ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ধনী কর্পোরেশনকে করমুক্ত রেখে জাতীয় উন্নয়ন সম্ভব নয়

প্রকাশিত: ০৬:৩২, ১৯ মার্চ ২০১৫

ধনী কর্পোরেশনকে করমুক্ত রেখে জাতীয় উন্নয়ন সম্ভব নয়

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ট্যাক্স জাস্টিস নেটওয়ার্ক নামে লন্ডনভিত্তিক একটি আন্তর্জাতিক সুশীল সমাজ নেটওয়ার্ক বুধবার একটি মাইলফলক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যার শিরোনাম ‘টেন রিজনস টু ডিফেন্ড দ্য কর্পোরেশন ট্যাক্স’। এই প্রতিবেদনটি এমন একটা সময়ে প্রকাশিত হয়েছে যখন বিশেষ করে দরিদ্র ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে বড় বড় কর্পোরেশনগুলোর বাণিজ্য করের আওতামুক্ত করার বেশ তোড়জোড় চলছে। আর সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে জাতীয় রাজস্ব ঠিক রাখতে দরিদ্র জনসাধারণের ওপর নির্বিচারে ভ্যাটের মতো নিপীড়নমূলক কর আরোপ করার সুপারিশ চলছে। ট্যাক্স জাস্টিস নেটওয়ার্কের প্রতিবেদন ‘টেন রিজনস টু ডিফেন্ড দ্য কর্পোরেশন ট্যাক্স’ প্রকাশে ইক্যুইটিবিডির অভিনন্দন জানিয়েছে। ইক্যুইটিবিডি তার জন্মলগ্ন থেকেই এই ধরনের বৈষম্য বৃদ্ধিকারী নীতির বিরোধিতা করে আসছে। পৃথিবীব্যাপী বড় বড় কর্পোরেশনগুলো কী পরিমাণ মুনাফা করে তা একটি দরিদ্র দেশের সাধারণ মানুষের কল্পনাতীত। স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর সরকার ও নীতি নির্ধারকদের ওপর ছড়ি ঘোরানোর একচেটিয়া ক্ষমতাও রয়েছে এদেরই হাতে। সীমাহীন মুনাফা আরও বাড়াতে তারা ছোট ছোট সরকারগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি করছে, যাতে কর্পোরেশনগুলোর কর মওকুফ করা হয়। তাদের যুক্তি হচ্ছে, এতে বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে। এদের হয়ে আন্তর্জাতিক অর্থ লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান যেমন বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ এসব দেশকে পরামর্শ দিচ্ছে কর্পোরেশন থেকে অনাদায়কৃত করের ঘাটতি পুষিয়ে নিতে ভ্যাটের আওতা বাড়াতে। যা দরিদ্র মানুষের আয় শোষণ করা ছাড়া আর কিছুই না। প্রতিবেদনের শিরোনামে উল্লিখিত দশটি কারণের প্রধানটি হচ্ছে রাজস্ব। ২০০৮ সালের বৈশ্বিক মন্দায় শুধু ওইসিডি দেশগুলো কর্পোরেশনগুলো থেকে কর আদায় করে মোট ৭.৫ ট্রিলিয়ন ইউএস ডলার, যা তাদের জনস্বাস্থ্য খাতে মোট ব্যয়ের অর্ধেক এবং উচ্চশিক্ষার জন্য বরাদ্দের প্রায় দ্বিগুণ। প্রতিবেদনে অন্য নয়টি কারণ যেভাবে তুলে ধরা হয়েছে তা হচ্ছে, কর্পোরেট আয় কর বৈষম্য নিরসন করে এবং গণতন্ত্রকে রক্ষা করে; জাতীয় কল্যাণ বৃদ্ধি করে; এক স্থানের কর মওকুফ অন্য স্থানে মূলধন শোষণ ঘটাতে পারে; এটা ধনী দেশের চেয়ে স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ; এটি বাছবিচারবিহীনভাবে কেবল মুনাফা অর্জনের প্রবণতা রোধ করে, যা সাধারণ বাণিজ্য দ্বারা অর্জন সম্ভব নয়; এই প্রবণতা শূন্যতেই থেমে থাকে না, এটা ঋণাত্মক প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে এবং চূড়ান্তভাবে কর্পোরেট আয়কর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতামূলক সরকার বিকাশে সহায়তা করে। ট্যাক্স জাস্টিস নেটওয়ার্কের পরিচালক জন ক্রিস্টেনসেন এ উপলক্ষে বলেন, ‘কর্পোরেট আয়কর সকল ধরনের করের মধ্যে সবচেয়ে প্রত্যক্ষ ও সর্বোত্তম। কিন্তু বর্তমান ধারা চলতে থাকলে এক সময় এই কর বিলোপ হয়ে যাবে এবং জাতিগুলোকে এক জবাবদিহিতা ও করবিহীন পরিস্থিতিতে ঠেলে দেবে, যা দেশে দেশে কেবল বৈষম্যই বাড়াবে।’ ইক্যুইটিবিডির প্রধান সঞ্চালক রেজাউল করিম চৌধুরী এই প্রতিবেদন প্রকাশের প্রাক্কালে বলেন, ‘যখন সারা পৃথিবীর চিন্তাশীল মানুষ ২০১৫ পরবর্তী উন্নয়ন আলোচনা হিসেবে ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে সম্পদ ও সুবিধার পুনর্বণ্টনের দাবিতে সোচ্চার, তখন আমরা অত্যন্ত ধনী কর্পোরেশনগুলোর করমুক্তির মতো বৈষম্য বৃদ্ধিকারী ব্যবস্থা মেনে নিতে পারি না।’
×