ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে বাঁশ শিল্পকর্ম

সংবাদদাতা, চাঁদপুর

প্রকাশিত: ১৭:০১, ৪ ডিসেম্বর ২০২২; আপডেট: ১৭:০৮, ৪ ডিসেম্বর ২০২২

পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে বাঁশ শিল্পকর্ম

বাঁশ শিল্পকর্ম

পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ থেকে বিলুপ্ত হতে চলেছে বাঁশ শিল্পকর্ম। বর্তমান বাজারে প্লাস্টিক পণ্যের  সঙ্গে পাল্লা দিয়ে টিকে থাকতে না পেরে হারিয়ে যেতে বসেছে এই শিল্প। তৈরি করা পণ্যের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ার কারণে কষ্টে  দিনাতিপাত করছেন এ শিল্পের সাথে জড়িত থাকা পরিবারগুলো। ধীরে ধীরে এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে বাঁশ শিল্পের কারিগররা ।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার পাইকপাড়া দক্ষিণ ও উত্তর, চর দুঃখীয়া (পূর্ব), রূপসা (উত্তর), ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে  কয়েক দশক ধরে প্রায় ৩ শতাধিক পরিবার বাঁশ শিল্পের সাথে জড়িত ছিল। এক সময় প্রচুর বাঁশ এ অঞ্চলে উৎপাদন হতো তা দিয়ে গৃহস্থ্যের গৃহকাজের চালুন,কুলা,মোড়া,বাজার করার খাড়ই (টোনা), মাটি কাটার বিড়া, চাল মাপার পুরা, মাছ ধরার পল্লা, চাষাবাদের জন্য চঙা, চাল ধোয়ার ঝাঁঝড়ি, ঝুড়ি, ঢাকনা তৈরি করতো। 

কালের বিবর্তনে বাজারে প্লাস্টিকের হরেক রকম পণ্য আসায় হারিয়ে যাচ্ছে এ শিল্পটি। একদিকে যেমন  বাঁশ উৎপাদন কমছে, অপরদিকে প্লাস্টিকের প্রতিযোগিতায় বাঁশের পণ্যগুলো টিকতেও পারছে না। ফলে এ শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলোতে নেমে এসেছে দুর্দিন। বেঁচে থাকার তাগিদে অনেকেই পেশা বদল করছেন। 

বর্তমানে মাত্র ২৫ থেকে ৩০ টি পরিবার এ শিল্পের সাথে কোনো রকমে টিকে রয়েছে। পুরুষের পাশাপাশি দু’শতাধিক নারীও এ শিল্পের সাথে  জড়িয়ে আছে। কাজ কমে যাওয়ায় অনেকটা বেকার হয়ে পড়ে।  

এ শিল্পের  তাহেরা বানু নামের এক গৃহবধূ জানান, বাঁশের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, পুঁজির অভাব , চাহিদা কম, পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি এবং পণ্য বিক্রি করতে গিয়ে বাজারে অতিরিক্ত খাজনা দিতে বাধ্য হওয়ায় এখন আর তেমন  লাভ হয় না। 

রামদাসের বাগ এলাকার আরিফ হোসেন, হারুন মিয়া, বিল্লাল হোসেনসহ বেশ কয়েকজন জানান, চাহিদা  কমে যাওয়া ,পুঁজির অভাব ও বাজারে অতিরিক্ত খাঁজনা দিয়ে লাভ হয় না। আমরা অতি কষ্টে চলছি। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে খুবই কষ্টে সংসার চালাতে হচ্ছে। আমাদের জন্য এ যেন মরার উপর খাড়ায় পরিণত হয়েছে।

সচেতন মহল মনে করছে,  এ শিল্পটি ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের অন্তর্ভুক্ত হলেও সরকারি কিংবা বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানেরই কোন উদ্যোগ নেই এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে। বিলুপ্ত প্রায় এ বাঁশ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে জরুরী ভিত্তিতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা,পরিকল্পনা,  প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা দরকার। একই সাথে এ পেশার সাথে জড়িতদের তালিকা প্রণয়ন পূর্বক  সে সঙ্গে সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করা উচিত। 

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তা তাসলিমুননেছা জানান, এ শিল্পের সাথে জড়িতদের খোঁজ নিয়ে জীবনমানের কথা চিন্তা করে পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে শিল্পটি টিকিয়ে রাখতে সংশ্লিষ্ট দপ্তর সমাজ সেবা ও যুব উন্নয়নকে উদ্যোগ নিতে বলবো।   

 

এমএস

×