ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক হোক চিরকালীন 

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর 

প্রকাশিত: ২০:২২, ১১ ডিসেম্বর ২০২২

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক হোক চিরকালীন 

উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান বলেছেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন এমন এক ক্যারিশমেটিক লিডার যাঁকে পৃথিবীর অন্যান্য গণতান্ত্রিক ও আধুনিকবোধসম্পন্ন মানুষ ও নেতৃবৃন্দ পছন্দ করবেন সেটিই ছিল স্বাভাবিক। 

ভারতীয় উপমহাদেশে গণতন্ত্র ও অর্থনৈতিক মুক্তি প্রতিষ্ঠার অনাগত পথে চিরকালীন বন্ধুত্ব নিয়ে দুটি রাষ্ট্র বাংলাদেশ ও ভারত বন্ধুপ্রতীম হয়ে এগিয়ে গেলে বিশ্ব এক নবতর প্রশান্তির পতাকার আশ্রয় খুঁজে পাবে। কেননা, আমাদের পতাকায় লাল সবুজের আচ্ছাদনে মানবমুক্তির আকাক্সক্ষা বিচ্ছুরিত হয় অহর্নিশ।

রবিবার রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরে কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে বাংলাদেশ স্বাধীনতা ফাউন্ডেশন মৈত্রী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপকের বক্তব্যে এসব কথা বলেন উপাচার্য ড. মশিউর রহমান।  

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু হিসেবে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে ভারতের অবদান চিরস্মরণীয়। বাংলাদেশ জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় নিরস্ত্র বাঙালির মুক্তি কামনার আন্দোলনে প্রতিটি মানুষকে দ্রোহী, সাহসী এবং প্রশিক্ষণসমেত এক বীরযোদ্ধা করে তুলতে ভারত যে সহায়তা করেছে তা উপমহাদেশের গণতন্ত্রের বাতায়নকে উজ্জ্বীবিত করেছে। আমাদের সংগ্রাম ছিল মুক্তি প্রতিষ্ঠা, গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের আর মানব মুক্তি প্রতিষ্ঠার। মানব মুক্তির সে মহাসংগ্রামে ভারত-বাংলাদেশ অটুট বন্ধুত্ব ও আস্থা প্রতিষ্ঠা করেছে। 

সেই ধারাবাহিকতায় আজও ভারত-বাংলাদেশ সম্মিলিত হয়ে, কাঁধে কাঁধ রেখে উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের জন্য অব্যাহত কাজ করে যাচ্ছে। এই সম্পর্ক চিরকালীন। আর সংগ্রাম ও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে জঙ্গিবাদ, ধর্মান্ধতা, সাম্প্রদায়িক আচরণ ও সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে।’  

তিনি আরও বলেন, ‘বাঙালির মুক্তির সংগ্রামের কঠিন-কঠোর নয় মাসের সশস্ত্র জনযুদ্ধে গ্রাম বাংলার সাধারণ মানুষ পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাস্ত করার লক্ষ্যে গেরিলা যুদ্ধ আত্মস্থ করলেন। যে তরুণ-যুবক-পরিণত বয়সের মানুষ যুদ্ধ বা অস্ত্র চালাতে জানতো না, সে হয়ে উঠলো গেরিলা যোদ্ধা। 

তার চোখ ভরা স্বপ্ন শত্রুকে পরাজিত করা আর প্রিয় দেশমাতৃকাকে মুক্ত করা। মুক্তির আকাঙ্খায় জাগ্রত কৃষক-শ্রমিক-জনতা যে সম্মিলিত জনযুদ্ধ গড়ে তুললো তার কাছে পরাভূত হলো পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী। সেইসঙ্গে পরাভূত হলো পাকিস্তানকে দেয়া সমর্থক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, মধ্যপ্রাচ্যসহ বাংলাদেশ বিনির্মাণবিরোধী আন্তর্জাতিক চক্র। সেই কঠিন দুঃসময় ও দুর্দিনে পৃথিবীর আরো বহু রাষ্ট্র ও জনগণের সঙ্গে আমাদের পাশে অকৃত্রিম বন্ধুত্ব, ভালোবাসা, আশ্রয় ও দায়িত্ব নিয়ে পাশে দাঁড়ালো আমাদের বহু পরীক্ষিত প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত। 

উপাচার্য বলেন, বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের লড়াইয়ে ভারত এক অকৃত্রিম বন্ধু। কোটি শরণার্থীকে শুধু আশ্রয় দেয়াই নয়, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণদান, মিত্রবাহিনী গঠন, যৌথভাবে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সামরিক লড়াই, বাংলাদেশের জন্য আন্তর্জাতিক মহলের সমর্থনের আদায়, অর্থনৈতিক সহায়তা, কোটি শরণার্থীকে ভরণ-পোষণের দায়িত্ব পালনসহ বাঙালির পাশে সেদিন ভারত নিবিড় বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। 

তিনি বলেন, ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী আমাদের মুক্তি সংগ্রামে অনন্য ভূমিকা পালন করেছেন। পৃথিবীর বহু রাষ্ট্রনায়ককে তিনি নিজে সচেষ্ট হয়ে বাংলাদেশের পক্ষে সমর্থন আদায়ের জন্য কাজ করেছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বগুণ ও শোষিত মানুষের জন্য তাঁর যে ভালোবাসা সে বিষয়ে ইন্দিরা গান্ধীর ছিল প্রবল শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। 

তিনি আরও বলেন, ‘বাঙালির স্বাধীনতার স্বপ্ন হাজার বছরের। এর গ্লানি ও বঞ্চনার বয়সও তদ্রুপ। অন্যের দ্বারা শাসিত বাঙালি মুক্তির আকাঙ্খায় লড়াই করেছে বহুবার, কিন্তু স্বাধীনতার স্বাদ গ্রহণ করতে সক্ষম হয়নি। এ অঞ্চলে নানাবিধ কৃষক আন্দোলন বঞ্চনাবোধ থেকে গড়ে উঠেছে ঠিকই, কিন্তু ন্যায্য দাবি থাকা সত্ত্বেও সেসব আন্দোলনের সম্পূর্ণ সুফল কৃষক সমাজ কখনোই পরিপূর্ণভাবে আদায় করতে পারেনি। 

বাংলাদেশ স্বাধীনতা ফাউন্ডেশনের আহ্বায়ক বিচারপতি মমতাজ উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক এমপি, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার শ্রী প্রনয় ভার্মা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য প্রফেসর ডা. মো. শহীদুল্লাহ সিকদার, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সাইদুর রহমান সজল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন বাংলাদেশ স্বাধীনতা ফাউন্ডেশনের সদস্য সচিব নারায়ণ সাহা মনি। 

 

এমএস

সম্পর্কিত বিষয়:

×