ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকা থেকে ট্রেনে দার্জিলিং ও শিলিগুড়ি যাতায়াতে মিতালি এক্সপ্রেস প্রস্তুত

প্রকাশিত: ১৫:৪৮, ২১ মে ২০২২

ঢাকা থেকে ট্রেনে দার্জিলিং ও শিলিগুড়ি যাতায়াতে মিতালি এক্সপ্রেস প্রস্তুত

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী ॥ এবার ঢাকা থেকে সরাসরি দার্জিলিং ও শিলিগুড়ি ট্রেন ভ্রমনের পথ চালু হতে যাচ্ছে। পর্যটকদের জন্য এই পথটি যাতায়াতের জন্য অত্যান্ত সহজ হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া নামের আন্তঃদেশী মিতালি এক্সপ্রেসের ট্রেনের হুইসেল এবার বাজতে যাচ্ছে। ট্রেনটির চাকা চলতে যাচ্ছে আগামী পহেলা জুন হতে। ট্রেনটির প্রথম যাত্রা শুরু হবে ভারতের পশ্চিমবাংলার উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ি শহরের নিউ জলপাইগুড়ি (এনজিপি) স্টেশন হতে। মিতালি এক্সপ্রেস ১ জুন ভারতের কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব ও বাংলাদেশের রেলমন্ত্রী এ্যাডঃ নুরুল ইসলাম সুজন ভার্চুয়াল লঞ্চের পর নিউ জলপাইগুড়ি থেকে যাত্রা শুরু করবে। বাংরাদেশের নীলফামারীর চিলাহাটি ও ভারতের হলদিবাড়ি রেলপথে ১৯৬৫ সালের ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দার্জিলিং মেইল ট্রেনটি চলাচল করেছিল। এরপর পাক ভারত যুদ্ধের সময় তা বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ প্রায় ৫৮ বছর পর এই রেলপথে পুনরায় যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলকে কেন্দ্র করে দুই বাংলায় সাজসাজ রব শুরু হয়েছে।বাংলাদেশ রেলওয়ে বলছে ঢাকা থেকে পশ্চিমবঙ্গের নিউ জলপাইগুড়ি রুটে ট্রেন চলাচল নিয়ে প্রস্তুতি চলছে। ভিসা ইমিগ্রেশন ও কোভিড সংক্রান্ত প্রটোকল চূড়ান্ত করেছে উভয় দেশ। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ট্রেনে যাতায়াতের জন্য ভিসা সংক্রান্ত ছাড়পত্র দেয়ায় বাংলাদেশস্থ ভারতীয় দুতাবাস ও ভারতস্থ বাংলাদেশ দুতাবাস ভিসা দেয়া শুরু করেছে। এই ট্রেনের টিকেট পাওয়া যাবে বাংলাদেশ অংশে ঢাকার কমলাপুর, চট্রগ্রাম, নীলফামারীর চিলাহাটিস্টেশনে। ভারতের অংশে টিকেট মিলবে কলকাতার ফেয়ারলী প্যালেস ও নিউজলপাইগুড়ি স্টেশনে।ঢাকা থেকে নিউ জলপাইগুড়ি পর্যন্ত মিতালি এক্সপ্রেসের রেলপথ দূরত্ব ৫৯৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে ভারতের অংশে ৬৯ কিলোমিটার। মিতালি এক্সপ্রেস বাংলাদেশের ঢাকা থেকে ছাড়বে সপ্তাহে দুদিন সোমবার ও বৃহস্পতিবার আর ভারতের নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে ছাড়বে রবিবার ও বুধবার। ট্রেনটি ভারতের নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ছাড়বে দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে, ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে পৌঁছাবে রাত ১০টা ৩০ মিনিটে। একইভাবে ঢাকা থেকে ছাড়বে রাত ৯টা ৫০ মিনিটে, ভারতে পৌঁছাবে পরের দিন সকাল ৭টা ৫ মিনিটে। ট্রেনটি দিনের বেলা ৪৫৬ আসন নিয়ে এবং রাতে ৪০৮ আসন নিয়ে চলাচল করবে।নিউ জলপাইগুড়ি থেকে হলদিবাড়ী হয়ে নীলফামারীর চিলাহাটি সীমান্ত পার হবে মিতালী। এরপর বাংলাদেশের চিলাহাটি, নীলফামারী, পার্ব্বতীপুর, হিলি, সান্তাহার নাটোর, ঈশ্বরদী বাইপাস ও বঙ্গবন্ধু সেতু পার হয়ে ট্রেনটি ঢাকায় পৌঁছাবে।একইভাবে ট্রেনটি নিউজলপাইগুড়ি পৌছবে। মিতালি এক্সপ্রেস ট্রেনে থাকছে ১০টি তাপানুকূল কোচ। এরমধ্যে চারটি করে মোট আটটি এসি ফার্স্ট ক্লাস ও এসি চেয়ারকার কোচ থাকবে। বাকি দুটি জেনারেটার ও ব্রেক আপ ভ্যান থাকবে। এসি বার্থের জন্য নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট পর্যন্ত ভ্রমনকর সহ ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ হাজার ৯০৫ টাকা, এসি চেয়ারকারের ভাড়া ৩ হাজার ৮০৫ টাকা। ৫ বছর পর্যন্ত অপ্রাপ্তবয়ষ্কদের জন্য মূল ভাড়ার ৫০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হয়েছে।মালামাল বহনের সম্ভাব্য খরচে রয়েছে ৫ বছরের কম বয়সী যাত্রীর ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২০ কেজি ওজনের মালামাল বিনামূল্যে বহন করা যাবে। ২০ কেজির উপরে কিন্তু ৩৫ কেজির নিচে ওজন হলে প্রতি কেজিতে ২ ডলারের সমপরিমাণ টাকা এবং ৩৫ কেজির উপরে ওজন হলে প্রতি কেজিতে ১০ ডলারের সমপরিমাণ টাকা অতিরিক্ত যুক্ত হবে। আবার প্রাপ্ত বয়সের যাত্রীর ক্ষেত্রে–সর্বোচ্চ ৩০-৩৫ কেজি ওজনের মালামাল বিনামূল্যে বহন করা যাবে। এর বেশি ওজনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃক নির্ধারিত হারে অতিরিক্ত খরচ যুক্ত হবে। ২০২১ সালের ২৭ মার্চ এই ট্রেন সার্ভিস উদ্ধোধন করেছিলেন দুই দেশের প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদী। উদ্ধোধন হয়ে থাকা ট্রেনটি কোভিড-১৯ এর কারণে চলাচল করতে পারেনি।পহেলা জুন এবারই প্রথম যাত্রী পরিবহন করতে যাচ্ছে ট্রেনটি।ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন কার্যালয় থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (পশ্চিম) অসীম কুমার তালুকদার বলেছেন, ভিসা সহ অন্যান্য যে সকল জটিলতা ছিল তার অবসান হওয়ায় ঢাকা- নিউজলপাইগুড়ি ট্রেন চলাচলের সকল প্রস্তুতি আমরা গ্রহন করেছি।বাংলাদেশে রেলের কোচ সংকটের কারনে আপাতত মিতালি এক্সপ্রেস ট্রেনটি ভারতীয় রেকে (কোচ) চলাচল করবে। মিতালী এক্সপ্রেস এর নম্বর করা হয়েছে ভারত থেকে আসার সময় ৩১৩১ ও ঢাকা থেকে যাওয়ার সময় ৩১৩২। তিনি আরও জানান মিতালির পাশাপাশি করোনাভাইরাসের কারণে দুই বছরের বেশি সময় বন্ধ থাকার পর ২৯ মে চালু হবে ঢাকা কলকাতা মৈত্রী ও খুলনা-কলকাতা বন্ধন এক্সপ্রেস। প্রকাশ থাকে যে, করোনাভাইরাসের কারনে মৈত্রী ও বন্ধন এক্সপ্রেস ২০২০ সালে ১৫ মার্চ থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর করোনার সংক্রমণ মাথায় নিয়ে উদ্বোধন হওয়া মিতালী যাত্রাই শুরু করতে পারেনি। সব মিলিয়ে টানা দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ থাকে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ট্রেন চলাচল। করোনা সংক্রমণ কমে আসার পর গত ২২ ফেব্রুয়ারি ইন্ডিয়ান রেলওয়েকে চিঠি দেয় বাংলাদেশ রেলওয়ে। সেখানে বাংলাদেশ রেল চলাচলের জন্য প্রস্তুত বলে জানানো হয়। ওই চিঠির জবাব ১৭ মে পাঠায় ইন্ডিয়ান রেলওয়ে। এর পরিপ্রেক্ষিতেই রেলগুলো ফের চলাচলের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
×