ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩০ ভাদ্র ১৪৩১

সুইমিংপুলে ঝড় ম্যাকিনটোশ, মার্শা, লিডেকিদের

শাকিল আহমেদ মিরাজ

প্রকাশিত: ২৩:২৮, ৬ আগস্ট ২০২৪

সুইমিংপুলে ঝড় ম্যাকিনটোশ, মার্শা, লিডেকিদের

সাফল্যের হাসি যুক্তরাষ্ট্রের কেট ডগলাস ও কানাডার সামার ম্যাকিনটোশের (ডানে) 

যথারীতি যুক্তরাষ্ট্রের আধিপাত্যে শেষ হলো প্যারিস অলিম্পিক সাঁতার। ৮ স্বর্ণ, ১৩ রৌপ্য ও ৭ ব্রোঞ্জে সাঁতারে যুক্তরাষ্ট্রের মোট পদক ২৮। ৭ স্বর্ণ, ৮ রৌপ্য ও ৩ ব্রোঞ্জে অস্ট্রেলিয়ার পদক ১৮টি। ৪ স্বর্ণ, ১ রৌপ্য ও ২ ব্রোঞ্জে সাঁতারে আয়োজক ফ্রান্সের পদক ৭টি। ৩ স্বর্ণ, ২ রৌপ্য ও ৩ ব্রোঞ্জসহ কানাডার পদক ৮টি। আর ২ স্বর্ণ, ৩ রৌপ্য ও ৭ ব্রোঞ্জে চীনের পদক ১২টি।

আলোচনার কেন্দ্রে ছিলেন ‘ফরাসি ফেলপস’ খ্যাত লিওঁ মার্শা; ফ্রান্সের ৪ স্বর্ণের চারটিই এসেছে ২২ বছর বয়সী এ সাঁতারুর নৈপুণ্যে! যুক্তরাষ্ট্রের কিংবদন্তিতুল্য নারী সাঁতারু কেটি লিডেকি জিতেছেন ২ স্বর্ণ (রিলেসহ ৩টি)। ২ স্বর্ণ জিতেছেন অস্ট্রেলিয়ার কাইলি ম্যাককিওনও। আলোচনায় ৩ স্বর্ণজয়ী ১৭ বছর বয়সী কানডিয়ান তরুণী সামার ম্যাকিনটোশ।

প্যারিস নিত্যনতুন কীর্তি গড়েছেন মার্শা, একের পর এক ভেঙেছেন মার্কিন কিংবদন্তি মাইকেল ফেলপসের রেকর্ড! ফরাসি পোস্টার বয়ের সাঁতার দেখতে লা ডিফেন্স অ্যারেনায় ছুটে এসেছেন এমানুয়েল ম্যাক্রোঁও। প্রেসিডেন্টকে হতাশ করেননি মাশার্ঁ। ছেলেদের ৪০০ মিটার ব্যক্তিগত মিডেল, ২০০ মিটার ব্যক্তিগত মিডেল, ২০০ মিটার বাটারফ্লাই এবং ২০০ মিটার ব্রেস্টস্ট্রোকে স্বর্ণ জিতেছেন মার্শা। 
প্যারিস অলিম্পিকের অ্যাকুয়াটিকস সেন্টারে ছেলেদের ৪০০ মিটার ব্যক্তিগত মেডলিতে রেকর্ড গড়েছেন লিও মার্শা। সাঁতার কিংবদন্তি মাইকেল ফিলিপসের রেকর্ড গড়ে স্বাগতিকদের তৃতীয় সোনা এনে দিয়েছেন এই সাঁতারু। ৪০০ মিটার ব্যক্তিগত মেডলি ৪ মিনিট ০২.৯৫ সেকেন্ড সময় নিয়েছেন মার্শা। অলিম্পিকে এই ইভেন্টে রেকর্ড এটি।

২০০৮ বেইজিং অলিম্পিকে ৪ মিনিট ০৩.৮৪ সেকেন্ড নিয়েছিলেন মাইকেল ফিলিপস। ২০২৩ সাল বিশ্বরেকর্ডও ছিল এটি। গত বছর জাপানে ৪ মিনিট ০২.৫০ সেকেন্ড সময় নিয়ে মার্শাই রেকর্ডটি ভাঙেন। এবার ফিলিপসের সামনেই অলিম্পিকে তার রেকর্ড ভাঙলেন ফরাসি তারকা। ২০০ মিটার মিডলে স্বর্ণ জিততে ১ মিনিট ৫৪.০৬ সেকেন্ড সময় নিয়েছেন ২২ বছর বয়সী এই তারকা। ২০০৮ বেইজিং অলিম্পিকে ১ মিনিট ৫৪.২৩ সেকেন্ডে আগের রেকর্ডটি ছিল ফেলপেসর।

মার্শার  পেছনে থেকে গ্রেট ব্রিটেনের ডানকান স্কট (১ মিনিট ৫৫.৩১ সেকেন্ড) রৌপ্য, আর ব্রোঞ্জ জিতেছেন চীনের শুন ওয়াং (১ মিনিট ৫৬ সেকেন্ড)। ফেলপস ও আরেক মার্কিন গ্রেট মার্ক স্পিটজের (১৯৭২ অলিম্পিকে) পর তৃতীয় সাঁতারু হিসেবে অলিম্পিকের এক আসরে চারটি ব্যক্তিগত স্বর্ণ জয়ের কীর্তি ছুয়েছেন ফ্রান্সের মার্শা। ইতিহাসের পাতায় তাদের সঙ্গী হয়েছেন মার্শা। দুই কিংবদন্তির সঙ্গে এই তরুণের তুলনাও তাই শুরু হয়ে গেছে।

চলতি আসরে ২০০ মিটার মিডলের আগে ২০০ মিটার বাটারফ্লাই, ২০০ মিটার  ব্রেস্টস্ট্রোক ও ৪০০ মিটার ব্যক্তিগত মিডলেতে এবার সোনার পদক গলায় ঝুলিয়েছেন তিনি। প্রশংসা শুনতে কার না ভালো লাগে, তবে ফেলপস ও স্পিৎজের সঙ্গে তুলনায় মার্শার মনে অন্যরকম রোমাঞ্চের লুকোচুরি। নিজের অর্জন তার কাছে যেন অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে, ‘এটা পাগলামি। এই মানুষগুলো কিংবদন্তি, নিজেদের খেলায় তারা কিংবদন্তি। এই মানুষগুলোর সঙ্গে তুলনা আমার কাছে স্রেফ পাগলাটে বিষয়। আমার মনে হয় না, এটা আমি এখন উপলব্ধি করতে পারব। হয়ত, কয়েকদিন পর বুঝতে পারব।’ বলছিলেন এ সেনসেশন। 
প্যারিসের সুইমিং পুলে সমানে দ্যুতি ছড়িয়েছেন সামার ম্যাকিনটোশ। অলিম্পিকে রেকর্ড গড়ে ২০০ মিটার ব্যক্তিগত মিডলে স্বর্ণ জিতেছেন কানাডিয়ান কিশোরী। লা দিফঁস অ্যারেনায় মেয়েদের এই ইভেন্টে সময় নিয়েছেন ২ মিনিট ৬. ৫৬ সেকেন্ড। যুক্তরাষ্ট্রের কেট ডগলাস (২ মিনিট ৬.৯২ সেকেন্ড) রৌপ্য ও অস্ট্রেলিয়ার কাইলি ম্যাককিওন (২ মিনিট ৮.০৮ সেকেন্ড) ব্রোঞ্জ জিতেছেন।

টোকিও অলিম্পিকে একটুর জন্য পদক পাননি, তবে ১৪ বছর বয়সেই বিস্ময় ছড়িয়ে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জানান দিয়েছিলেন ম্যাকিনটোশ। পরের সময়টায় বয়সের সঙ্গে পুলে আরও গতিময় হয়ে উঠেছেন, হয়েছেন পরিণত, গড়েছেন বিশ্বরেকর্ডও। প্যারিসে প্রথম দিনে কেটি লিডেকিকে পেছনে ফেলে ফ্রি স্টাইলে রৌপ্য জয়ের পর আবারও আলোচনার কেন্দ্রে উঠে আসেন। এরপর তো টানা তিনটি স্বর্ণ জিতলেন।

৪০০ মিটার ব্যক্তিগত মিডলে শুরু তার স্বর্ণের হাসি। এরপর ২০০ মিটার বাটারফ্লাই। আর এবার ২০০ মিটারে মিডলে জিতে পূর্ণ করলেন এর ডাবল। ‘কেমন যেন পরাবাস্তব একটা অনুভূতি। স্বর্ণ জিতে এই পোডিয়ামের চূড়ায় দাঁড়ানো ছিল আমার স্বপ্ন। প্যারিসে সপ্তাহের ব্যবধানে তিনবার সেটি পূরণ হওয়ায় খুবই খুশি। ছেলেবেলায় যে স্বপ্নগুলো দেখেছি, সেই পথ ধরেই ছুটে চলার চেষ্টা করছি আমি এবং যতদিন সম্ভব চাই এই খেলায় থাকতে।

আমার মনে পড়ে, বেড়ে ওঠার দিনগুলোতে প্রতিদিন ক্লাস শুরুর আগে জাতীয় সংগীত গাইতাম। এখন অলিম্পিকসে এসে এখানে গলা মেলাতে পারাটা দারুণ।’ আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলছিলেন ম্যাকিনটোশ। অলিম্পিকের ইতিহাসে নারী সাঁতারু হিসেবে সবচেয়ে বেশি ১৩টি পদক (স্বর্ণ, রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ মিলিয়ে) জয়ের রেকর্ড আগেই গড়েছিলেন কেটি লিডেকি।

২৭ বছর বয়সী মার্কিন কিংবদন্তি এবার ক্যারিয়ারে ৯তম স্বর্ণ জিতে সোভিয়েত ইউনিয়নের (রাশিয়া) লারিসা লাতিনিনির পাশে নিজের নামটি খোদাই করে নিয়েছেন। মেয়েদের ৮০০ মিটার ফ্রিস্টাইলে অবিসংবাদিত সেরা লিডেকি। সেটিই দেখেছে প্যারিস অলিম্পিক। অস্ট্রেলিয়ার আরিয়ার্নে টিটমাসকে পেছনে ফেলে জিতে নেন অলিম্পিকে নিজের ৯ নম্বর স্বর্ণ পদক। তাতে অলিম্পিক ইতিহাসে নারী প্রতিযোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি স্বর্ণজয়ী লাতিনিনার পাশে বসেন তিনি।

সাবেক সেভিয়েত ইউনিয়নের প্রতিনিধিত্ব করা এ জিমন্যাস্ট ১৯৫৬ থেকে ১৯৬৪ পর্যন্ত ৯টি স্বর্ণ জিতেছিলেন। নবম স্বর্ণ জয়ের পথে লিডেকি সময় নিয়েছেন ৮ মিনিট ১১.০৪ সেকেন্ড। ১.২৫ সেকেন্ডে রৌপ্য টিটমাসের। ব্রোঞ্জ লিডেকির স্বদেশী পেজ ম্যাডেনের। আর ১০০ মিটার ব্যাকস্ট্রোকের পর এবার ২০০ মিটার ব্যাকস্ট্রোকেও বাজিমাত করেছেন অস্ট্রেলিয়ার কাইলি ম্যাককিওন। আগের দিনই মেয়েদের ৪ গুণিতক ২০০ মিটার ফ্রি-স্টাইল রিলেতে স্বর্ণজয়ী দলেও ছিলেন তিনি।

সব মিলিয়ে এবারের অলিম্পিকে অস্ট্রেলিয়ার সাত স্বর্ণের তিনটিতেই নিজের নামটি খোদাই করে নিয়েছেন ২৩ বছর বয়সী এ সেনসেশন। লা দিফঁসা অ্যারেনায় ২০০ মিটার ব্যাকস্ট্রোকে ২ মিনিট ৩.৭৩ সেকেন্ড সময় নিয়ে ম্যাককিওন ভেঙেছেন মিসি ফ্র্যাঙ্কলিনের রেকর্ড।

×