ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৯ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

বিশ্বকাপে নজর থাকবে যাদের ওপর

জিএম মোস্তফা

প্রকাশিত: ০১:১৭, ৪ অক্টোবর ২০২৩

বিশ্বকাপে নজর থাকবে যাদের ওপর

বিশ্বকাপে নজর থাকবে যাদের ওপর

শুবমান গিল ॥ এই মুহূর্তে ভারতের ব্যাটিং লাইনআপে সবচেয়ে ফর্মে থাকা ব্যাটারের নাম শুবমান গিল। আইপিএল থেকে জাতীয় দল, সাদা পোশাক কিংবা রঙিন, সবখানেই সমানভাবে নিজের জাত চিনিয়েছেন এই হার্ড-হিটার ওপেনার। বিশ্বকাপের আগেও রীতিমতো উড়ছেন তিনি। সদ্য সমাপ্ত এশিয়া কাপে অষ্টম শিরোপার উল্লাসে মাতে ভারত। যার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন গিল। আসরের ৬ ম্যাচে ৭৫.৫০ গড়ে এক সেঞ্চুরি আর দুই অর্ধশতকের সৌজন্যে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ ৩০২ রান এসেছিল তার ব্যাট থেকে। এরপর ঘরের মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টানা দুই ওয়ানডে জয়ের পথেও তার পারফর্মেন্স ছিল প্রশংসনীয়।

যেখানে ক্যারিয়ারে ষষ্ঠ আর চলতি বছর নিজের পঞ্চম ওয়ানডে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে উঠে আসেন আলোচনার তুঙ্গে। ৩৫ ওয়ানডের ক্যারিয়ারে ইতোমধ্যেই ছয়টি সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন। যার একটি ডাবল। সঙ্গে হাফ সেঞ্চুরি ৯টি। ক্যারিয়ারে ৬ সেঞ্চুরির পাঁচটিই এসেছে চলতি বছরে। ক্যারিয়ার গড় যেখানে ৬৬.১০, এ বছরে সেটা ৭২.৩৫। ৩৫ ওয়ানডের ৩৫ ইনিংসে গিলের মোট রান ১৯১৭। যা বিশ্বরেকর্ড। এবার ঘরের মাটিতে অনুষ্ঠিত স্বপ্নের বিশ্বকাপেও নিজেকে মেলে ধরতে উন্মুখ হয়ে রয়েছেন শুভমান গিল।
বাবর আজম ॥ বিশ্ব ক্রিকেটে অভিষেকের পর থেকেই ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করে যাচ্ছেন বাবর আজম। সুদক্ষ নেতৃত্বের পাশাপাশি ব্যাট হাতেও পাকিস্তানকে টেনে নিচ্ছেন তিনি। তার নেতৃত্বেই এশিয়া কাপের ঠিক পূর্ব মুহূর্তে ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর স্থানটি দখল করেছিল পাকিস্তান। এশিয়া কাপে নিজেদের প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারলেও চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের মাটিতে বিশ্বকাপে সেরাটা ঢেলে দিতে চান পাক অধিনায়ক। বিশ্বকাপে বাবারকে চেনা ছন্দে দেখা যাবে বলে বিশ্বাস করেন খোদ ভারতের সাবেক ক্রিকেটার গৌতম গম্ভীর। এই বিশ্বকাপে বাবর তিন থেকে চারটি সেষ্ণুরি করবেন বলেও ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন তিনি।
কুসল মেন্ডিস ॥ ঘরের মাটিতে সদ্যসমাপ্ত এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলেছে শ্রীলঙ্কা। শিরোপার লড়াইটা খুব বাজেভাবে কাটলেও বিশ্বকাপে ঠিকই সমীহ জাগানিয়া দল তারা। ভারত বিশ্বকাপে বাড়তি নজর থাকবে সিংহলীজদের অভিজ্ঞ ব্যাটার কুসল মেন্ডিসের উপর। লম্বা ইনিংস খেলার সামর্থ্য রয়েছে তার। নিজেদের মাটিতে এশিয়া কাপে ৩ হাফ-সেষ্ণুরিতে ৪৫ গড়ে করেছিলেন আসরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৭০ রান। ১১২ ওয়ানডের ক্যারিয়ারে তার সেষ্ণুরি ২টি। হাফ-সেষ্ণুরি ২৫টি। রান ৩২১৫। ২০১৯ বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্ব থেকে ছিটকে গিয়েছিল সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন লঙ্কানরা। এবার ভারতের মাটিতে নিজেদের দ্বিতীয় শিরোপা জিততে হলে বড় ভূমিকাটা যে রাখতে হবে কুসল মেন্ডিসকেই। 
রশিদ খান ॥ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকের পর থেকেই নান্দনিক পারফর্মেন্স উপহার দিয়ে গোটা দুনিয়ার নজর কেড়ে নিয়েছেন রশিদ খান। ছোট দেশের বড় তারকা হিসেবে খ্যাতি পাওয়া রশিদ খান ক্রিকেট খেলুড়ে প্রতিটি দেশের ফ্র্যাঞ্চাইজি লীগেই নিয়মিত খেলেন। ৯৪টি ওয়ানডে ম্যাচে প্রতিনিধিত্ব করে ১৭২ উইকেট দখল করা এই বিশ্বসেরা স্পিনারের এককহাতেই যে কোনো ম্যাচ জেতানোর দক্ষতা রয়েছে। ভারতের মাটিতে বিশ্বকাপেও তাই আফগানদের সেরা হাতিয়ারের নাম এই রশিদ খান।
বেন স্টোকস ॥ ২০১৯ সালে ঘরের মাটিতে বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পেয়েছিল ইংল্যান্ড। সেই বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক ছিলেন বেন স্টোকস। শুধু তাই নয়? গত বছর টি২০ বিশ্বকাপ জয়েরও নায়ক ছিলেন ৩২ বছর বয়সী এই তারকা অলরাউন্ডার। কিন্তু ২০২২ সালে হঠাৎ করেই ওয়ানডে থেকে অবসরে চলে যান বেন স্টোকস। তবে বিশ্বকাপের আগে অবসর ভেঙ্গে আবারও তাকে দলে ডাকে ইংল্যান্ড। বড় মঞ্চের বড় তারকাকে ঘিরে এবার তাই ভারতেও বিশ্বকাপ ধরে রাখার স্বপ্ন দেখছে ইংল্যান্ড। বিশ্বকাপের আগে সম্প্রতি অ্যাশেজ সিরিজের লর্ডস টেস্টে ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অধিনায়ক বেন স্টোকসের ব্যাটিং ছিল দুর্দান্ত। ১৫৫ রানের একটা দুর্ধর্ষ ইনিংসের পর লিডস টেস্টে খেলেন ৮০ রানের আরও একটি ঝলমলিয়ে ইনিংস। মূলত ব্যাট হাতে অসাধারণ পারফর্মেন্সের কারণেই তাকে আবারও একদিনের ক্রিকেটে ফেরায় ইসিবি।  
ডেভিড ওয়ার্নার ॥ আসছে ২৭ অক্টোবর সাইত্রিশ বছওে পা দেবেন ডেভিড ওয়ার্নার। এখনো অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট দলের অন্যতম ভরসার নাম। বিভিন্ন কেলেঙ্কারি আর বাজে সময়ের কারণে সমালোচিত হলেও আত্মবিশ্বাস আর সুদৃঢ় মানসিকতার কারণে ডেভিড ওয়ার্নার ২০২৩ বিশ্বকাপেও অস্ট্রেলিয়ার মূল ভরসা। ২০০৯ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক। এরপর থেকেই অজিদের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন বাঁহাতি ওই ওপেনার। ক্যারিয়ারের গোধূলিতেও অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং অর্ডারের কেন্দ্রবিন্দুতে ওয়ার্নার। ওয়ানডে ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সেষ্ণুরির মালিক ওয়ার্নার। ১৫০ ওয়ানডেতে ৪৫.০৪ গড়ে তার রান ৬ হাজার ৩৯০। 

ট্রেন্ট বোল্ট ॥ গত বছর নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডের চুক্তি ভঙ্গ করে বিগ ব্যাশ লিগে খেলতে গিয়েছিলেন ট্রেন্ট বোল্ট। তারপর থেকেই কিউই দলের বাইরে ছিলেন তিনি। এই সময়ে একাধিক সিরিজ থাকলেও তাকে দলে রাখার প্রয়োজন মনে করেনি নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড। তবে ওডিআই বিশ্বকাপের ঠিক আগে এক বছর পর দলে জায়গা পেলেন দেশটির এই তারকা পেসার। মূলত, ভারতের মাটিতে বিশ্বকাপ বলেই তার উপর ভরসা রেখেছে নিউজিল্যান্ড। 
কুইন্টন ডি কক ॥ দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিভাবান ক্রিকেটারদের মধ্যে কুইন্টন ডি কক অন্যতম। ২০২১ সালেই সাদা পোশাককে বিদায় বলে দেওয়া ৩০ বছর বয়সী এই ক্রিকেটারের এটাই শেষ বিশ্বকাপ। ভারত বিশ্বকাপের জন্য যেদিন ১৫ সদস্যেও দল ঘোষণা করে দক্ষিণ আফ্রিকা ঠিক সেদিনই অপ্রত্যাশিতভাবেই নিজেরে অবসরের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেন তিনি। ২০১৩ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেক হয় ডি ককের। একই বছর ভারতের বিপক্ষে সিরিজের তিন ম্যাচে সেষ্ণুরি হাঁকিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন এই ওপেনার। ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপেও আলো ছড়ানোর প্রত্যাশা করছেন তার ভক্ত-অনুরাগীরা। এখন পর্যন্ত ১৪৫ ওয়ানডে খেলে ৪৪.৭৫ গড়ে ৬ হাজার ১৭৫ রান করেছেন তিনি।

×