ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

যে কারণে ফের কোচ হাতুরু!

শাকিল আহমেদ মিরাজ

প্রকাশিত: ০০:৩৪, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

যে কারণে ফের কোচ হাতুরু!

চন্দ্রিকা হাতুরুসিংহে

সন্দেহ নেই চন্দ্রিকা হাতুরুসিংহে ছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের ইতিহাসের অন্যতম সফল কোচ। ২০১৪ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত তিন বছরের পরিসংখ্যানও তাই বলে। কিন্তু সমালোচনা কেন? কারণ তার বিদায়। নিজ দেশ শ্রীলঙ্কার কাছ থেকে বেশি বেতন পেয়ে তিনি যেভাবে চলে গিয়েছিলেন, সেটি ছিল চরম অপেশাদার। এমনকি দেশেও ফেরেননি, দক্ষিণ আফ্রিকা সফর থেকে সরাসরি চলে গিয়ে মেইলে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।

আবার নিজ দেশ থেকে বিতারিত হয়ে অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে যে নিউসাউথওয়েলসের সহকারী কোচের দায়িত্ব নিয়েছিলেন, এবার বাংলাদেশের প্রস্তাবের বিষয়টি জানিয়ে তাদের সঙ্গেও বেতন নিয়ে দর কষাকষি করেছেন! পরিসংখ্যানে সফল হলেও আগেরবার  দল থেকে সিনিয়র তাড়ানোর অভিযানে নামা হাতুরুর ইগো সমস্যাও প্রকট হয়ে উঠেছিল। বোর্ড (বিসিবি) প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান ছাড়া আর কাউকেই পাত্তা দেননি। এমনকি নির্বাচকদেরও নয়। তবে কি শুধু অতীত সাফল্যে মাথায় রেখেই তাকে আবারও ফিরিয়ে আনা? সেই সব নিয়েই কথা বলেছেন বিসিবি বস।
নাজমুল হাসানের বক্তব্য, ‘অনেক কারণে নিয়েছি। আগের অভিজ্ঞতা একটা। আরেকটা হচ্ছে হাই লেভেল বা মিড লেভেলেও যদি আমরা কাউকে চাই, তারা একটানা থাকবে না। ওরা দিনের হিসাব করে, ১০০ দিন, ২০০ দিন। ২০০ দিনের বেশি করবেই না।’ আন্তর্জাতিক মানের হাইপ্রোফাইল কোচ এখন কোনো দেশের চেয়ে আইপিএল, সিপিএলের মতো ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে দলগুলোর কোচিং করাতে বেশি পছন্দ করে। কারণ অল্প সময়ে বেশি টাকা। বাংলাদেশের কোচ হওয়ার দৌড়ে আরও যারা ছিলেন তারা কেউই সারা বছর দলের সঙ্গে থাকতে পারতেন না।

হাতুরুকে বেছে নেয়ার এটিও বড় কারণ,‘বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে কাজ করে (কোচরা)। ওই সময় ছুটি দিতে হবে। কিন্তু ওই সময় ছুটি দিলাম, তখন জাতীয় দলের খেলা থাকলে কী হবে? এসব কিছুতে হাতুরুসিংহের কোনো সমস্যা নেই। ও যেটা ধরে সেটাতেই থাকে। এটা একটা বিরাট সুবিধা।’ আরও একটি বিশেষ কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন,‘ এরই মধ্যে আমরা  প্রোগ্রাম ম্যানেজার (ডেভিড মুর) নিয়েছি, সেও নিউসাউথওয়েলসের। সব প্রোগ্রামের মধ্যে সমন্বয়ের জন্য এটা করা হয়েছে।’ হাতুরুসিংহে কি দল নির্বাচন প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকবেন? এ প্রসঙ্গে কৌশলি নাজমুল হাসান, ‘এটা বোর্ড ঠিক করবে (নির্বাচক প্যানেল)। নির্বাচন দুই ধাপে হয়। একটা প্রাথমিক, আরেকটা ফাইনাল। ফাইনাল কোচ আর অধিনায়ক দুজন নেয়।’ হাতুরুকে ফেরানো নিয়ে কি সিনিয়র ক্রিকেটার সঙ্গে কথা হয়েছে? নাজমুল হাসান বলেন, ‘মাশরাফির সঙ্গে কথা হয়েছে বহু আগে, তামিমের সঙ্গেও কথা হয়েছে। সাকিবের সঙ্গে বোধ হয় বলেছিলাম। মাশরাফি-তামিম-সাকিব তিনজনই বলেছে, উনি আসলে খুবই ভালো।’ 
হাতুরুর পাশাপাশি তিন-চারজন সহকারী  কোচ নিয়োগের কথাও ভাবছে বিসিবি, ‘আমরা খুঁজছি সহকারী কোচ। কারো পক্ষেই সব প্রোগ্রামে থাকা সম্ভব হবে না। কেউ এক সিরিজে না থাকলে অন্য একজন গেল। সহকারী কোচ যদি পাই। অনেকের সঙ্গে কথা বলছি তাই নাম বলতে চাই না। উপমহাদেশের একজন আছে, আর তিনজনই বাইরের।’ গত মঙ্গলবার হাতুরুসিংহে নিউ সাউথ ওয়েলসের সহকারী কোচের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর পরও বিসিবি থেকে কোনোরকম বক্তব্য দেওয়া হয়নি। কিন্তু হঠাৎ সন্ধ্যায় আসে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা, হাতুরুসিংহেই বাংলাদেশ জাতীয় দলের নতুন হেড কোচ।

বিসিবি প্রধান বলেন, ‘আমাদের পরিকল্পনা ছিল ও (হাতুরু) আসার কিছুদিন আগে বলব। যেহেতু আমি কাল (বুধবার) চলে যাচ্ছি এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের সভায়। কাজেই কে আবার কী বলে না বলে, কোনো ঠিক নেই!  সেজন্য দ্বিধা দূর করে ফেলাই ভালো।’ বিসিবি সভাপতি জানিয়েছেন, হাতুরু সিংহে টেস্ট, ওয়ানডে আর টি২০ তিন ফরম্যাটেই প্রধান কোচের দায়িত্ব পালন করবেন। তার চুক্তির প্রাথমিক মেয়াদ ২ বছর। তাহলে টি২০ কনসালট্যান্ড শ্রীরাম? বিসিবি প্রধান বলেন, ‘শ্রীধরন শ্রীরামের ব্যাপারটি এখনও চূড়ান্ত হয়নি।’
২০১৪ সালের জুন থেকে ২০১৭Ñএর অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ ছিলেন হাতুরুসিংহে। প্রথম দফায় কাগজ-কলমে তাকে সফলই বলতে হবে। ২১ টেস্টের মধ্যে জয় ৬টিতে, ৫২ ওয়ানডের মধ্যে জয় ২৫টিতে ও ২৯টি টি২০ খেলে জয় ছিল ১০টিতে। টেস্ট, ওয়ানডে এবং টি২০ সিরিজ জয় এসেছে যথাক্রমে ১, ৬ ও ১টি। বাংলাদেশের ক্রিকেটের টালমাটাল একটা সময়ে দায়িত্ব নিয়েছিলেন আলোচিত এ শ্রীলঙ্কান।

এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেসহ টানা ছয়টি ওয়ানডে সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ। ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপের কোয়ার্টারের পর ২০১৭ সালে হাতুরুসিংহের অধীনেই বাংলাদেশ ওঠে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনালে। তার সময়ে টেস্টে বাংলাদেশ জয় পেয়েছিল ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে।

×