ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বাবুল আক্তারসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন 

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস

প্রকাশিত: ২৩:২৪, ১৩ মার্চ ২০২৩

বাবুল আক্তারসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন 

চাঞ্চল্যকর মাহমুদা খানম মিতু হত্যা

চাঞ্চল্যকর মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারসহ সাত আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেছে আদালত। চার্জ গঠনের পর বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছেন বিচারক। সোমবার চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জসিম উদ্দিনের আদালতে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের শুনানি শেষে অভিযোগ গঠিত হয় এবং সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর জন্য ৯ এপ্রিল দিন ধার্য করা হয়।

এর আগে দুপুরে মিতু হত্যা মামলায় অভিযোগ গঠন বিষয়ে শুনানি হয়। তখন আদালতে মিতুর স্বামী ও মামলার প্রধান আসামি বাবুলকে হাজির করা হয়। শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ কার বিরুদ্ধে কোন ধারায় কী অভিযোগ গঠনের আবেদন করা হয়, তা উপস্থাপন করেন। বিকেলে আদালত চার্জ গঠনের আদেশ দিয়ে পরবর্তী সাক্ষ্যের জন্য তারিখ নির্ধারণ করেন। এ সময় বাবুল আক্তার কান্নায় ভেঙে পড়েন।
রাষ্ট্রপক্ষের পিপি আব্দুর রশিদ জানান, আসামি বাবুল দীর্ঘদিন পরিকল্পনা করে তার স্ত্রী মিতুকে হত্যা করান এবং তিনি যখন ঢাকায় ছিলেন তখনই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয়। সোর্সদের তিনি ভাড়া করেন এবং অস্ত্র সংগ্রহ করিয়ে এই হত্যাকা- বাস্তবায়ন করেন। পরে ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য নিজেই মামলা দায়ের করেন। আসামি বাবুল আক্তারের বিরুদ্ধে ৩০২, ২০১ এবং ১০৯ ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়। 
রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে একটি আবেদন করেন, যাতে মামলার বিচারকার্য পরিচালনার সুবিধার্থে আসামি বাবুল আক্তারকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখার অনুরোধ জানানো হয়। এ বিষয়েও আদালত আদেশ দিয়েছেন। তবে আসামি বাবুল তাকে চট্টগ্রাম কারাগারে না রাখার বিষয়ে বক্তব্য দেন। তখন আদালত বলেন, মামলার বিচারকার্য পরিচালনার সুবিধার জন্য রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের প্রক্ষিতেই এ আদেশ দেওয়া হয়েছে। যদি চিকিৎসা কিংবা অন্য কোনো বিষয়ে প্রয়োজন হয় তাহলে আপনারা জেল কর্তৃপক্ষ কিংবা আদালতের কাছেও পরে আবেদন জানাতে পারবেন।
সোমবার আসামি পক্ষে আদালতে ছিলেন আইনজীবী শিশির মনির, গোলাম মাওলা মুরাদ এবং কফিল উদ্দিন। এ বিষয়ে আইনজীবী গোলাম মাওলা বলেন, আমরা মামলার অভিযোগ থেকে বাবুল আক্তারের অব্যাহতি চেয়েছিলাম। এর পক্ষে আমরা যুক্তি উপস্থাপন করেছি। এছাড়া আমাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে এডিসি (অতিরিক্ত উপ-কমিশনার) প্রসিকিউশনের কক্ষে বাবুল আক্তারের সঙ্গে একঘণ্টা কথা বলার অনুমতি দিয়েছেন। উনার সঙ্গে আলাপের পর আমরা করণীয় ঠিক করব।
শুনানিতে আসামি বাবুল আক্তারের আইনজীবী শিশির মনির আদালতে বলেন, এ মামলাটির অভিযোগ গঠনের জন্য পর্যাপ্ত ডকুমেন্ট নেই। মামলার বাদী ছিলেন বাবুল আক্তার। পরে ভিকটিমের বাবা বাদী হয়ে দ্বিতীয় আরেকটি মামলা করেন। তখন দ্বিতীয় মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়। এরপর প্রথম মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়া হলো। দ্বিতীয় মামলায় সংগ্রহ করা ডকুমেন্ট প্রথম মামলায় ব্যবহৃত হতে পারে না।

দ্বিতীয় মামলায় দেওয়া জবানবন্দি প্রথম মামলায় কী করে এলো? তাছাড়া সাক্ষীদের জবানবন্দিও বিপরীত। ঘটনার পর যে ২৬ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছিল, তা বর্তমান মামলায় নেই। এই মামলার আসামি মুছা কোথায়? গায়ত্রী নামের যে নারীর কথা বলা হচ্ছে, ওই নারী কোথায়?
তখন শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের পিপি জানান, আসামিপক্ষ যেসব প্রশ্ন তুলেছেন, সেসব বিষয়ে হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে অনেক রায় আছে। দ্বিতীয় এফআইআর নেওয়ার বিষয়ে উচ্চ আদালতে অনেক রায় আছে। কিভাবে বাবুল আক্তারের পরিকল্পনায় হত্যাকা-টি সংঘটিত হয়েছে তা তদন্তে উঠে এসেছে। এখন আসামিপক্ষ যেসব প্রশ্ন তুলছেন তা বিচারে প্রমাণ হবে।
চার্জ গঠন শেষে আদালতে উপস্থিত মাহমুদা খানম মিতুর বাবা সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন হওয়ায় তার পরিবার খুশি। তিনি জানান, মূলত এ মামলায় দুটি বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে। পরিকল্পিতভাবে ভাড়াটিয়া খুনি চক্রের সঙ্গে মিটিং করে অস্ত্র ভাড়ায় এনে মিতুকে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনার মূল রূপকার বাবুল আক্তার নিজেই।

অথচ, এসব জেনেশুনে তিনি জঙ্গিদের দ্বারা সংঘটিত হয়েছে বলে একটি মিথ্যা মামলা রুজু করে ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা চালিয়েছেন। এসব বিষয় সাক্ষীদের জবানিতে উঠে আসবে বলে তিনি বিশ^াস করেন এবং বিচার প্রক্রিয়া সঠিক পথে এগোচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে জিইসি মোড়ের অদূরে ছেলেকে স্কুলবাসে দিতে যাওয়ার সময় মিতুকে প্রকাশ্যে গুলি চালিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। মিতু খুন হওয়ার পর তার স্বামী বাবুল বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেছিলেন।

×