাঠিভর দিয়ে কোন রকমে চলতে পারেন। দিনে ভিক্ষা করেন, আর রাতে যাত্রপুর তহশীল অফিসের পাশে ভাঙ্গা ঘরে নাতি হাবিবকে নিয়ে থাকেন।

এক মেয়ে হালিমাকে রেখে তার স্বামী তাজেম আলী মারা গেছেন ৪ বছর আগে। আর মেয়ে হালিমা গত রোজার সময় রাসেল(১৮), শিলা(১৫) ও হাবিব(১৩) নামে ৩ ছেলে-মেয়ে রেখে মারা যায়। বড় নাতি রাসেল চট্রগ্রামে কোন এক টাইলস মিলে কাজ করে আর ছোট নাতি হাবিব থাকে নানীর সাথে। নাতনী শিলার বিয়ে হয়েছে ১৩ বছর বয়সে ইসমাইল জোমাদ্দার নামে এক দিনমজুরের সাথে।

শিলার আবার সিয়াম নামে এক ছেলে হয়েছে। শিশু সিয়ামকে কোলে নিয়ে চলতে প্রায় অক্ষম নানী ফাতেমা বেগমের সাথে সেও এসেছিল স্বাধীনতা উদ্যানে। ফাতেমা বেগম বাগেরহাট সদর উপজেলার আড়পাড়া আশ্রয়ন প্রকল্পে জমিসহ বাড়ি পেয়েছেন। এখানে জায়গাসহ বাড়ির দলিল, কবুলিয়ত, জমির খতিয়ান, গৃহ প্রদানের সনদ ও চাবি প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহামামদ আজিজুর রহমান (বিপিএএ) তার হাতে তুলে দেন।

১৩ বছর বয়সে কেন বিয়ে হল, বলতে শীলা সহজে উত্তর দেয়, ‘বাবা বিয়ে করে অন্য জায়গায় চলে গেছে, মা খেতে দিতে পারে না, তাই বিয়ে দিয়ে দিয়েছে।...’ কথায় কথায় সে বলে, নানী জমিসহ বাড়ি পাছে শেখ হাসিনার জন্য, শেখ হাসিনারে রাখতি হবে। সে ছাড়া আমাগো মত গরিব মানুষগো কেউ বাড়ি দিত না, যে যাই বলুক, যত বুঝ দিক তাতে কাজ হবে না, হাসিনা ছাড়া আমাগো কেউ নেই...।”

ফাতেমা বেগমের মত এদিন বাগেরহাট সদরের আড়পাড়া ও লাউপালা আশ্রয়ন প্রকল্পে জমিসহ বাড়ি পাওয়া ৪৪ জনের হাতে দলিলসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র হস্থান্তর করেন জেলা প্রশাসক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে ভার্চুয়ালী এই ঘর প্রদান অনুষ্ঠানের উদ্বোধনের পর বাগেরহাটের ৯ টি উপজেলায় মোট ৬৯৬ জন ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার ৪র্থ পর্যায়ে বাড়িসহ ঘর পেয়েছেন।

স্বাধীনতা উদ্যানে এসময়, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) অরবিন্দ বিশ্বস, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. ভুইয়া হেমায়েত উদ্দিন, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সরদার নাছির উদ্দিন, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুবাইয়া তাছনিম, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক বুলবুল কবির, বাগেরহাট প্রেসক্লাবের সভাপতি নিহার রঞ্জন সাহা, ইউপি চেয়ারম্যান শেখ আক্তারুজ্জামান বাচ্চু, আওয়ামী লীগ নেতা বশিরুল ইসলাম, যাত্রাপুর ইউপি চেয়ারম্যান বাচ্চু বেগ, বারুইপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান হায়দার মোড়ল, কাড়াপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মহিতুর রহমান পল্টন-সহ উপকারভোগীরা উপস্থিত ছিলেন।

বিনামূল্যে জমিসহ বাড়ি পেয়ে হতদরিদ্র সকলে শেখ হাসিনার জন্য দোয়া ও তাঁর দীর্ঘায়ু কামনা করেন। বাগেরহাট সদর উপজেলার লাউপালা আশ্রয়কেন্দ্রে জমিসহ ঘর পাওয়া শিখা রানী অধিকারী বলেন, কখনও ভাবিনি দালানে থাকব, নিজের জমি হবে, জমির মালিক হিসেবে স্টাম্পের উপর নিজের ছবি থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে এই জমিসহ ঘর পেলাম, স্থায়ীভাবে দালানে থাকতে পারব এটা ভেবেই ভাল লাগছে।

একই আশ্রয়নকেন্দ্রে ঘর পাওয়া রওশনারা বেগম বলেন, নিজের জমি না থাকায়, রাস্তার পাশে এবং মানুষের বাড়িতে থাকতাম স্বামী সন্তান নিয়ে। জমিসহ ঘর পেয়েছি, নিজের ঠিকানা হয়েছে। বাকি জীবন আশ্রয়নকেন্দ্রেই কাটাতে চাই। শুধু ফাতেমা, রওশনারা বা’ শিখা রনী নয়, বাগেরহাট জেলায় ঘরপ্রাপ্ত ৬৯৬ ভুমিহীন পরীবারের সদস্যদের অভিব্যক্তি ছিল প্রায় অনুরূপ।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের ৩য় পর্যায়ের ১২৫ টি ও চতুর্থধাপে ৫৭১ টি মোট ৬৯৬ টি ঘর নির্মান সম্পন্ন করা হয়েছে। এর মধ্যে বাগেরহাট সদর উপজেলায় ৪৪, মোংলায় ২২০, মোরেলগঞ্জে ১৩৭, কচুয়ায় ১০, ফকিরহাটে ৭৫, মোল্লাহাটে ৮৩, রামপালে ২০, চিতলমারী ৩২টি এবং শরণখোলা উপজেলায় ৭৫টি ঘর রয়েছে। চতুর্থধাপে প্রতিটি সেমিপাকা ঘরের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লক্ষ ৮৪ হাজার, ৫’শ টাকা। দুই শতাংশ জমিতে নির্মান করা প্রতিটি ঘরে বাড়িতে দুটি বেড রুম, একটা কিচেন রুম, একটা ইউটিলিটি রুম, একটা টয়লেট ও একটা বারান্দা রয়েছে। বারান্দার সামনে ফাকা জায়গাও রয়েছে। দুর্যোগ সহনীয় এসব ঘর হবে টেকসই এবং প্রতিটি ঘরে থাকবে সোলার সিস্টেম আর বজ্রপাত নিরোধক ব্যবস্থা।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান (বিপিএএ) বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে অতি দরিদ্রদের মাধ্যে এই জায়গাসহ বাড়ি দেওয়া হয়েছে। সর্বোচ্চ স্বচ্ছতার সাথে উপকারভোগী বাছাই করা হয়। দরিদ্র পরিবারের সদস্যরা এখানে ভাল থাকবেন। ঘরপ্রাপ্তদের সবধরণের নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে আশে পাশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মান, মসজিদ-মন্দিরসহ ধর্মীয় উপাষনালয়, খেলার মাঠ, ফুল-ফলের বাগান করে দেওয়া হচ্ছে। একই সাথে সুপেয় পানির প্রাপ্ত নিশ্চিত করতে বসানো হয়েছে নলকুপ। এছাড়া উপকারভোগীদের সচ্ছল জীবনের জন্য সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

এমএস

×