ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৩০ মাঘ ১৪৩১

উড়ন্ত বরিশালের টানা দ্বিতীয় শিরোপার হাতছানি

শাকিল আহমেদ মিরাজ

প্রকাশিত: ২৩:৫৫, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

উড়ন্ত বরিশালের টানা দ্বিতীয় শিরোপার হাতছানি

এমন হাসি ধরে রেখে শিরোপা জিততে আশাবাদী ফরচুন বরিশাল

দীর্ঘ এক দশকের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে গতবার বরিশালকে বিপিএলের প্রথম শিরোপা এনে দেন তামিম ইকবাল। এরপর ইনজুরি, বোর্ডে (বিসিবি) সঙ্গে দূরত্ব, সাকিবের সঙ্গে দ্বন্দ্ব- নানা জটিলতায় জেরবার দেশসেরা ওপেনারের ওয়ানডে বিশ্বকাপটাই খেলা হয়নি। অথচ তিনি ছিলেন অধিনায়ক। কিংবদন্তিতুল্য ব্যাটারের একরাশ দুঃখে সান্ত¡না হয়ে পাশে ছিল ফ্র্যাঞ্চাইজিটি।

বিদেশী রিক্রুট, খেলোয়াড় ধরে রাখা থেকে নিলামের টেবিলÑ তামিকে সামনে রেখেই সকল প্রক্রিয়া এগিয়ে নেয় ফরচুন বরিশাল কর্তৃপক্ষ। খান সাহেবের বিচক্ষণ নেতৃত্বে এবার টানা দ্বিতীয় শিরোপার নিশ্বাসসম দূরত্বে দাঁড়িয়ে তারা। কোয়ালিফায়ার-১ এ ৯ উইকেটের জয়ের পথে চিটাগং কিংসকে উড়িয়ে দিয়ে ফাইনালে উঠে এসেছে বরিশাল। আসরজুড়ে সতীর্থদের নৈপুণ্যে সন্তুষ্ট তামিম ফাইনাল নিয়ে অতি আত্মবিশ্বাসে ভুগতে চান না। গেম প্লান সাজাতে চান প্রতিপক্ষের শক্তি ও দুর্বলতা দেখে।
‘আমরা জানি, কাজ শেষ হয়নি। আরেকটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ (ফাইনাল) আসছে। আমাদের যা করতে হবে, তা হলো আগামী দুই-তিনদিন ফোকাস ধরে রাখতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে আমাদের প্রতিপক্ষ কোন দল হয়। সেভাবেই গেম প্ল্যান তৈরি করতে হবে।’ জয়ের পরই বলছিলেন তামিম। প্রাথমিক পর্বে ১২ ম্যাচের ৯টিতে জিতে সর্বোচ্চ ১৮ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে থেকে সেরা চারে উঠে এসেছিল তারকাখচিত বরিশাল।

৮ জয়ে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় দল হিসেবে কোয়ালিফায়ারের টিকিট পাওয়া মোহাম্মদ মিথুনের চট্টগ্রামকে বেশ শক্ত প্রতিপক্ষই মানতে হবে। তবে ক্যাপ্টেন কুলের বার্তাটা ছিল পরিষ্কার, ‘দলের প্রতি আমার এই বার্তাই ছিল যে, এটা স্রেফ আরেকটি ম্যাচ। এর বেশি কিছু নয়। কারণ, যখনই আমরা ভাবতে শুরু করব যে, এটা কোয়ালিফায়ার ম্যাচ, ফাইনালে খেলার হাতছানি আছে, তখনই স্নায়ুর চাপ পেয়ে বসবে।

আমরা সাধারণ রাখতে চেয়েছি। এখানেই অভিজ্ঞতার ব্যাপারটি চলে আসে। দল যেভাবে একসঙ্গে মিশে গেছে, তা দারুণ।’ যোগ করেন খান সাহেব। তবে জয়টা এত সহজে আসবে, সেটি হয়তো ভাবেননি তামিম। মিরপুরে ৯ উইকেটে ১৪৯ রান করে চট্টগ্রাম। দুর্দান্ত বোলিংয়ে ১৯তম ওভারে ৪টিসহ ৫ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা পাকিস্তানি পেসার মোহাম্মদ আলি। রিশাদ হোসেন, কাইল মেয়ার্সরও ছিলেন দুর্দান্ত। এরপর তাওহীদ হৃদয়ের ঝড়ে ১৭.২ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় বরিশাল।
তামিম বলেন, ‘এর চেয়ে বেশি কিছু চাইতে পারতাম না। উইকেট ছিল দুর্দান্ত। শুরু থেকেই উইকেট ভালো ছিল (ব্যাটিংয়ের জন্য)। আমরা যেভাবে বোলিং করেছি, তা ছিল দারুণ। ফাইনালের আগে ব্যাট হাতে হৃদয়ের জ্বলে ওঠাটাও দারুণ।’ চিটাগংকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার পথে ৫৬ বলে ৯ চার ও ২ ছক্কায় অপরাজিত ৮২ রানের বিধ্বংসী  ইনিংস খেলেছেন হৃদয়।

গত দুই আসরে আলো ছড়ানো এ তারকার এবারের বিপিএলে ১২ ইনিংসে প্রথম ফিফটি এটি। আগের ১১ ইনিংসে ৪৮ রানের একটি ইনিংস ছাড়া তেমন কিছুই করতে পারেনি। এরপরও তাকে একাদশে রেখেছেন তামিম, ‘রান না পাওয়ার আক্ষেপ আমার থেকেও আমি আমার ভক্ত-অনুরাগীদের মধ্যে বেশি দেখেছি। তবে তার থেকে বেশি অনুপ্রেরণা দেখেছি আমার আশপাশের মানুষগুলোর চোখে।

তামিম ইকবাল ভাই, কাউকে বোঝাতে পারব না, আপনি অভিভাবক হিসেবে কতটুকু যথার্থ। এত প্রত্যাশা থাকার পরেও, পুরো টিমের সবাই প্রতিনিয়ত আমাকে বুঝিয়েছেন, সবই স্বাভাবিক, হৃদয় রানে ফিরবেই! কৃতজ্ঞতা আমার কোচিং স্টাফ, সকল খেলোয়াড়দের প্রতি।’ বলছিলেন হৃদয়। বিপিএলে এখনো পর্যন্ত বরিশালের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তামিম, ৩ ফিফটিতে ৩৫৯ রান করেছেন অধিনায়ক। সমান ৩ ফিফটিতে ইংলিশ তারকা ডেভি মালান ৮ ইনিংসেই করেন ৩১৫ রান। 
১ ফিফটিতে হৃদয়ের রান ২৮০। দুই ফিফটিতে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের রান ১৯৯। মুশফিকুর রহিম ১৬৮। ১১ ম্যাচ খেলে দেশে ফিরে যাওয়া পাকিস্তান পেসার ফাহিম আশরাফের শিকার আসরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২০ উইকেট। স্থানীয় বাঁহাতি স্পিনার তানভির ইসলাম নিয়েছেন ১০ উইকেট। জানদাদ খান ও মোহাম্মদ নবীর শিকার ৮টি করে।

×