স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর ॥ সার্ক ভূক্ত দেশ সমূহের বিজ্ঞানী এবং সম্প্রসারণ কর্মীদের সমন্বয়ে ফসলের বালাই ব্যবস্থাপনার উপর আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কর্মশালা গাজীপুরে শুরু হয়েছে। সোমবার বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) সেমিনার কক্ষে চারদিন ব্যাপী অনুষ্ঠিত এ কর্মশালার উদ্বোধন করেন বারি’র মহাপরিচালক ড. আবুল কালাম আযাদ।
বারি’র মহাপরিচালক ড. আবুল কালাম আযাদ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রশিক্ষনার্থীদের উদ্দেশে দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য প্রদান করে বলেন, জৈব বালাইনাশক ভিত্তিক আধুনিক পদ্ধতিসমূহ কৃষক পর্যায়ে ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হলে একদিকে যেমন কম খরচে বিষাক্ত বালাইনাশকের ব্যবহার কমে আসবে অন্যদিকে তেমনি ভোক্তা পর্যায়ে নিরাপদ খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা যাবে। বর্তমান সরকার বিষাক্ত রাসায়নিক বালাইনাশকের ব্যবহার কমিয়ে এনে পরিবেশ বান্ধব এবং কার্যকরী জৈব বালাইনাশক ভিত্তিক ব্যবস্থাপনা উদ্ভাবন এবং সম্প্রসারণ করার জন্য ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশে ২০০৯ সনের চেয়ে বর্তমানে প্রায় ২৯ শতাংশ কম রাসায়নিক বালাইনাশক ব্যবহৃত হচ্ছে।
তিনি ফসলে বালাই ব্যবস্থাপনার উপর বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত জৈব বালাইনাশক ভিত্তিক আধুনিক পদ্ধতিসমূহ ব্যবহার করে কার্যকরীভাবে, কম খরচে এবং পরিবেশ বান্ধব উপায়ে পোকামাকড় নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব যা অত্র অঞ্চলে নিরাপদ ও বিষমুক্ত খাদ্য উৎপাদন নিশ্চিতকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠাণে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বারি’র পরিচালক (গবেষণা) ড. মো. লুৎফর রহমান ও সার্ক এগ্রিকালচার সেন্টার (ঝঅঈ), ঢাকা এর পরিচালক ড. এস. এম. বখতিয়ারপরিচালক। বারি’র পরিচালক (প্রশিক্ষণ ও যোগাযোগ উইং) ড. পরিতোষ কুমার মালাকার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। অনুষ্ঠাণে বারি’র মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও কীটতত্ত্ব বিভাগ প্রধান ড. সৈয়দ নূরুল আলম স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন। তিনি প্রশিক্ষনটির সমন্বয়কারী হিসাবে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
আয়োজকরা জানান, ২৮-৩১ মে পর্যন্ত অনুষ্ঠিত উক্ত প্রশিক্ষণ কর্মশালায় সার্ক ভূক্ত ৭টি দেশ- ভূটান, ভারত, মালদ্বীপ, নেপাল, পাকিস্থান, শ্রীলংকা এবং বাংলাদেশ হতে ২০ জন প্রশিক্ষনার্থী অংশগ্রহন করছেন। সার্ক এগ্রিকালচার সেন্টার (ঝঅঈ) এবং এশিয়া প্যাসিফিক এসোসিয়েশন অব এগ্রিকালচারাল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (অচঅঅজও) উদ্যেগে এবং অর্থায়নে পরিচালিত এ প্রশিক্ষণে অংশগ্রহনকারীগণ বিভিন্ন দানাজাতীয় এবং উদ্যানতাত্বিক ফসলের ক্ষতিকারক পোকা-মাকড়, রোগ-বালাই পরিচিতি এবং তাদের জৈব বালাইনাশক ভিত্তিক দমন ব্যবস্থাপনার উপর তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক বিষয়ে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। এছাড়াও প্রশিক্ষণার্থীবৃন্দ বিভিন্ন উপকারী পোকার সংরক্ষণ পদ্ধতি এবং কৃত্রিম উপায়ে তাদের ব্যাপক ভিত্তিক উৎপাদন ও মাঠ পর্যায়ে বালাই ব্যবস্থাপনায় তাদের কার্যকরী ব্যবহারের উপরও হাতে কলমে প্রশিক্ষণ গ্রহন করবেন।
বিজ্ঞানীরা জানান, বাংলাদেশ জৈব বালাইনাশক ভিত্তিক আধুনিক পদ্ধতি উদ্ভাবনে অনেকটুকু অগ্রসরমান হয়েছে। বিশেষতঃ বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের কীটতত্ত্ববিদগণ বিষাক্ত রাসায়নিক বালাইনাশকের বিকল্প হিসাবে বেশ কয়েকটি দমন ব্যবস্থাপনা উদ্ভাবন করেছে যা মাঠ পর্যায়ে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে জৈব বালাই নাশক ভিত্তিক বালাই ব্যবস্থাপনার সাফল্যে আকৃষ্ট হয়ে সার্কভুক্ত তিনটি দেশ শ্রীলংকা, নেপাল এবং ভূটান উক্ত বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহনের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করে। পরবর্তীতে সার্ক সেক্রেটারিয়েট বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে এ প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আয়োজন করে।