ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কলাপাড়ায় ৯০ কিলোমিটার পাকা সড়কে খানা-খন্দ, দুর্ভোগ চরমে 

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, পটুয়াখালী

প্রকাশিত: ১২:১৫, ৩০ নভেম্বর ২০২২

কলাপাড়ায় ৯০ কিলোমিটার পাকা সড়কে খানা-খন্দ, দুর্ভোগ চরমে 

সড়কের বেহাল দশা। ছবি: জনকণ্ঠ

পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় ৯০ কিলোমিটার পাকা সড়কের চরম বেহাল দশা। খানা-খন্দে একাকার হয়ে গেছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) নির্মিত বিটুমিনাস কার্পেটিং এ সড়কের অধিকাংশ সিলকোট উঠে গেছে। 

বর্ষায় পানি জমে একাকার হয়ে যায়। অধিকাংশ সড়কের কার্পেটিংএর অস্তিত্ব পর্যন্ত নেই। বালু কাদামাটি বেরিয়ে গেছে। পাকা এ সড়কগুলো এখন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। 

প্রতিনিয়ত যানবাহন উল্টে দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে মানুষ। দীর্ঘদিন মেরামত না করার এসব সড়ক এখন ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে গেছে। তবে গ্রামের মানুষের দাবি, ছয় চাকার অবৈধ দৈত্যাকৃতির যান, হামজা কিংবা ট্রলি অতিরিক্ত মালামাল বোঝাই করে চলাচলের কারণে শুধু পাকা সড়ক নয়, আরও শত কিলোমিটার কাঁচা ও কয়েক কিলোমিটার হেরিংবন্ড রাস্তা ভেঙে গেছে। 

এলজিইডির তথ্য মতে, তিন মিটার প্রস্থ এক কিলোমিটার সড়ক পাকা করণে ৮০ লাখ থেকে সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা ব্যয় হয়। অথচ অবৈধ ছয় চাকার দৈত্যাকৃতির ওই যানের (ট্রলি-হামজা) চাকায় (নির্মাণের ৩-৬ মাসেই) পিস্ট হয়ে রাস্তাঘাট নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে সরকারের শত কোটি টাকার পাকা সড়ক ছাড়াও আরও ৫০ কোটি টাকার কাঁচা মাটির কিংবা ইটের রাস্তার সর্বনাশ করে হয়েছে। এসব রোধে নেই কোন পদক্ষেপ। ফলে সরকারের গ্রামীণ যোগাযোগের উন্নয়ন চিত্র বিবর্ণ হয়ে গেছে। সড়ক ধংসের এই ধারা অব্যাহত রয়েছে।

এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, কলাপাড়া উপজেলায় এলজিইডি নির্মিত পাকা-কাঁচা মোট সড়ক রয়েছে এক হাজার ৯৬৮ কিলোমিটার। এর মধ্যে উপজেলা সংযোগ সড়ক রয়েছে ১০টি, যার দৈর্ঘ্য ১২০ দশমিক ১৪ কিলোমিটার। ইউনিয়ন সংযোগ সড়ক রয়েছে ২৩টি। যার দৈর্ঘ্য ২২৯ দশমিক ৯৭ কিলোমিটার। গ্রামীণ গুরুত্বপুর্ণ সড়ক (এ টাইপ) রয়েছে ৫১টি।  যার দৈর্ঘ্য ২৪২ দশমিক ৮৬কিলোমিটার। গ্রামীণ কম গুরুত্বপুর্ণ ( বি-টাইপ) প্রত্যন্ত এলাকার সড়ক রয়েছে ৪৪৫টি। যার দৈর্ঘ ১৩৪৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে চার শ্রেণির সড়কের মধ্যে বিটুমিনাস কার্পেটিং (পাকা) সড়ক রয়েছে ৩০৪ দশমিক ৯৩ কিলোমিটার। এক শ’ সাত দশমিক ০৫ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে এইচবিবি। আরসিসি ও সিসি সড়ক রয়েছে প্রায় দুই কিলোমিটার। এছাড়া কাঁচা মাটির সড়ক রয়েছে এক হাজার ৫৫৪ দশমিক ৬১কিলোমিটার। ১২ টি ইউনিয়নের হিসাব এটি। 

এসব ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের মতে, ১২ ইউনিয়নের অন্তত ৯০ কিলোমিটার পাকা বিটুমিনাস কার্পেটিং সড়ক খুব খারাপ হয়ে গেছে। গেছে যান চলাচল অনুপযোগী। যার মধ্যে টিয়াখালী প্রায় ছয় কিমি, চাকামইয়া সাত কিমি, ধানখালীতে ১৪ কিমি, চম্পাপুরে সাড়ে তিন কিমি, লালুয়ায় চার, বালিয়াতলীতে ১০, ধুলাসারে নয়, মিঠাগঞ্জে আট, নীলগঞ্জে প্রায় সাত, মহিপুরে আড়াই, লতাচাপলীতে ১৬ এবং ডালবুগঞ্জ ইউনিয়নে সাড়ে তিন কিলোমিটার পাকা সড়ক ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে গেছে। 

এর মধ্যে হেরিংবন্ড ছাড়াও কাঁচা আরও এক শ’ কিলোমিটার সড়কের বেহাল দশা রয়েছে। বর্ষকালে হাটু সমান কাদা হয়ে গেছে। লালুয়ার অধিকাংশ সড়ক লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। এসব সড়ক পাকা না মাটির তা পর্যন্ত বোঝার উপায় নেই বলে জানালেন ইউপি চেয়ারম্যান শওকত হোসেন তপন বিশ্বাস। মানুষের চরম দুর্ভোগ হচ্ছে যোগাযোগের ক্ষেত্রে। 

কলাপাড়া এলজিইডির উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবুল হোসেন জানান, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে কলাপাড়ায় অন্তত ২২ কিলোমিটার পাকা সড়ক মেরামত করা হয়েছে। ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে আট কিলোমিটার সড়ক মেরামতের জন্য টেন্ডার করা হয়েছে। আরও প্রায় ১৫ কিমি সড়ক মেরামতের টেন্ডার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

তিনি আরও জানান, পর্যায়ক্রমে সড়কগুলো পাকাকরণ করার পাশাপাশি মেরামত করা হবে। সড়ক নষ্ট করতে না পারে এজন্য ছয় চাকার দৈত্যাকৃতির ওই যান হামজা কিংবা ট্রলি চলাচল বন্ধে তারা কলাপাড়া এবং মহিপুর থানার ওসিদ্বয়কে অনেক আগেই চিঠি দিয়েছেন। যা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। 
 

এসআর

সম্পর্কিত বিষয়:

×