ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

দেশের মানুষ ভালো থাকলে ফখরুল সাহেবদের মন খারাপ থাকে : সেতুমন্ত্রী

প্রকাশিত: ২১:৩১, ১৯ মে ২০২২

দেশের মানুষ ভালো থাকলে ফখরুল সাহেবদের মন খারাপ থাকে : সেতুমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর ॥ বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি বলেছেন, পদ্মা সেতু হয়ে গেছে মানুষ খুশি, কিন্তু ফখরুল সাহেবের মন খারাপ। দেশের মানুষ ভাল থাকলে ফখরুল সাহেবদের মন খারাপ হয়ে যায়। পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শতভাগ সততার সঙ্গে শেষ হয়েছে। বিশ্ব ব্যাংক নিজেরাও স্বীকার করেছে পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে সরে গিয়ে তারা ভুল করেছে। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার সাহস ও সততার সোনালী ফসল এই পদ্মা সেতু। বাংলাদেশের সামর্থের স্মারক এই পদ্মা সেতু। বাঙালি জাতির স্বপ্ন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল তথা সারাজাতির স্বপ্ন পদ্মা সেতু। পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংক আমাদেরকে অপবাদ দিয়ে বঙ্গবন্ধু পরিবারকে হেনস্তা করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, সজিব ওয়াজেদ জয়, পুতুল, ববিসহ সবাইকে এই পদ্মা সেতুর জন্য হেনস্তা হতে হয়েছিল। অথচ পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আগামি জুন মাসে পদ্মা সেতুতে গাড়ি চলাচল করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিগগিরই সময় দেবেন। আমরা সময়মতো পদ্মা সেতু উদ্বোধনের তারিখ সেতু বিভাগ থেকে প্রেস কনফারেন্স করে সমগ্র জাতিকে জানিয়ে দেব। মন্ত্রী বৃহস্পতিবার দুপুরে শহরের রাজবাড়ি মাঠে গাজীপুর জেলা আওয়ামলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে ঢাকা থেকে ভার্চুয়ালী বক্তব্যে এসব কথা বলেন। আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কৃষি মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক এমপি সকাল ১১টায় সম্মেলন উদ্বোধন করেন। গাজীপুর জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আ.ক.ম মোজাম্মেল হক এমপি’র সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন সবুজ এমপি’র সঞ্চালনায় সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ মির্জা আজম এমপি, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মোঃ জাহিদ আহসান রাসেল এমপি, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি, শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক মোঃ সিদ্দিকুর রহমান, সদস্য মোঃ আনোয়ার হোসেন, মোঃ সাহাবুদ্দিন ফরাজী, মোঃ ইকবাল হোসেন অপু এমপি, মোহাম্মদ সাইদ খোকন, সিমিন হোসেন রিমি এমপি, মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমতউল্লাহ খান, অধ্যাপিকা রুমানা আলী টুসি এমপি, জেলা পরিষদের প্রশাসক আখতারউজ্জামান, মহানগর আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আতাউল্লাহ মন্ডল প্রমুখ। মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর ছয় বছর নির্বাসনে ছিলেন দেশরত্ন শেখ হাসিনা এবং বঙ্গবন্ধুর আরেক কন্যা শেখ রেহানা। ছয় বছর পর আওয়ামীলীগ যখন কলহ কোন্দলে জর্জরিত, তখন ঐক্যের প্রতিক হয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে সর্বসম্মতভাবে আওয়ামীলীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। ছয় বছর পর অনেক বাধা বিপত্তি, অনেক প্রতিবন্ধকতা, অনেক প্রতিরোধ ও স্বৈর শাসকের বাঁধার মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা বাংলার মাটিতে পদার্পণ করেছিলেন। তিনি দেশে পদার্পন করেছিলেন বলেই আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রত্যাবর্তন আমরা ফিরে আসতে দেখলাম। তার প্রত্যাবর্তনে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের সংগ্রামের সূচনা আমরা দেখলাম। তিনি সারা বাংলায় ঘুরে ঘুরে অবরুদ্ধ গণতন্ত্রকে শৃঙ্খলমুক্ত করতে গণতন্ত্র সংগ্রামের ডাক দিয়েছিলেন। তিনি দেশে এসেছিলেন বলেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মূল্যবোধ, ফিরে এসেছে ‘জয়বাংলার’ জয়ধ্বনি, আবারো ফিরে এসেছে নিষিদ্ধ ৭ই মার্চের ভাষণ। শেখ হাসিনা প্রত্যাবর্তন করেছিলেন বলেই অবরুদ্ধ গণতন্ত্র তার নেতৃত্বে শৃঙ্খলমুক্ত হয়েছে। ওবায়দুল কাদের এমপি আরো বলেন, পদ্মা সেতুর এত ব্যয় নিয়ে ফখরুল সাহেব এত কথা বলেন। খরস্রোতা পদ্মা নদীতে ফেরি চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়। অ্যামাজানের মতো পদ্মা নদীর খরস্রোতা আর কোন নদীতে নেই। আগে পদ্মা পার হতে দুই থেকে আড়াই ঘন্টা সময় লাগত। এখন ৬ থেকে ৭ মিনিটের মধ্যে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার পদ্মা সেতু পার হওয়া যাবে। অথচ পদ্মা সেতুর কাজ শুরু করাই ছিল এক দুষ্কর ব্যাপারে। একদিকে কাজ শুরু করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে আবার পেছন দিকে ভাঙ্গে। তিনি বলেন, যাদের ব্যার্থতাই গত ১৩ বছরের ইতিহাস। আন্দোলন আর আন্দোলন দেখতে দেখতে তের বছর, আন্দোলন হবে আর কোন বছর? আন্দোলনে ব্যর্থ, নির্বাচনে ব্যর্থ, বিএনপি এখন পদ্মা সেতু দেখে গাত্রদাহ হচ্ছে। আজকে বিআরটি হয়ে যাচ্ছে, মেট্রোরেল হয়ে যাচ্ছে, কর্ণফুলি শেখ মুজিবুর রহমান ট্যানেল হয়ে যাচ্ছে। সামনে ভোট বিএনপির মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে, আওয়ামীলীগ বিরোধীদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। অকথ্য ভাষা, অপপ্রচার করছে। যারা অপবাদ দেয় তাদেরকে বিশ্বব্যাংকের দিকে তাকাতে বলি। বিশ্ব ব্যাংক নিজেরাও স্বীকার করেছে পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে সরে গিয়ে তারা ভুল করেছে। বিআরটিসহ দেশের মেগা প্রকল্প নিয়ে সেতুমন্ত্রী আরো বলেন, বিআরটি প্রকল্প চলাকালে আমি জানি গাজীপুর থেকে ঢাকা পর্যন্ত অনেক ভোগান্তি হয়েছে। গাজীপুর থেকে ঢাকা যাতায়াতে তিন থেকে পাঁচ ঘন্টা সময় লেগেছে। আমি আপনাদেরকে আশ্বস্ত করতে চাই বিআরটি’র ৭৫ ভাগ কাজ শেষ হয়ে গেছে। বাস র্যাপিড ট্রানজিটের নিচের দিকে আর দুর্ভোগ হওয়ার সুযোগ নাই। আমরা খুব কাছাকাছি এসে গেছি, কাজ সমাপ্তের পথে। আপনারা হাফ এন আওয়ারের মধ্যে ঢাকা থেকে গাজীপুর চলে আসবেন। তিনি আগামি নির্বাচন ও জাতীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে গাজীপুরের নেতৃবৃন্দকে অন্তঃকলহ বিরোধ মিটিয়ে ঐক্যবব্ধ হওয়ার আহবান জানিয়ে বলেন এভাবেই আমরা বিজয়ের দ্বারপ্রান্ত পৌঁছাতে পারবো। অনুষ্ঠানের প্রধান বক্তা মির্জা আজম এমপি আওয়ামী লীগের ৭৪ বছরের আন্দোলন সংগ্রামের বীরত্বগাঁথা উল্লেখ করে বলেন, আগামী নির্বাচনে আওয়ামীলীগ পরাজিত হলে প্রধানমন্ত্রী হবেন সেই কসাই তারেক রহমান। এ বিএনপি জামাত জোট ক্ষমতায় আসলে একদিনে এক লক্ষ মানুষকে হত্যা করবে। তাই আমাদের নিজেদের প্রয়োজনে, নিজেদের জীবন বাঁচানোর জন্যে এই দেশকে উন্নত দেশ করার স্বার্থে শেখ হাসিনাকে আবারও প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করতে হবে। দীর্ঘ ১৯ বছর পর বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে গাজীপুরের ভাওয়াল রাজবাড়ি মাঠে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে এ সম্মেলন উদ্বোধন করেন কৃষি মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। এর আগে গাড়ি বোঝাই করে জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও এলাকা থেকে বাদ্য বাজিয়ে প্রিয় নেতাদের ছবিযুক্ত ব্যানার ও পোস্টার বহন করে দলের নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে সম্মেলন স্থলে পৌঁছেন। মুহুর্তে গাজীপুর নগরী লোকারণ্য হয়ে যায় এবং মিছিলে মিছিলে এলাকা প্রকম্পিত হয়ে উঠে। দুপুর হওয়ার আগেই সম্মেলনস্থল মানুষে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়।
×