ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ভূমিহীন-গৃহহীন মুক্ত জেলা হচ্ছে গাজীপুর 

আধুনিক সুবিধা নিয়ে গড়ে উঠেছে আশ্রয়ণের মডেল গ্রাম

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর 

প্রকাশিত: ১৯:৩১, ২০ মার্চ ২০২৩

আধুনিক সুবিধা নিয়ে গড়ে উঠেছে আশ্রয়ণের মডেল গ্রাম

মডেল গ্রাম

গাজীপুর জেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত জেলা ঘোষণা করা হচ্ছে। আগামী বুধবার (২২ মার্চ) আনুষ্ঠানিকভাবে এ ঘোষণা প্রদান করা হবে। এ সময় মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে জমিসহ ১৪২টি ঘর আশ্রয়হীনদের দেয়া হবে। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি যুক্ত থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ ঘোষণা প্রদান করবেন বলে জানিয়েছেন গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান। সোমবার সকালে গাজীপুরের শ্রীপুরের নয়াপাড়া এলাকায় আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘুরে সেখানে এক প্রেসব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান জেলা প্রশাসক। 

তিনি জানান, তিনটি ধাপে গাজীপুর জেলার ৫টি উপজেলায় মোট এক হাজার ৮১৭টি গৃহ নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৬৩০টি, কালিয়াকৈরে ৪৪০টি, শ্রীপুরে  ২৮০টি, কাপাসিয়ায় ৩১৮টি ও কালীগঞ্জে ১৪৯টি ঘর নির্মাণ করা হয়।

গ্রামের ভিতর গড়ে উঠেছে একটি আধুনিক গ্রাম 
গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের ৮একর ২ শতাংশ জমির উপর গড়ে তোলা হয়েছে আশ্রয়ণের এ মডেল প্রকল্প। আশ্রয়ণ প্রকল্পের মধ্যে সবচেয়ে বড় পরিসরে গাজীপুরের এ প্রকল্পে ১৪২টি ঘর তৈরি করা হয়েছে। দৃষ্টি নন্দন ডিজাইন, সুপরিসর রাস্তা ও আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত এ প্রকল্পটি দেখে মনে হবে গ্রামের ভিতরে গড়ে উঠেছে একটি আধুনিক গ্রাম। এখানে ঘর বরাদ্ধ পেয়ে আশ্রয়হীনরা তাদের আশ্রয়হীনের অপবাদ ঘোচাচ্ছেন। 

নয়াপাড়া গ্রামসহ আশেপাশের এলাকায় বেশ কয়েক বছর ধরেই শুরু হয়েছে নগরায়ণ। নয়াপাড়া গ্রামের চার পাশে গড়ে উঠছে বিভিন্ন শিল্প কলকারখানা। এ আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসকারী নারী-পুরুষসহ সব বয়সীদের জন্য থাকছে আত্মকর্মসংস্থানমূলক বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। নিজের পায়ে দাঁড়াতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হচ্ছে সব রকম সুযোগ সুবিধা প্রদানের কার্যক্রম। শিশু কিশোরদের জন্য রয়েছে আলাদা স্কুল। এ প্রকল্পটি এটি দারিদ্র বিমোচনে শেখ হাসিনা মডেলের এক অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করবে বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের ধারণা।

জেলার খাস জমি অবৈধ দখলমুক্ত করে ঘর নির্মাণ করে তাতে বিধবা, ভিক্ষুক, প্রতিবন্ধী, স্বামী পরিত্যাক্তা, দিনমুজুর, বয়স্ক এবং অসহায় ব্যক্তি ও পরিবারকে বরাদ্ধ দেওয়া হয়। জ্যৈষ্ঠের তাপদাহ, শ্রাবণের ঝড়োধারা, মাঘের হাড় কাঁপানো শীতসহ সব প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে যাদের খোলা আকাশের নিচে আজন্ম লড়াই করতে হতো, তাদের জন্যই মূলত মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে ব্যাপক সুযোগ সুবিধা নিয়ে এসব ঘর তৈরি করা হয়েছে।

কর্তৃপক্ষের তথ্য মতে, গাজীপুর মৌজার সরকারি ১ নম্বর খতিয়ানভুক্ত ৭ একর ৯২ শতাংশ জমিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় বাস্তবায়নাধীন আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর অধীনে ১৪২টি ঘর নির্মিত হয়েছে। এতে ১৪২টি পরিবার ঠিকানা পাবে। এছাড়াও এখানকার বাসিন্দাদের সন্তানদের শিক্ষিত করে তোলার জন্য আরো ১০ শতাংশ জমি অধিগ্রহণ করে তার উপর গড়ে তোলা হচ্ছে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। 

শুধু তাই নয়, তাদের দারিদ্র বিমোচনেও বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শতাধিক পরিবারের বসবাসের বিশেষ এ গ্রামে অভ্যন্তরীণ প্রশস্ত রাস্তাসহ যোগাযোগব্যবস্থা, খেলার মাঠ, পুকুর, ফলজ, ভেষজ, ওষুধিসহ বিভিন্ন গাছের চারা রোপণ, রাস্তার পাশে সৌন্দর্যবর্ধনকারী গাছ রোপণ, পারিবারিক পুষ্টি বাগান, মসজিদ, দক্ষতা উন্নয়ন কেন্দ্র কাম বিদ্যালয়, রাস্তায় সোলার লাইট স্থাপন, সুপেয় পানির জন্য প্রতি ১০ পরিবারের জন্য সাবমারসিবল পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি পরিবারকে স্বয়ংস¤পূর্ণ করতেই সরকারি এই উদ্যোগ।

শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, আমরা কঠোর নজরদারির মাধ্যমে এসব ঘরের কাজ স¤পন্ন করেছি। এখন আধুনিক সুবিধা গড়ে তোলার কার্যক্রম চলমান। এসব ঘর সমাজের আশ্রয়হীন অসহায় দরিদ্র মানুষ, প্রতিবন্ধী লোকজনের মধ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কাজের মানের সাথে কোন আপোষ করা হয়নি।

গাজীপুর জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান বলেন, গাজীপুরের নয়াপাড়া গ্রামের এই কর্মসূচি আমাদের বিরাট অর্জন। স্বাধীনতার এত বছর পর প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে আশ্রয়হীনদের মধ্যে ঘর বিতরণ করছি, এটা খুবই আনন্দের। একসঙ্গে এটি একটি পুরো গ্রাম। এখানে বহু মানুষ বসবাস করবে। তারা শুধু আশ্রয়ই পাবে না, প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে তারা দরিদ্রতার অভিশাপমুক্ত হয়ে স্বাবলম্বী হবে। 

তিনি আরও বলেন, এ পর্যন্ত গাজীপুর জেলায় ১ হাজার ৮১৭ জন গৃহহীন পরিবারের মধ্যে আমরা সফলভাবে ঘর বিতরণ করেছি। ২২ মার্চ গাজীপুরকে গৃহহীনমুক্ত জেলা হিসেবে ঘোষণা করবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। 

এদিকে আশ্রায়ণ প্রকল্পে জীবনের শেষ বয়সে ঘর পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন ৮০ উর্ধ্ব বয়সের আমির আলী। তিনি বলেন, প্রায় ১৭ বছর রিক্সা চালিয়েও স্থায়ী ঠিকানা করতে পারি নি। বর্তমানে রাস্তার পাশে পিঠা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছি। এমতাবস্থায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়েছি। এ যেন ’৭১এ মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতা অর্জনের পর পুরো দেশবাসীর সঙ্গে আমি যেমন আনন্দে উদ্বেলিত হয়েছিলাম।  দেশ স্বাধীন হওয়ার ৫২ বছর পর আজ আমি সেই স্বাদ পাচ্ছি। এ সময় তিনি আনন্দে কেঁদে উঠেন। 

প্রায় একই অনুভুতি প্রকাশ করেছেন ওই প্রকল্পে ঠিকানা খুঁজে পাওয়া শারিরীক প্রতিবন্ধি আল আমিন, স্বামী পরিত্যাক্তা লিপি ও নুরুন্নাহার সহ বেশ কয়েকজন।  

এসআর

×