
স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ শিশু শিক্ষা ও আনন্দ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। শিশুর গ্রহণ উপযোগী আনন্দঘন পরিবেশে শিক্ষাদানই হলো প্রকৃত শিক্ষা। আর এই শিশু শিক্ষায় সৃজনশীলতা নিয়ে নিরবে নিভৃতে কাজ করে চলেছেন যশোরের এক কৃতিসন্তান ইবাদ আলী। নামের পূর্বে কৃষিবিদ যোগ করা থাকলেও তিনি একজন শিক্ষাবিদ ও গবেষক। গণশিক্ষা ও শিশু শিক্ষার মডেল, শিশুতোষ পাঠ্য বইয়ের পর এবার তিনি উদ্ভাবন করেছেন শিশুদের জন্যে বিশেষায়িত জ্যামিতি বক্স। লাল সবুজের পতাকার রঙে আয়তাকার এই জ্যামিতি বক্স থেকে শিশুরা খেলার ছলে জ্যামিতি, অংকসহ বাংলা ইংরেজি বর্ণমালাও শিখতে পারবে।
সাধারণ জ্যামিতি বক্সে কাঁটা কম্পাস, চাঁদা, ছোট স্কেল ও কিছু ত্রিভুজ থাকে। এসব উপকরণ ব্যবহার করতে শিক্ষার্থীদের মুখস্থ বিদ্যার উপর নির্ভর করতে হয়। এতে শিশুদের চিন্তাজগতের বিকাশ, ভাষাগত ও দক্ষতার উন্নয়ন সম্ভব নয় বলে মনে করেন ইবাদ আলী। শিশুদের সৃজনশীল ভাবনার জগতকে সম্প্রসারিত করতে তিনি যে জ্যামিতি বক্স উদ্ভাবন করেছেন তাতে আছে বিশেষ মাপের ২২টি কাঠি। এটিই জাদুর কাঠি হয়ে ব্যবহৃত হবে শিখন পদ্ধতিতে। খেলার ছলে এই কাঠি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ব্যবহার করেই শিশুরা নিজেদের সুপ্ত মেধার বিকাশ ঘটানোর পাশাপাশি রপ্ত করবে জ্যামিতির নানা অনুসঙ্গ। বিন্দু, রেখা, সরল রেখা, বক্ররেখা, সমান্তরাল রেখা, তীর, ভেক্টর রেখা, কোণ, সমকোণ, সুক্ষ্ম কোণ, স্থুল কোণ, প্রবিদ্ধ কোণ, একান্তর কোণ, অনুরূপ কোণ, বিপ্রতীপ কোণ, সরল কোণ, সন্নিহিত কোণ, পূরক কোণ, সম্পূরক কোণ, ত্রিভুজ, সমকোণী ত্রিভুজ, সুক্ষ্ম কোণী ত্রিভুজ, স্থুলকোণী ত্রিভুজ, সমবাহু ত্রিভুজ, সমদ্বিবাহু ত্রিভুজ, বিসমবাহু ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, বর্গ, রম্বস, আয়তক্ষেত্র, কর্ণ, সান্তরিক, ট্রাপিজিয়াম, বৃত্ত, কেন্দ্র, ব্যাস, ব্যাসার্ধ, ভূমি, লম্ব, অতিভুজ, বৃত্তচাপ বৃত্তের স্পর্শক, ছেদক, জ্যা নিজেরাই তৈরি করতে এবং সহজে মনে রাখতে পারবে। শুধু কি জ্যামিতি ? এই কাঠি ব্যবহার করে শিশুরা বাংলা বর্ণমালার সবগুলো বর্ণ নিজেই খেলার মাধ্যমে তৈরি করতে পারবে। বাংলা এক থেকে নয় পর্যন্ত অংকগুলো লিখতে পারবে। এছাড়া যোগ বিয়োগ গুণ ভাগ এর ধারণা লাভ করবে। বাংলা বর্ণের পাশাপাশি ইংরেজি বর্ণমালার বর্ণগুলোও আরও ভালোভাবে শিখতে পারবে। বড়হাতের লেখাগুলো চমৎকারভাবে প্রদর্শন করবে আর ছোটহাতের লেখার বর্ণগুলো লিখতে আরও আনন্দ পাবে। শিশুরা তাদের সাদা খাতার ওপর আম, কলা,পাতা, ছাতা, মাছ, পাখি, কুলা, জগ, বালতি, রোবট, বাড়ি, আপেল আঁকতে পারবে। এসবের পাশাপাশি তাদের মনের মতো করে যে কোনো আকৃতি তৈরি করতে পারবে বলে জানান গবেষক ইবাদ আলী। তিনি আরও জানান, তার উদ্ভাবিত জ্যামিতি বক্সটি শিশু শিক্ষায় প্রয়োগের ফলে বদলে যাবে মুখস্থ নির্ভর প্রচলিত শিক্ষা পদ্ধতি। কাঠ দিয়ে তৈরি এই জ্যামিতি বক্সে বিভিন্ন আকৃতির ছবি সম্বলিত একটি নির্দেশিকা আছে। এই নির্দেশনা মোতাবেক একবার শিশুদের বুঝিয়ে দিলে তারা বক্সের কাঠিগুলো নিয়ে খেলতে খেলতে শিখে যাবে জ্যামিতির নানা জটিল তত্ত্ব। বাজারে প্রচলিত জ্যামিতি বক্সের গড় দাম প্রায় একশ’ টাকার কাছে। তার উদ্ভাবিত বক্সটি বাণিজ্যিকভাবে তৈরি করা হলে দাম পড়বে পঞ্চাশ টাকার নিচে। শিশুর উপর জোর করে বিদ্যা চাপিয়ে দেয়ার নাম শিক্ষা নয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, ‘যে শিক্ষায় আনন্দ নেই সেই শিক্ষা মূল্যহীন। আনন্দের মাধ্যমেই শিখন ফল অর্জিত হয়।’ সেই আনন্দময় শিখন উপকরণ হতে পারে গবেষক ইবাদ আলীর উদ্ভাবিত জ্যামিতি বক্সটি।