
রাত পোহালেই বিশ্ব ক্রিকেটে শ্রেষ্ঠত্বের আয়োজন
আর মাত্র একদিন। রাত পোহালেই বিশ্ব ক্রিকেটে শ্রেষ্ঠত্বের আয়োজন। বৃহস্পতিবার আহমেদাবাদে বিশ্বের সর্বোচ্চ দর্শক ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের ১৩তম আসরের উদ্বোধনী ম্যাচে মুখোমুখি ‘ডিফেন্ডিং’ চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড ও রানার্সআপ নিউজিল্যান্ড। ৭ অক্টোবর ধর্মশালায় আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শুরু বাংলাদেশের মিশন। ভারত যদি হয় সময়ের সেরা ক্রিকেট পাগল জাতি, তবে সে উন্মাদনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছেন টাইগার ভক্তরা। অবশ্যই সেটি মাঠের সাফল্য এবং ক্রিকেটারদের তারকা খ্যাতির জন্য। বৈষয়িক শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চে এবার নেতৃত্বের গুরুভার যার কাঁধে সেই সাকিব আল হাসান বিশ্ব ক্রিকেটেই সময়ের বড় তারকাদের একজন।
মুস্তাফিজুর রহমান, তাসকিন আহমেদ, হাসান মাহমুদদের নিয়ে গড়া দুর্দান্ত পেস আক্রমণ, ব্যাট হাতে নিউ সেনসেশন তাওহিদ হৃদয়। নাজমুল হোসেন শান্ত, মেহেদি হাসান মিরাজের ওপর চোখ রাখতে বলছেন বিখ্যাত ধারাভাষ্যকার ও ক্রিকেট বিশ্লেষক হার্ষা ভোগলে। তামিম ইকবাল-ইস্যু পেছনে ফেলে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে দারুণ জয় পাওয়া টাইগাররা ইংল্যান্ডের সঙ্গে বৃষ্টিবিঘিœত দ্বিতীয় ম্যাচেও মন্দ করেনি।
বিশ্বকাপের ঠিক আগে প্রতিটি দলই যখন ক্যাম্প করে, দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলে নিজেদের ঝাঁলিয়ে নিচ্ছিল, বাংলাদেশ তখন আলোচনায় তামিম-ইস্যুতে। আরও একবার প্রকাশ্যে আসে সাকিবের সঙ্গে দ্বন্দ্বের বিষয়। শ্বাসরুদ্ধকর দুদিনের সমাপ্তি হয় তামিমকে বাদ দিয়ে বিশ্বকাপের দল ঘোষণার মধ্য দিয়ে। এমন একটি নেতিবাচক ঘটনা সঙ্গী করে বিশ্বকাপ খেলতে ভারতে পাড়ি জমানো দল বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চে কেমন করে, এ নিয়ে প্রশ্ন-সংশয়ের শেষ নেই। আছে ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের কাছে সিরিজ হারের ধাক্কা। ভারতে গিয়ে তাতে যোগ হয় ফুটবল খেলতে গিয়ে সাকিবের পায়ের চোট। শান্তকে বিশ্রামে রেখে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে নেতৃত্ব দেন মিরাজ।
গোহাটিতে প্রতিপক্ষকে ২৬৩ রানে গুটিয়ে দিয়ে সেই স্কোর বাংলাদেশ টপকে যায় ৭ উইকেট ও ৪৮ বল হাতে রেখে। দারুণ বোলিং করেন স্পিনার মাহাদি হাসান (৩/৩৬)। ব্যাটিংয়ে ছন্দে ফেরা লিটন দাস (৮৪), তামিমের জায়গায় ওপেনিংয়ে তার সঙ্গী আরেক তামিম (তানজিদ হাসান ৬১) ও মিরাজ (অপরাজিত ৬৭) ব্যাট হাতে জ্বলে ওঠেন। ইংল্যান্ডের সঙ্গে বৃষ্টিবিঘিœত দ্বিতীয় প্রস্তুতি ম্যাচে ৪ উইকেটের হারের দায় অবশ্য ব্যাটসম্যানদের। একই ভেন্যুতে শান্তর নেতৃত্বে ৩৭ ওভারে ৯ উইকেটে ১৮৮ রান করে বাংলাদেশ। তানজিদ (৪৫) আর মিরাজ (৭৪) ছাড়া কেউই সুবিধা করতে পারেননি। অল্প পুঁজি নিয়েও পেসাররা ভালো বল করেছেন। ৩ ওভারেই ২ উইকেট নিয়েছেন মুস্তাফিজ। প্রস্তুতি ম্যাচ তো প্রস্তুতি ম্যাচই।
কেউ ব্যাটিংয়ের মধ্যপথে রিটার্ড করে ড্রেসিং রুমে ফিরে যাচ্ছেন, কেউ আবার বোলিং স্পেল শেষেই বিশ্রাম নিচ্ছেন। সুতরাং এটিকে খুব বড় করে দেখার সুযোগ নেই। এরপরও এসব ম্যাচের সাফল্য মুল মঞ্চে পা-দেয়ার আগে দলকে চাঙ্গা রাখে। ফরম্যাট বিবেচনায় নিলে টাইগারদের এমনিতেই চাঙ্গা থাকার কথা। ওডিআই সুপার লিগে ২৪ ম্যাচে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৫ জয়ে আয়োজক ভারত ও চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের পর তৃতীয় দল হিসেবে বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। পঞ্চাশ ওভারের ক্রিকেটে বাংলাদেশ কতটা ভালো, এই তথ্য তারই প্রমাণ। দুটি এশিয়া কাপের ফাইনাল, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনাল, বিশ্বকাপের কোয়ার্টারÑ অর্জনের যত সুখস্মৃতি সবই ওয়ানডে ফরম্যাটে।
তামিম-বিতর্ক পেছনে ফেলে সুপার সাকিব কি পারবেন দলকে এক সুতোয় গেঁথে নিজেদের প্রিয় ফরম্যাটের সর্বোচ্চ আসরে স্মরণীয় কিছু করতে? সেটিই দেখার অপেক্ষা। দশ দলের বিশ্বকাপে প্রতিটি দলের সঙ্গে খেলা আছে। অর্থাৎ প্রতিটি দল নয়টি করে ম্যাচ পাচ্ছে। সেরা চার দলের মধ্যে হবে সেমিফাইনাল। লিগ-পর্বে আফগানিস্তানের পর ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। পর্যায়ক্রমে খেলা নিউজিল্যান্ড, ভারত, দ.আফ্রিকা, নেদারল্যান্ডস, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে।