ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৬ জুন ২০২৪, ৩ আষাঢ় ১৪৩১

আজ দ্বিতীয় টি২০তে সিরিজ বাঁচানোর লড়াই বাংলাদেশের

যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হার অশনি সংকেত

মো. মামুন রশীদ

প্রকাশিত: ০০:২২, ২৩ মে ২০২৪

যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হার অশনি সংকেত

লিটনের এ ছবিই যেন বর্তমানে টাইগারদের প্রতিচ্ছবি

নাজমুল হোসেন শান্ত আগেই বুঝতে পেরেছিলেন হয়তো। এজন্য বিশ^কাপের প্রাথমিক স্কোয়াড গড়ার অনেক আগেই সংবাদ সম্মেলনে তিনি বাংলাদেশ দলকে নিয়ে খুব বেশি প্রত্যাশা করতে নিষেধ করেন। দলের অবস্থা যে অন্তঃসারশূন্য এটা পরিষ্কার হয়েছে দুর্বলতর যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টি২০ অনুষ্ঠিত হওয়ার পর।

বিশ্ব ক্রিকেটের অনুসারী, ভক্ত-সমর্থক এবং বিশ্লেষকরা চোখ বন্ধ করে ভেবে নিয়েছিলেন একতরফা ম্যাচ হবে। সেটিই হয়েছে, তবে বাংলাদেশ দলের সাফল্য নিয়ে সবার চিন্তা থাকলেও ঘটেছে উল্টোটা। যুক্তরাষ্ট্র কোনো সুযোগই দেয়নি সফরকারীদের, প্রথমবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের মুখোমুখি হয়ে তাদের ৩ বল হাতে রেখেই ৫ উইকেটে উড়িয়ে দিয়েছে।

তাই হিউস্টনের প্রেইরি ভিউ ক্রিকেট কমপ্লেক্সে নতুন এক ইতিহাস রচিত হয়েছে। সেখানেই আজ রাত ৯টায় সিরিজের দ্বিতীয় টি২০ ম্যাচে সিরিজ হার ঠেকানোর চ্যালেঞ্জ শুরু বাংলাদেশ দলের। বিশ^কাপের আগ মুহূর্তে দুর্বলতম প্রতিপক্ষের কাছে হার অশনি সংকেত হয়ে এসেছে দলের জন্য। বাকি দুই ম্যাচে সেই শঙ্কা কাটিয়ে ওঠার চ্যালেঞ্জ।
আইসিসির সহযোগী সদস্য দেশ যুক্তরাষ্ট্র এবার আয়োজক হওয়ার সুবাদে প্রথমবার কোনো বিশ^কাপ খেলার সুযোগ পাচ্ছে। আর বাংলাদেশ ২৪ বছর ধরে টেস্ট খেলে, ৮ টি২০ বিশ^কাপ আসরের সব খেলেছে। সবমিলিয়ে ১৬৭ টি২০ ম্যাচ ২১টি দেশের বিপক্ষে খেলার অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের। সেখানে ২০১১৯ সাল থেকে বহুজাতিক একটি দল নিয়ে আন্তর্জাতিক টি২০তে যাত্রা শুরু যুক্তরাষ্ট্রের।

অভিবাসীদের দল প্রথম থেকেই তারা। এই বিশ^কাপের স্কোয়াডেও খাঁটি মার্কিন আছেন মাত্র ৪ জন। বাকি ১১ জন ভারত, পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে আসা। অনেকেরই অবশ্য সে কারণে বিশে^র অন্যতম সেরা ফ্র্যাঞ্চাইজি আসরগুলোয় খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। ১৯৯৭ সালে সর্বশেষ আইসিসি ট্রফি খেলেছে বাংলাদেশ।

সেবারই প্রথম চ্যাম্পিয়ন হয়েছে এবং প্রথমবারের মতো ওয়ানডে বিশ^কাপ খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে। এরপর আর আইসিসি ট্রফি খেলতে হয়নি বাংলাদেশ দলকে। সেই প্রতিযোগিতার ১৯৯৪ সালের আসরে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে সর্বশেষ ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ দল। মার্কিনিরা ১৪৫ রানে অলআউট হওয়ার পর বাংলাদেশ ৭৩ রানে ৬ উইকেট খুঁইয়ে পরাজয়ের প্রহর গুনতে থাকে।

কিন্তু আকরাম খান ৬৪ রানের ইনিংস খেলে শেষ পর্যন্ত ৪৬.৩ ওভারে দলকে ৩ উইকেটের জয় এনে দেন। ওই সময়টাকে দুই দল সমশক্তিরই ছিল। কিন্তু ৩০ বছরে দুই দলের মধ্যে যোজন-যোজন ব্যবধান। অনেক বড় দল বাংলাদেশ, তাই তাদের বিপক্ষে খেলারই সুযোগ নেই যুক্তরাষ্ট্রের। শুধু বৈশি^ক আসরটাই সেই লড়াইয়ের মঞ্চ হতে পারে। 
এবার বিশ^কাপের সহ-আয়োজক হওয়াতে প্রথমবার কোনো ক্রিকেট বিশ^কাপ খেলতে নামবে যুক্তরাষ্ট্র। সেই সুবাদে বেশকিছু বড় দলের বিপক্ষে খেলার সুযোগ পাবে মাত্র ৫ বছর ধরে আন্তর্জাতিক টি২০ খেলা যুক্তরাষ্ট্র। ২০২১ সালে টেস্ট খেলুড়ে দল আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে একটি ম্যাচ জিতেছে তারা, আরেকটি হেরেছে।

আরেক টেস্ট মর্যাদার দেশ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সে বছরই আরেকটি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছে তারা। এ তিনটিই এতদিন পর্যন্ত বড় ম্যাচ ছিল যুক্তরাষ্ট্রের। সেসব ছাপিয়ে এবার ২৬তম টি২০ খেলতে নেমে ইতিহাস গড়া জয় পেয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছে তারা। ব্যাটে-বলে বাংলাদেশ কোনো পাত্তাই পায়নি। বাংলাদেশের ব্যাটাররা ব্যর্থতা কাটিয়ে ভালো করতে পারেননি।

বিশেষ করে টপঅর্ডারে লিটন কুমার দাস ১৫ বলে ১৪, অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ১১ বলে ৩ এবং পরবর্তীতে সাকিব আল হাসানের ১২ বলে ৬ রানের ইনিংসগুলো ডুবিয়েছে বাংলাদেশকে। ম্যাচশেষে অধিনায়ক শান্ত দাবি করেছেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সর্বশেষ সিরিজে ভালো উইকেটে না খেলার প্রভাবে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ব্যাটাররা সংগ্রাম করেছেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের বোলিং আক্রমণ কি এতটাই আহামরি কিছু?

তাদের বোলাররা টি২০ র‌্যাঙ্কিংয়ে কোথায় আছেন? মার্কিনিদের বিপক্ষেও ম্যাচ হেরে অজুহাত খুঁজতে হয় বাংলাদেশ অধিনায়ককে? তিনি এটাও বলেছেন যে, ২০ রানের মতো কম হয়েছে ব্যাটিংয়ে। এমন সব কথামালা এখন টেপ রেকর্ডারে রেকর্ড করা বুলির মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রতিটি সিরিজে। ডেথ বোলিংয়েও এমন দুর্বল দলের টেলএন্ডারদের কাছে ২৭ বলে ৬২ রান খরচা করেছেন মুস্তাফিজুর রহমান ও শরিফুল ইসলাম।

তাহলে বোলিংয়েই ভরসা কে? এসবের উত্তর আজ থেকেই পেতে হবে বাংলাদেশ দলকে। কারণ আজ ম্যাচ হারলেই আরেকটি বড় ধাক্কা ও বিশে^র জন্য চমক হয়ে যাবে- যুক্তরাষ্ট্র সিরিজ জিতে যাবে। 
আজ সেটি না পারলেও স্বাগতিকদের আরেকটি সুযোগ রয়েছে দ্বিতীয় ম্যাচে। সেজন্য উজ্জীবিত, অনুপ্রাণিত দলটির আত্মবিশ^াস এখন তুঙ্গে। হংকং, স্কটল্যান্ড, নেদারল্যান্ডসের মতো আইসিসির সহযোগী সদস্য দেশের কাছে টি২০ হারের স্বাদ পেয়েছে বাংলাদেশ। বিশ^কাপে নেদারল্যান্ডস ও নেপালের গ্রুপে আছে তারা, তাই তাদের কাছেও ধাক্কা খাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

×