ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আড়াই শ’ বছরের ঐতিহ্য

উপমহাদেশের বৃহত্তম দুর্গা মন্দিরে চলছে পূজার প্রস্তুতি

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল

প্রকাশিত: ২১:৪১, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২

উপমহাদেশের বৃহত্তম দুর্গা মন্দিরে চলছে পূজার প্রস্তুতি

প্রয়াত জমিদার মোহন লাল সাহার বাড়িতে অবস্থিত এ দুর্গা মন্দির

প্রায় আড়াইশ’ বছরের ঐতিহ্য নিয়ে এখনও প্রতিবছর মহা ধুমধামের সঙ্গে সার্বজনীন শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে তৎকালীন উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ দুর্গা মন্দিরে। বরিশালের গৌরনদী পৌর সদরের আশোকাঠি মহল্লার প্রয়াত জমিদার মোহন লাল সাহার বাড়িতে অবস্থিত এ দুর্গা মন্দিরের রয়েছে অসংখ্য অজানা ইতিহাস ও অলৌকিক ঘটনা। আর মাত্র কয়েকদিন পরেই প্রতিবছরের ন্যায় এবারও জমিদারের উত্তরসূরিদের নিজস্ব অর্থায়নে আয়োজিত দুর্গাপূজায় হাজারো ভক্তের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠবে পুরো মন্দির প্রাঙ্গণ। এমনটাই আশা করছেন প্রয়াত জমিদারের নাতি প্রভাষক রাজা রাম সাহা।
জমিদার মোহন লাল সাহার ছেলে সঙ্গীতজ্ঞ প্রয়াত মানিক লাল সাহা ও তার স্ত্রী স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী অরুণা সাহার ছেলে প্রভাষক রাজা রাম সাহা জানান, তৎকালীন ভারতীয় উপমহাদেশের মধ্যে সর্ববৃহৎ মন্দির হিসেবে এ মন্দিরটিতে ভক্ত দর্শনার্থীরা পূজা অর্চনা করতে ভিড় করতেন। প্রায় ২০ ফুট উচ্চতার দুর্গা প্রতিমার এ মন্দিরটিতে এখনও পূর্বের ঐতিহ্য ধরে রাখা হয়েছে। ৪০ গজ দৈর্ঘ্য ও ৩০ গজ প্রস্থ মন্দিরটিতে রয়েছে ৪৫টি স্তম্ভ।

১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাক হানাদার ও তাদের স্থানীয় সহযোগী রাজাকাররা জমিদার বাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক লুটপাট করেছিল। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছিল পাইক পেয়াদাদের ঘরবাড়ি। গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছিল দুর্গা মন্দিরের অসংখ্য কারুকার্য খচিত অলঙ্করণ। গৌরনদী উপজেলা সদর থেকে প্রায় এক হাজার ফুট দূরত্বে আড়িয়াল খাঁ নদের প্রশাখা গৌরনদী-মীরেরহাট নদীর তীরে আশোকাঠি মহল্লায় জমিদার মোহন লাল সাহার বাড়ি। বাড়ির সামনেই রয়েছে শান বাঁধানো সুবিশাল দীঘি। জমিদার থাকতেন প্রসন্ন ভবনে। বাড়ির প্রবেশ দ্বারে প্রাচীনতম সুবৃহৎ দুর্গা মন্দিরে আজও ভক্তরা পূজা অর্চনা করে আসছেন।
জমিদারের নাতনি ও প্রয়াত সঙ্গীতজ্ঞ মানিক লাল সাহার মেয়ে লেখিকা এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আইভি সাহা বলেন, বংশ পরম্পরায় কালের গণ্ডি পেরিয়ে আজও প্রথা ও নিয়মরীতি অনুযায়ী জমিদার বাড়ির দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এ পূজাতে ১০৮টি লাল পদ্ম ফুল, ১০৮টি মাটির প্রদীপসহ আরও অসংখ্য নিয়ম পারিবারিকভাবে প্রচলিত রয়েছে। আমাদের এই বাড়ির পূজাকে কেন্দ্র করে একসময় বাড়ির বড় জায়গাজুড়ে মেলা বসত। সেসব এখন গল্প এবং ইতিহাস হয়ে গেছে। কলকাতার অনেক বনেদি পরিবারের নিয়মের মতো আমাদের বাড়িতেও আষাঢ় মাসের রথযাত্রার দিন মন্দিরে দেবীকে নতুন করে বানানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়।

×