আজ বাংলাদেশ-ভারত হাইভোল্টেজ ম্যাচ

সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে আজ রবিবার অনুষ্ঠিত হবে দুটি ম্যাচ। ঢাকার কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে বিকেল ৩টায় প্রথম ম্যাচে নেপাল মোকাবিলা করবে ভুটানকে। সন্ধ্যা ৭টায় স্বাগতিক বাংলাদেশ মুখোমুখি হবে ভারতের। 
বাংলাদেশ-ভারত উভয় দলই এ পর্যন্ত খেলেছে একটি করে ম্যাচ। ভারত ১২-০ গোলের বিশাল ব্যবধানে হারায় দুর্বল ভুটানকে। আর বাংলাদেশ লড়াই করে ৩-১ গোলে হারায় শক্তিশালী নেপালকে। বাংলাদেশ-ভারত দুদলেরই পয়েন্ট সমান ৩। কিন্তু গোল পার্থক্যে এগিয়ে থাকায় আপাতত ভারতই আছে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে, আর দুইয়ে আছে বাংলাদেশ। 
এই আসরে ভারত হচ্ছে বর্তমান ও একবারের চ্যাম্পিয়ন। তবে তাদের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ। তারা জিতেছে সর্বাধিক দুবার শিরোপা। তাছাড়া ফাইনালে সবচেয়ে বেশিবার খেলার ক্ষেত্রেও এগিয়ে আছে লাল-সবুজ বাহিনী (বাংলাদেশ ৩ বার, ভারত ২ বার)। শুধু তাই নয়, হেড টু হেডের পরিসংখ্যানেও এগিয়ে আছে গোলাম রব্বানী ছোটনের শিষ্যারা। চার বারের মোকাবিলায় বাংলাদেশের জয় যেখানে ৩টিতেই, সেখানে ভারত জিতেছে মাক্র ১ ম্যাচে। ২০২১ সালে গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশ ১-০ গোলে, ফাইনালে ১-০ গোলে এবং ২০২২ সালে গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশ ১-০ গোলে ভারতকে হারিয়েছিল। আর ২০২২ সালের গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশকে ১-০ গোলে হারিয়েছিল ভারত।
এই টুর্নামেন্টের নিয়ম হচ্ছে সিঙ্গেল লিগ ভিত্তিতে সব দল পরস্পরের মুখোমুখি হবে। তারপর সর্বোচ্চ পয়েন্ট পাওয়া শীর্ষ দুই দল ফাইনালে মুখোমুখি হবে। অনেকেই বলছেন, এই টুর্নামেন্টে ফাইনাল খেলবে বাংলাদেশ-ভারত। ফলে আজকের ম্যাচটি যেন ফাইনালের ‘ড্রেস রিহার্সাল’!  
সবদিক থেকেই বাংলাদেশ এগিয়ে থাকলেও ভারত দলেরও একটি বিশেষত্ব আছে। সেটা হচ্ছে কিছুদিন আগে নিজেদের মাটিতে অনুষ্ঠিত ফিফা অনূর্ধ্ব-১৭ নারী বিশ্বকাপে খেলেছে তারা, যে অভিজ্ঞতা নেই বাংলাদেশ দলের। ভারত কোচ মায়মল রকি বলেন, ‘এই টুর্নামেন্টে নিজেদের ফেভারিট মানছি না। বরং বাংলাদেশকেই এগিয়ে রাখব। কারণ সমর্থকরা তাদের ™^াদশ খেলোয়াড়। আমাদের এই দলটি তারুণ্য নির্ভর। বিশ দিনের প্রস্তুতিতে আমরা খেলতে এসেছি। মূলত আমাদের লক্ষ্য হলো এএফসি অনূর্ধ্ব-২০ চ্যা¤িয়নশিপ।’ 
আগেরদিন নেপালের বিরুদ্ধে খেলতে গিয়ে চোয়ালে চোট পেয়ে ম্যাচে দ্বিতীয়ার্ধে আর খেলতে পারেননি বাংলাদেশ অধিনায়ক-ফরোয়ার্ড শামসুন্নাহার জুনিয়র। মাঠেই তাকে বেশ অসুস্থ দেখাচ্ছিল। মাঠেই তাকে স্যালাইন দেয়া হয়। পরে তাকে জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলেন কোচ ছোটন জানান, মাথায় চোট পাবার পর শামসুন্নাহারের সাময়িক ‘স্মৃতিভ্রম’ হয়েছিল! সংবাদ মাধ্যমে বিষয়টি প্রকাশিত হলে বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীদের মাঝে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। তবে শনিবার জানা যায়, শামসুন্নাহার সুস্থ আছেন, শুক্রবার রাতেই তাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়া হয়। 
শনিবার সকালে শামসুন্নাহার জুনিয়র দলের সঙ্গে অনুশীলন করতে মাঠেও যান। তবে দল ফুটবল নিয়ে অনুশীলন করলে এবং স্ট্রেচিং করলে তাতে তিনি অংশ নেননি। তবে ‘আইস বাথ’ নিয়েছেন। তখন তিনি ঠিকমতো কথাই বলতে পারছিলেন না! চিকিৎসা শেষে মোটামুটি সুস্থ হয়েছেন ঠিকই। তবে আজ তিনি ভারতের বিরুদ্ধে ‘হাইভোল্টেজ’ ম্যাচে আদৌ খেলার মতো অবস্থায় আছেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়।

সকালে অনুশীলনের সময়ও শামসুন্নাহারের বাঁ হাতে ক্যানোলা দেখা গেছে। অনুশীলন শেষে ডাক্তারের নিদের্শ মোতাবেক ওষুধও খান।  শামসুন্নাহারের প্রসঙ্গে কোচ ছোটন বলেন, ‘ওর (শামসুন্নাহার) চোট তত গুরুতর নয়, আজ সে মাঠে এসেছে। এখানে সে অনুশীলনে যা যা করার, সেগুলো করেছে। আল্লাহর রহমতে ভালো আছে সে, কোনো সমস্যা নেই। যেহেতু ডাক্তার ওকে বিশ্রামের পরামর্শ দেননি, তাই মাঠে এসেছে। তাছাড়া আমাদের ফিজিও সবসময় ওকে পর্যবেক্ষণে রেখেছে।’
আগেরদিন নেপালের বিরুদ্ধে চমৎকার একটা গোলও (দলের দ্বিতীয় গোল) করেছিলেন শামসুন্নাহার। ছোটন বলেন, ‘সে আমাদের দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে তাকে নিয়েই সবরকম পরিকল্পনা থাকবে। ম্যাচ শুরুর আগ পর্যন্ত তার জন্য অপেক্ষা করা হবে।’ শামসুন্নাহার বলেছেন, ‘এখন আমি সুস্থ আছি। শুধু চোয়ালে আঘাত পাওয়ার কারণে মুখে প্রচ- ব্যথা আছে। এজন্য ভালোভাবে কারও সঙ্গে কোনো কথা বলতে পারছি না।’

এদিকে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন শামসুন্নাহারকে নিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছে, ‘...উল্লেখ্য, বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক শামসুন্নাহার বর্তমানে সুস্থ আছে এবং আজ দলের সঙ্গে অনুশীলনে অংশগ্রহণ করে। বাংলাদেশ দলের প্রশিক্ষকগণ আশা করেন আগামীকালের ম্যাচে শামসুন্নাহার খেলার জন্য প্রস্তুত হয়ে উঠবে।’ এখন দেখার বিষয়, আজকের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে শামসুন্নাহার খেলেন কি না এবং বাংলাদেশ কেমন ফল করে।