
ছবি: সংগৃহীত
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের মত ঠাণ্ডা যুদ্ধের কৌশলে ফিরে যাচ্ছে বিশ্বশক্তিধর রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র। ট্রেড ও ট্যারিফ নিয়ে উত্তেজনা যখন চূড়ান্ত, তখন আবারও আলোচনায় এসেছে সমুদ্রের গভীরে থাকা নিউক্লিয়ার সাবমেরিনগুলো। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভের কথার লড়াই এখন পরিণত হয়েছে সামরিক সরণিতে।
গতকাল রাতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দুটি নিউক্লিয়ার সাবমেরিন কৌশলগত অঞ্চলে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এর আগেই মেদভেদেভ হুঁশিয়ার করেছিলেন রাশিয়ার ‘ডেড হ্যান্ড’ সিস্টেম নিয়ে। এটি একটি স্বয়ংক্রিয় নিউক্লিয়ার প্রতিক্রিয়া ব্যবস্থা, যা যুদ্ধের সময় নেতৃত্বর মৃত্যু হলেও পরমাণু প্রতিঘাত চালাতে সক্ষম।
ক্রেমলিন এ নিয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে রুশ সংসদ সদস্য ভিক্টর ভদোলাতস্কি বলেন, “আমাদের সাবমেরিন সংখ্যা আমেরিকার চেয়ে অনেক বেশি, এবং ট্রাম্প যেগুলো মোতায়েন করছেন, সেগুলো অনেক আগেই আমাদের নজরদারির আওতায়।”
যুক্তরাষ্ট্রের সাবমেরিন বাহিনী
১. Ohio-class ব্যালিস্টিক সাবমেরিন (SSBN)
আমেরিকার ১৪টি ওহায়ো-ক্লাস সাবমেরিন রয়েছে, যেগুলোকে “বুমার” বলা হয়। প্রতি সাবমেরিনে ২০টি Trident II D5 SLBM বহনের সক্ষমতা রয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে সাগরে থাকা এবং চুপচাপ নিউক্লিয়ার ডিটারেন্স বজায় রাখাই এদের লক্ষ্য।
২. Virginia-class (SSN)
২৪টি ভার্জিনিয়া-ক্লাস অ্যাটাক সাবমেরিন যুক্তরাষ্ট্রের বহরে আছে। এগুলোতে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র, হারপুন এবং MK-48 টর্পেডো রয়েছে। বিশেষ অভিযানে ব্যবহারের জন্য ডুবুরিদের জন্য আলাদা চেম্বারও রয়েছে।
৩. Seawolf-class (SSN)
মাত্র তিনটি সিওউলফ ক্লাস সাবমেরিন রয়েছে, কিন্তু এগুলো অত্যন্ত শক্তিশালী এবং নীরব ঘাতক। এতে ৮টি টর্পেডো টিউব এবং ৫০টি অস্ত্র বহনের সক্ষমতা রয়েছে।
৪. Los Angeles-class (SSN)
২৪টি লস অ্যাঞ্জেলেস-ক্লাস সাবমেরিন এখনো সক্রিয়। ১৯৭৬ সালে ঠাণ্ডা যুদ্ধে সোভিয়েত হুমকি ঠেকাতে তৈরি হয়েছিল এই সাবমেরিনগুলো, এবং এখন ধীরে ধীরে Virginia-class দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে।
রাশিয়ার সাবমেরিন বাহিনী
রাশিয়ার নৌবাহিনীর সাবমেরিন ফ্লিট যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে বড়। রাশিয়ার রয়েছে প্রায় ৬৪টি সাবমেরিন সক্রিয়, যার মধ্যে ১৪টি ব্যালিস্টিক মিসাইল সাবমেরিন (SSBN)।
১. Borei-class SSBN
৮টি বোরেই-ক্লাস সাবমেরিন রয়েছে, প্রতিটি ১৬টি বুলাভা SLBM এবং ৬টি টর্পেডো লঞ্চার বহন করতে পারে। এদের একাধিক যুদ্ধোপকরণ ব্যবহারের ক্ষমতা রয়েছে।
২. Delta IV-class SSBN
পুরনো হলেও কার্যকর, ৬টি ডেল্টা IV ক্লাস সাবমেরিন এখনো রাশিয়ার পারমাণবিক ডিটারেন্সের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রতিটিতে রয়েছে ১৬টি Sineva SLBM।
রাশিয়ার অ্যাটাক সাবমেরিন (SSN)
১. Yasen-class
চারটি ইয়াসেন-ক্লাস সাবমেরিন রয়েছে, যেগুলো তুলনামূলক ছোট এবং কম জনবল প্রয়োজন হয়। এগুলো ৩M54 Kalibr বা P-800 Oniks মিসাইল ছুঁড়তে পারে।
২. Akula-class (Shark)
প্রায় পাঁচটি আখুলা-ক্লাস সাবমেরিন চালু রয়েছে। “আখুলা” মানেই রাশিয়ান ভাষায় “শার্ক”—নীরব, দ্রুত এবং মারাত্মক। এটি ক্যালিব্র, অনিক্স বা গ্রানিট মিসাইল ছুঁড়তে সক্ষম।
কে রাজত্ব করছে সমুদ্রের তলায়?
যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়া দু’জনেই পরমাণু সাবমেরিন প্রযুক্তিতে বিশ্বে শীর্ষে। তবে সংখ্যায় রাশিয়া এগিয়ে থাকলেও প্রযুক্তি, স্টিলথ, এবং বৈচিত্র্যের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করেন সামরিক বিশ্লেষকেরা।
মুমু ২