কথাসাহিত্যিক ও সাপ্তাহিক প্রিয় প্রসঙ্গ সম্পাদক সালিম হাসানের মতে লোকজ সংস্কৃতির জেলা ময়মনসিংহে রয়েছে হাজারো ঐতিহ্য। পিঠা পায়েসের ক্ষেত্রেও ময়মনসিংহের ঐতিহ্য বেশ সমৃদ্ধ। আউলাকেশী-এমনই এক ঐতিহ্যবাহী পিঠার নাম। কেবল গ্রামীণ নয় শহুরে জনগোষ্ঠীর কাছে এখনও এই পিঠার কদর রয়েছে।
ভাতের চাল থেকে ঢেঁকি কিংবা মেশিনে তৈরি গুঁড়া দিয়ে বানানো হয় নজরকাড়া আউলাকেশী পিঠা। দেখতে অনেকটা এলোকেশীর মতো বলেই হয়ত এমন নাম। চালের গুঁড়া তৈরি করার পর মেয়েদের ওড়না কিংবা চালনি দিয়ে বেশ কয়েকবার ছেঁকে মোলায়েম ও মিহি গুঁড়া আলাদা করা হয়। ময়মনসিংহ শহরের সৌখিন গৃহবধূ আলপনা জানান, আলাদা মিহি গুঁড়া পরে পরিমাণ মতো পানিতে মেশানো হয়। ভালভাবে মেশানোর পর আঠালো এই চালের গুঁড়া হাতের ছড়ানো আঙুল ব্যবহার করে কোন পাত্রে শৈল্পিক আকারে ছিটানো হয়। এই ছিটানো অনেকটা জিলাপি তৈরির মতো। পাত্রের ওপর হালকাভাবে ছিটানো আটা কিছুটা শুকানোর পর ভাঁজ করা হয়। পরে সেটি প্রয়োজন মতো তেলে ভেজে হালকা চিনি ছিটিয়ে খাওয়া হয়।
ময়মনসিংহে বহুরূপী নাট্য সংস্থার সভাপতি বিশিষ্ট নাট্যকার শাহাদাত হোসেন খান হীলু জানান, অবিভক্ত ময়মনসিংহের গ্রামে এক সময় ঘরে ঘরে তৈরি করা হয়েছে আউলাকেশী পিঠা। বিয়ের উৎসবে এই পিঠার আপ্যায়ন ছিল অনেকটা রেওয়াজের মতো। বিয়ে উপলক্ষে বিয়ে বাড়ির মেয়েসহ গ্রামের মেয়েরা এক সঙ্গে দল বেঁধে তৈরি করেছে এই পিঠা। হাতের আঙুল ছাড়াও পিঠা তৈরিতে ব্যবহার করা হয় কাঁঠালের পাতা। অনেক সময় চিকন ছাকনিও ব্যবহার করা হয়। এই পিঠায় কৃত্রিম রং ব্যবহারের কথাও জানান অনেকে। পরে রোদে শুকিয়ে কৌটায় ও পাতিলে সংরক্ষণ করা হয়। বিশিষ্ট কবি ফরিদ আহমদ দুলাল জানান, আশির দশক পর্যন্ত বিয়ে উৎসবে বরযাত্রীদের আপ্যায়ন করা হতো রঙিন আউলাকেশী দিয়ে। দামে সস্তায় বলে এই পিঠা হাট বাজারে বিক্রি হচ্ছে প্যাকেটে।
Ñবাবুল হোসেন, ময়মনসিংহ থেকে
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: