ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

হতাশায় ফুটবলকে বিদায় জার্মান তারকা ওজিলের

আয়ান আব্রাজ

প্রকাশিত: ০০:২৭, ২৯ মার্চ ২০২৩

হতাশায় ফুটবলকে বিদায় জার্মান তারকা ওজিলের

বিশ্বকাপ ট্রফি হাতে সতীর্থের সঙ্গে জার্মানির কৃতী ফরোয়ার্ড মেসুত ওজিল

বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম সেরা মিডফিল্ডার হিসেবে বিবেচনা করা হতো মেসুত ওজিলকে। জার্মানির হয়ে বিশ্বকাপ জয়েরও স্বাদ পেয়েছেন তিনি। কিন্তু দুর্ভাগ্য তার। ঘটনাবহুল নানা কারণে মাত্র ৩৪ বছর বয়সেই সব ধরনের ফুটবল থেকে বিদায়ের ঘোষণা দিয়েছেন শালকে, রিয়াল মাদ্রিদ এবং আর্সেনালের মতো ক্লাবে খেলা এই তারকা ফুটবলার। জাতীয় দলকে বিদায় বলেছেন আরও আগেই। চলতি বছরের শুরুতে ক্লাব ফুটবলকেও ইতি টানলেন তিনি।

মূলত, ইংলিশ জায়ান্ট আর্সেনাল ছেড়ে তুরস্কে যাওয়ার পরই নিজের ক্যারিয়ারের শেষ দেখে ফেলেছিলেন ওজিল। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে তুরস্কের ক্লাব ফেনারবাখেতে যোগ দেওয়ার পর থেকে ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত মাত্র ৩৬টি প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলেছেন জার্মানির সাবেক এই তারকা মিডফিল্ডার। নানা ঘটনার পাশাপাশি গোধূলিবেলায় ইনজুরিও শেষ করে দিয়েছে তার বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার।  
ওজিলকে বলা হতো তার প্রজন্মের সেরা ফুটবলারদের একজন। জার্মানির হয়ে ২০০৯ সালের অভিষেক হয়েছিল তার। ২০১৪ সালের বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম কারিগরও ছিলেন তিনি। নিজের ১৭ বছরের ক্যারিয়ারে ওজিল ক্লাব এবং জার্মাানির হয়ে মোট ৬৪৫টি ম্যাচে মাঠে নেমেছেন। তিনি মোট ১১৪টি গোল করেছেন। ২২২টি গোলে সতীর্থদের সহযোগিতা করেছেন ওজিল।

ওজিল তার বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে ইংলিশ ক্লাব আর্সেনাল, জার্মান লীগের ক্লাব শালকে ০৪, ওয়ের্ডার ব্রেমেন, ফেনেরবাখ,  স্পেনের রিয়াল মাদ্রিদ, ইস্তাম্বুল বাসাকসেহিতে খেলেছেন। জার্মানির দুই ক্লাব শালকে ও ব্রেমেনের অধ্যায় শেষে ২০১০ সালে যোগ দেন স্প্যানিশ জায়ান্ট রিয়াল মাদ্রিদে। সেখানে দুর্দান্ত তিন মৌসুম কাটিয়ে নতুন করে ঠিকানা গড়েন আর্সেনালে। যেখানে ওজিল কাটান তার ক্যারিয়ারের সেরা সময়। কিন্তু ইনজুরির কারণে যখন আর্সেনালে জায়গা হারিয়ে ফেলেছিলেন ওজিল, তখনই নতুন শুরুর আশায় ২০২১ সালে তুরস্কের ক্লাব ফেনারবাখে যোগ দেন এই জার্মান কিংবদন্তি। তবে সেখানেও তার সময়টা ভালো কাটল না।
একটা সময় তার ক্যারিয়ারে ফুটবল ছাপিয়ে বড় হয়ে উঠেছিল রাজনীতি আর সে সংক্রান্ত আলোচনা। বর্ণবাদসহ নানা ইস্যুতে তার অবস্থান এবং বক্তব্যের জন্য আলোচিত হয়েছেন বারবার। ওজিল ২০১৮ সালের জুলাই মাসে বর্ণবাদ ও অসম্মানজনক আচরণে ক্ষুব্ধ হয়েই জার্মানির জাতীয় দল থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছিলেন। বিবৃতিতে তিনি বলেছিলেন, তুর্কি বংশোদ্ভূত হওয়ার কারণেই তাকে অপমান সহ্য করতে হয়েছে। এর আগে লন্ডনে ২০১৮ সালের মে মাসে তাইপে এরদোগানের সঙ্গে একটি ছবি তোলার পর ওজিলকে নিয়ে জার্মানিতে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছিল।

এরদোগানের সঙ্গে ওজিলের সেই সাক্ষাতের সময় সঙ্গে ছিলেন তুর্কি বংশোদ্ভূত আরেক জার্মান মিডফিল্ডার ইলকায়ে গুন্দোয়ানও। গুন্দোয়ান অবশ্য এক বিবৃতিতে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে লিখেছিলেন তিনি জার্মানির ভাবমূর্তি সমুন্নত রাখতে শতভাগ মরিয়া এবং কোনো ধরনের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তিনি এরদোগানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি। কিন্তু সেই সাক্ষাৎ ছিল তুরস্কের জাতীয় নির্বাচনের একটি প্রচারণায়, যা জার্মান কর্তৃপক্ষ ভালোভাবে নেয়নি সেসময়।

সেই সাক্ষাতের জন্য ওজিল এবং গুন্দোয়ান জার্মান এফএর থেকে কারণ দর্শানো নোটিশ পেয়েছিলেন। ওজিল তখন বলেছিলেন, ‘এরদোগানের সঙ্গে ব্রিটেনের রানী দেখা করেছেন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে দেখা করেছেন, আমি দেখা করলে সমস্যা কোথায়? এটা রাজনীতি বা নির্বাচনের বিষয় ছিল না, এটা ছিল সম্মানের বিষয়। আমার পরিবার যেখান থেকে এসেছে সেই দেশের সর্বোচ্চ দপ্তরকে সম্মানের বিষয়।’
এখন ফুটবলহীন জীবন কাটাচ্ছেন ওজিল। তবে সেই জীবনেও ফুটবল নিয়ে কথা বলতে হচ্ছে তুরস্কের বংশোদ্ভূত এই জার্মান ফুটবলারকে। সম্প্রতি স্প্যানিশ ক্রীড়া দৈনিক মার্কার সঙ্গে এক দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে নিজের খেলোয়াড়ি জীবনের স্মৃতিচারণা করেছেন রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক মিডফিল্ডার। সেখানেই শুনিয়েছেন বার্সেলোনার খেলার ধরন পছন্দ হওয়ার পরও তিনি কিভাবে মাদ্রিদের খেলোয়াড় হয়ে গেলেন সেই গল্প।

বার্সেলোনার তখনকার কোচ পেপ গার্দিওলার অবহেলা আর রিয়াল মাদ্রিদের তখনকার কোচ হোসে মরিনহোর কাছ থেকে পাওয়া সম্মানই নাকি তার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে দিয়েছিল। ২০১০ বিশ্বকাপে দুর্দান্ত পারফর্ম করেই বড় ক্লাবগুলোর চোখে পড়েন সেই সময়ে ওয়ের্ডার ব্রেমেনে থাকা ওজিল। তাকে পাওয়ার দৌড়ে নেমেছিল রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনা ও আর্সেনালের মতো ক্লাব। 
শেষ পর্যন্ত কিসের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে ওজিল বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত ব্যাপারটা এমন দাঁড়াল, আমাকে রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনার মধ্যে একটা ক্লাব বেছে নিতে হবে। টাকাপয়সা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো কিছু ছিল না। আমি ঠিক করলাম, দুটি ক্লাবই ঘুরে দেখে তারপর সিদ্ধান্ত নেব। সেই সময় জোসে মরিনহোই ব্যবধানটা গড়ে দিলেন। রিয়াল মাদ্রিদে যাওয়ার পর তিনি আমাকে ভিআইপির সম্মান দিয়ে সব ঘুরিয়ে দেখালেন। আমি অসাধারণ স্টেডিয়ামটা দেখলাম, রিয়াল যত ট্রফি জিতেছে সব দেখলাম। ওসব দেখে আমার রোমাঞ্চকর অনুভূতি হলো।

×