ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

লন্ডনপ্রবাসী অনেকেই এসে গেছেন

সিলেটে শোডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি

শরীফুল ইসলাম

প্রকাশিত: ২৩:৪৪, ১৩ নভেম্বর ২০২২

সিলেটে শোডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি

৬ বিভাগে সফল সমাবেশের পর এবার সিলেটে শোডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি

৬ বিভাগে সফল সমাবেশের পর এবার সিলেটে শোডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। ১৯ নভেম্বর সিলেটের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে সমাবেশ করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী। ইতোমধ্যেই সিলেট বিভাগের সকল জেলা নেতাদের নিয়ে ভার্চুয়াল বৈঠক করেছেন দলীয় হাইকমান্ড। দু’একদিনের মধ্যে এ বিভাগের অধীন সকল উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গেও  বৈঠক করবেন কেন্দ্রীয় নেতারা। আগে অনুষ্ঠিত ৬ বিভাগের চেয়ে সিলেটের সমাবেশে বেশি লোকসমাগম করে চমক দেখাতে চান এই বিভাগের নেতারা। তাই সমাবেশের প্রস্তুতি নিয়ে দিনরাত দৌড়ঝাঁপ করছেন তারা।
সূত্র জানায়, বিএনপির প্রবাসী নেতাকর্মীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি লন্ডনে থাকেন। আর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও এখন লন্ডনে অবস্থান করছেন। তাই তারেক রহমানের নির্দেশে সিলেটের বিভাগীয় সমাবেশ সফল করতে লন্ডনপ্রবাসী অনেক নেতাকর্মী ইতোমধ্যেই দেশে চলে এসেছেন। সমাবেশের আগে আরও বেশ কিছু নেতাকর্মী দেশে এসে পৌঁছবেন। এভাবে তারা দেশে এসে সমাবেশ সফল করতে মাঠে সক্রিয় কাজ করছেন।
এদিকে সিলেট বিভাগের সমাবেশ সফল করতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ক’জন কেন্দ্রীয় নেতার পাশাপাশি সিলেটের অধিবাসী ও বিএনপি  চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, ড. এনামুল হক চৌধুরী, দলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন মিলন, নির্বাহী সদস্য আবুল কাহের শামীম, সিলেট মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুল কাইয়ুম জালালী পংকি ও সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম  চৌধুরীসহ বেশ ক’জন নেতা এখন দৌড়ঝাঁপ অব্যাহত রেখেছেন।
সিলেট বিভাগের সমাবেশ প্রস্তুতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিএনপি  চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির সাংবাদিকদের জানান, দেশের অন্যান্য বিভাগের মতো সব বাধা উপেক্ষা করে সিলেটের বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সমাবেশ সফল করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এতে চার লাখের বেশি মানুষ উপস্থিত থাকবেন বলে আমরা আশা করছি।
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে  দেশের জনগণ আজ ঐক্যবদ্ধ। তাই বিএনপির প্রতিটি সমাবেশ জনসমুদ্রে পরিণত হচ্ছে। ১৯ নভেম্বর সিলেট বিভাগীয় সমাবেশও জনসমুদ্রে পরিণত হবে। এই সমাবেশে বিএনপির বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের উপস্থিতি ঘটবে বলে আমরা আশাবাদী।
জ্বালানি তেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি, পুলিশের গুলিতে দলের ৫ কর্মী নিহত ও নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার প্রতিবাদে ও খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে ১২ অক্টোবর থেকে বিভাগীয় গণসমাবেশ কর্মসূচি শুরু করে বিএনপি। প্রথম গণসমাবেশ হয় চট্টগ্রামে। চট্টগ্রামের পর ১৫ অক্টোবর ময়মনসিংহ, ২২ অক্টোবর খুলনা, ২৯ অক্টোবর রংপুর, ৫ নভেম্বর বরিশাল ও সর্বশেষ ১২ নভেম্বর ফরিদপুরে গণসমাবেশ করে বিএনপি। এরপর ১৯ নভেম্বর সিলেট, ২৬ নভেম্বর কুমিল্লা, ৩ ডিসেম্বর রাজশাহী এবং সর্বশেষ ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে মহাসমাবেশ।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজপথে আন্দোলন জোরদার করতে নানামুখী কৌশল নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে ১০ বিভাগে সমাবেশ কর্মসূচি গ্রহণ করে দলটি। ইতোমধ্যেই ৬ বিভাগে সমাবেশ শেষ করেছে। বিভাগীয় সমাবেশগুলোকে টার্গেট করে সর্বস্তরে দলের নেতাকর্মীদের সক্রিয় করা হচ্ছে। বিশেষ করে ১০ ডিসেম্বর রাজধানী ঢাকার মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সারাদেশ থেকে বিপুল সংখ্যক দলীয় নেতাকর্মী জড়ো করে শক্তির মহড়া প্রদর্শন করে দেশের রাজনীতিতে ঘুরে দাঁড়াতে চায় বিএনপি।

দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজপথ দখলে নেয়ার চেষ্টা করছে। এ কারণে প্রায় ৩ মাসের বেশি সময় ধরে দেশব্যাপী লাগাতার কর্মসূচি পালন শেষে ১২ অক্টোবর থেকে নতুন উদ্যমে ১০ বিভাগে সমাবেশ কর্মসূচি পালন করছে।
জুলাই মাসের শেষ দিক থেকেই বিএনপি রাজপথ দখলে নেয়ার চেষ্টা হিসেবে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। প্রথমে রাজধানীকেন্দ্রিক কর্মসূচি পালন করলেও ২২ আগস্ট থেকে সারাদেশের তৃণমূল পর্যায়ে কর্মসূচি পালন করে। যেভাবে তারা ২০১৩ সালের কঠোর আন্দোলনের আগে তৃণমূল পর্যায়ে কর্মসূচি পালন জোরদার করেছিল এবারও সেভাবেই তৃণমূল থেকে আন্দোলন জোরদারের কৌশল নেয়।

ওই বছর ২৯ ডিসেম্বর যেভাবে সারাদেশ থেকে সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের ঢাকায় জড়ো করতে ‘রোড ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচির ডাক দিয়েছিল একইভাবে এবারও ১০ ডিসেম্বর ঢাকার মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সারাদেশ থেকে নেতাকর্মীদের জড়ো করতে চাচ্ছে।
আগে বিএনপি ঢিলেঢালাভাবে কর্মসূচি পালন করলেও তৃণমূল পর্যায়ে কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে ৫ জন কর্মী নিহত হওয়ার পর রাজপথের কর্মসূচি পালনে গতি বাড়ায়। এ ছাড়া দলের সর্বস্তরে গ্রুপিং-কোন্দল নিরসন করে কর্মসূচি সফল করার দিকে নজর দেয় বিএনপি হাইকমান্ড।

এ জন্য লন্ডন থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সারাদেশের সর্বস্তরের নেতাকর্মীর সঙ্গে বিভিন্ন মাধ্যমে নিয়মিত কথা বলছেন। এ ছাড়া প্রতি সপ্তাহে দলের স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে তারেক রহমান নিজে সংযুক্ত থেকে রাজপথে আন্দোলন জোরদারের কৌশল বাতলে দিচ্ছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, আপাতত এককভাবে পালন করা বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ কর্মসূচি শেষ করে অন্য দলগুলোকে নিয়ে দেশব্যাপী যুগপৎ আন্দোলন শুরু করার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে টার্গেট করে সরকারকে চাপে ফেলতে এবার আটঘাট বেঁধে মাঠে নামতে চায় বিএনপির নেতৃত্বে ডান, বাম ও মধ্যপন্থী প্রায় আড়াই ডজন দল। এ জন্য তাদের প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। যুগপৎ এ আন্দোলন দেশের সব রাজনৈতিক দলের জন্য উন্মুক্ত থাকলেও কৌশলগত কারণে আপাতত ফ্রন্টলাইনে থাকছে না জামায়াত। আন্দোলনের কৌশল চূড়ান্ত করতে সমমনা দলগুলোর সঙ্গে বিএনপির দ্বিতীয় দফা সংলাপ প্রায় শেষ প্রান্তে। এ মাসের মধ্যেই বিএনপি সমমনা দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শেষ করতে চায়। তবে তার আগে ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশ সফল করতে বেশি মনোযোগী বিএনপি নেতারা।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আমরা আন্দোলন করছি। আন্দোলনের অংশ হিসেবে ১০ বিভাগে গণসমাবেশ করছি। নির্দলীয় সরকার ছাড়া আমরা নির্বাচনে যাব না। কারণ, দলীয় সরকারের অধীনে দেশে কোন নির্বাচন হবে না। এ সরকারকে বিদায় করেই আমরা নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেব। যে নির্বাচনে দেশের মানুষ তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবেন।

×