ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

অত্যাধুনিক মানের গ্রন্থাগার পাচ্ছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

ইমন মাহমুদ

প্রকাশিত: ০১:০০, ১ অক্টোবর ২০২২; আপডেট: ১৩:১৬, ১ অক্টোবর ২০২২

অত্যাধুনিক মানের গ্রন্থাগার পাচ্ছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নব নির্মিত গ্রন্থাগার ভবন

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) বর্তমান কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারটির মূল ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৯৮৫ সালে। এ সময় গ্রন্থাগারের নির্মাণে আয়তন নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ বর্গফুট। কিন্তু বাজেট স্বল্পতার কারণে ৫৫ হাজার বর্গফুটের নির্মাণকাজ সম্পন্ন করা হয়। আর বাকি ৪৫ হাজার বর্গফুট নির্মাণকাজ পরবর্তীতে সম্পন্ন করার কথা থাকলেও তা আর বাস্তবায়িত হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগলেও শিক্ষার্থীদের জন্য নির্মিত একমাত্র কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারটি প্রতিষ্ঠার ৩৭ বছরেও রয়ে গেছে অপূর্ণাঙ্গ। এর মধ্যে বেড়েছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সংখ্যা। ফলে গ্রন্থাগারের আসন সঙ্কটের কারণে দীর্ঘদিন ধরেই শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ পাচ্ছে না শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ায় বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই হলে থাকেন। তবে অধিকাংশ হলে রিডিং রুম না থাকায় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের ওপরই নির্ভর করতে হয় তাদের। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, গ্রন্থাগারে এসে পর্যাপ্ত আসন না থাকায় ফিরে যান তারা। এ ছাড়া নামে আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হলেও প্রথম বর্ষে শিক্ষার্থীদের হলের গণরুমে থাকতে হয়। ফলে গ্রন্থাগারে আসন সঙ্কট ও হলে রিডিং রুম না থাকায় পরীক্ষায় ফল খারাপ হচ্ছে হলের গণরুমে অবস্থানরত প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের।


সরেজমিনে গ্রন্থাগার ঘুরে দেখা যায়, তিনতলা ভবনের গ্রন্থাগারটিতে ৮৪টি ডেস্ক এবং টেবিলে ৩৬৩টিসহ সর্বমোট ৪৪৭টি আসন রয়েছে। তবে বর্তমানে এই আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষ (স্নাতক সম্মান) থেকে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত ১৪ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। তার প্রেক্ষিতে প্রতি ৩২ জন শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছে মাত্র একটি আসন। এর বাইরেও চাকরি প্রত্যাশী অনেক সাবেক শিক্ষার্থী নিয়মিত গ্রন্থাগারটি ব্যবহার করছেন। ফলে গ্রন্থাগারে এসে বসার আসন না পেয়ে প্রায়ই ফিরে যাচ্ছেন নিয়মিত শিক্ষার্থীরা।
তবে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা আসন সঙ্কট, পর্যাপ্ত বই সঙ্কট, অত্যাধুনিক সুবিধা না থাকাসহ বিভিন্ন সঙ্কট নিরসনে নতুন গ্রন্থাগার ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। চলমান ‘অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের’ অধীনে নির্মিত হবে পাঁচতলা বিশিষ্ট অত্যাধুনিক মানের গ্রন্থাগার।
নতুন এই গ্রন্থাগারে যেসব সুবিধা থাকছে : প্রকল্পের প্রধান ডিজাইনার বুয়েটের সহযোগী অধ্যাপক শেখ আহসানউল্লাহ মজুমদারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পাঁচতলা বিশিষ্ট আড়াই লাখ বর্গফুটের এই গ্রন্থাগারে একসঙ্গে পড়তে পারবে প্রায় ছয় থেকে সাত হাজার শিক্ষার্থী। সমাবেশ থাকবে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন রেফারেন্স বই ও জার্নালের। বিশেষ সুবিধা সংবলিত ব্যবস্থা থাকবে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য।

থাকবে স্টুডিও, অডিও ভিজুয়াল সেন্টার, ভিডিও রেকর্ডিং স্টুডিও, ভিডিও রেফারেন্স সেকশন, আর্ট গ্যালারি, কনফারেন্স রুম, সেমিনার রুম ও গ্রুপ ডিসকাশন রুম।  এ ছাড়াও ক্যাফে, লাউঞ্জ এবং ৩০টি বিশ্রমাকক্ষের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। নির্মিতব্য এই গ্রন্থাগারে থাকছে প্রায় ৩ লাখ বই রাখার সক্ষমতা।
এই লাইব্রেরির নিচ তলায় থাকবে কেন্দ্রীয় সার্ভিস বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয় প্রেস, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, সেমিনার রুম ও কনফারেন্স রুম। দ্বিতীয় তলায় থাকবে পাঠ্যবই ও রেফারেন্স বই, নিউজপেপার, ম্যাগাজিন ডিসপ্লে,  একাডেমিক তথ্য ও রেকর্ড সংবলিত বই, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ বই ও শিশু শিক্ষার্থীদের জন্য বই, সাধারণ রিডিং রুম একটি সায়েন্স রিডিং রুম ও ওপেন রিডিং স্পেস যেখানে খাদ্যসহ শিক্ষার্থীরা প্রবেশ করতে পারবে।

তৃতীয় তলায় থাকবে রিসার্চ সেকশন, জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটি প্রেস, সাহিত্য বিভাগ ও রেফারেন্স বইয়ের রিডিং রুম, গবেষকদের কক্ষ, গ্রুপ ডিসকাশনের জন্য কক্ষ। এই তলায় ভিডিও রেফারেন্স সেকশন থেকে শিক্ষার্থীরা বিশ্বের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার ব্যবহার করার সুযোগ পাবেন। পড়তে পারবেন তাদের প্রকাশিত জার্নালসমূহ।
এ ছাড়াও এই তলায় একটি ডিজিটাল ম্যাপিং সিস্টেম ল্যাব থাকবে। চতুর্থ তলায় থাকবে একটি সমৃদ্ধ আর্কাইভ।
উপাচার্য অধ্যাপক মোঃ নূরুল আলম বলেন, ‘একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য মানসম্পন্ন গ্রন্থাগার অত্যন্ত জরুরী। নতুন গ্রন্থাগার ভবনের কাজটি সম্পন্ন হলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আধুনিক সকল সুযোগ-সুবিধাসহ নানাভাবে উপকৃত হবে। নতুন গ্রন্থাগারটিতে বর্তমানটির চেয়ে প্রায় ৬-৭ গুণ বেশি শিক্ষার্থী বসে পড়াশোনা করতে পারবে।’

×