ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিচারকের সঙ্গে অশোভন আচরণ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ২১ আইনজীবীকে হাইকোর্টে তলব

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:১৮, ১১ জানুয়ারি ২০২৩

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ২১ আইনজীবীকে হাইকোর্টে তলব

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের সঙ্গে অশোভন আচরণ ও তার বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়ার ঘটনায় ওই বারের ২১ আইনজীবীকে তলব করেছেন হাইকোর্ট। আগামী ২৩ জানুয়ারি আদালতে হাজির হয়ে এই বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত বিষয়ে শুনানি নিয়ে বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে রুলসহ এ আদেশ প্রদান করেছেন।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়। তিনি বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ২১ আইনজীবীকে তলব করা হয়েছে। আগামী ২৩ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টায় তাদের আদালতে হাজির হতে বলা হয়েছে। 
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা জজ বেগম শারমিন নিগারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এ আদেশ দেন। আইনজীবীদের অসদাচরণের জন্য কেন তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার কার্যক্রম শুরু করা হবে না তার কারণ ব্যাখ্যা করতে একটি রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট বেঞ্চ। এর আগেও গত ৫ জানুয়ারি এ ঘটনায় জেলার আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট তানভীর আহমেদ ভূঞা এবং সম্পাদক (প্রশাসন) অ্যাডভোকেট মো. আক্কাস আলী ও অ্যাডভোকেট জুবায়ের ইসলামকে ১৭ জানুয়ারি হাইকোর্টে হাজির হতে বলা হয়।

এদিকে আইনজীবীদের আচরণ নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা ও দায়রা জজ শারমিন নিগার প্রধান বিচারপতির কাছে অভিযোগ দায়ের করেন। তার লিখিত অভিযোগের বিষয়টি আমলে নিয়ে হাইকোর্ট উপরোক্ত আদেশ দেন।
২১ আইনজীবীর মধ্যে আছেন অ্যাডভোকেট মিনহাজুল ইসলাম, এমদাদুল হক হাদি, নিজামুদ্দিন খান রানা, আনিছুর রহমান মঞ্জু, মো. জুম্মন চৌধুরী, রাশেদ মিয়া হাজারী, জাহের আলী, মো. আ. আজিজ খান, দেওয়ান ইফতেখার রেজা রাসেল, মো. ছদর উদ্দিন, মাহমুদুর রহমান রনি, মো. মাহবুবুর রহমান, মো. আরিফুল হক মাসুদ, মীর মোহাম্মদ রাইসুল আহম্মেদ, মহিবুর রহমান, মো. জাকারিয়া আহমেদ, মো. মোবারক উল্লা, মো. ফারুক আহমেদ, সফিক আহমেদ।

জেলা জজ আদালতে এজলাস চলার সময় বিচারকের নামে অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ স্লোগান দিয়ে বিচার ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা, বিচার বিঘিœœœত করা এবং বিচারকের মানহানি করার বিরুদ্ধে প্রতিকার প্রার্থনা করে প্রধান বিচারপতির কাছে গত ৯ জানুয়ারি আবেদন করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা জজ বেগম শারমিন নিগার।
এ সময় আদালতের এজলাসে কোর্ট ইন্সপেক্টর, আদালতের নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ সদস্য, আদালতের কর্মচারী ও বিচারপ্রার্থী জনসাধারণ উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের মধ্য থেকে একজন ঘটনাটি ভিডিও করেন। পরে ভিডিওটি তার হস্তগত হয়। দরখাস্তের অংশ হিসেবে ভিডিও ক্লিপটি তিনি আবেদনের সঙ্গে সংযুক্ত করেছেন।

আবেদনপত্রে তিনি উল্লেখ করেন, গত ২ জানুয়ারি এজলাস চলার সময় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিচারক মোহাম্মদ ফারুককে অশালীন ও অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে এজলাস থেকে নামতে বাধ্য করার প্রতিক্রিয়ায় সুপ্রিমকোর্টের কনটেম্পট ব্যাচ রুল জারি করার পর অভিযুক্ত আইনজীবীরা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে গত ৫ জানুয়ারি এবং ৮ জানুয়ারি এজলাস চলাকালে বিচারকের বিরুদ্ধে অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ স্লেøাগান প্রদান করেন। জেলা জজের এই আবেদনপত্র প্রধান বিচারপতি হাইকোর্টে পাঠিয়ে দেন।
বিচারক ফারুককে অশ্রব্য ভাষায় গালিগালাজ করার ঘটনায় গত ৫ জানুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়া আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট তানভীর আহমেদ ভূঞা, সম্পাদক (প্রশাসন) অ্যাডভোকেট মো. আক্কাস আলী ও অ্যাডভোকেট জুবায়ের ইসলামকে তলব করেন হাইকোর্ট। আগামী ১৭ জানুয়ারি আদালতে হাজির হয়ে তাদের ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। 
ব্রাহ্মণবাড়িয়া আইনজীবীদের টানা আদালত বর্জন ॥ স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জানান, দাবি আদায় না হওয়ায় টানা ৪র্থ দিনের মতো আদালত বর্জন কর্মসূচি পালন করেছেন আইনজীবীরা। মঙ্গলবার সকাল থেকে বর্ধিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে জেলা আইনজীবী সমিতি নতুন করে আরও তিনদিনের আদালত বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয়। এতে করে আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তাদের আদালত বর্জন কর্মসূচি চলবে। 
এর আগে দুই বিচারকসহ নাজিরের অপসারণ দাবিতে গেল বৃহস্পতি, রবি ও সোমবারও তারা আদালত বর্জন করেন। কর্মসূচির আলোকে মঙ্গলবার সকাল থেকে আদালতের কোনো এজলাসে যাননি তারা। আইনজীবীরা জেলা আইনজীবী সমিতির ভবনে অবস্থান নিয়ে তাদের কর্মসূচি পালন করে। এ সময় মামলার শুনানি, হাজিরাসহ কোনো মামলারই কার্যক্রম পরিচালিত হয়নি। এতে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ হাজার বিচার প্রার্থীর ন্যায়বিচারপ্রাপ্তি বিঘিœত হচ্ছে। কেবল নতুন তারিখ নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে বিচার প্রার্থীদের। 
এদিকে আদালত বর্জন কর্মসূচির সময় আরও তিনদিন বৃদ্ধি করার ফলে বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগ আরও বাড়বে বলে মনে করছেন সাধারণ মানুষ। টানা আদালত বর্জন কর্মসূচির কারণে বিচারপ্রার্থীরা দূর-দূরান্ত থেকে আসলেও আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম না থাকায় তাদের ফিরে যেতে হয়েছে। আবার অনেকেই আসামিদের জামিন করাতে না পেরে নানা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। ভুক্তভোগী বিচারপ্রার্থীরা জানান, দূর-দূরান্ত থেকে টাকা খরচ করে এসে আদালতে বিচারিক কার্যক্রম না থাকায় তারা হতাশ।
আদালতে আসা বিচারপ্রার্থী শহরের মধ্যপাড়া এলাকার বাসিন্দ মো. আব্দুর রউফ জানান, আমার ভাই পারিবারিক ঝগড়ার মামলায় কারাগারে রয়েছেন। তার জামিন করাতে এসে দেখি আদালতে বিচারিক কাজ নেই। আমার ভাই অনর্থক জেল খাটছেন। তিনি আরও বলেন, আদালতে যে সমস্যা হয়েছে, তার দ্রুত সমাধান করে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ লাঘব করা উচিত। মানুষ অনেক কষ্ট করে দূর-দূরান্ত থেকে আসেন। এভাবে কেবল তারিখ নিয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে। 
নামে প্রকাশে অনিচ্ছুক শহরের ভাদুঘর এলাকার এক বাসিন্দ বলেন, আমার ছেলে প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে জেলে রয়েছে। তার জামিন করাতে আদালতে এসেছিলাম। কিন্তু এসে দেখি আদালতে কার্যক্রম নেই। এখন বিনা বিচারে আমার ছেলে জেলে রয়েছে। 
এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মোহাম্মদ ফারুককে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ ও অশালীন আচরণ এবং স্লোগান দেওয়ার ঘটনায় ওই বারের ২১ আইনজীবীকে তলব করেছেন হাইকোর্ট। আগামী ২৩ জানুয়ারি তাদের হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।

×