শ্রীধরন শ্রীরামের
বাংলাদেশের সঙ্গে শ্রীধরন শ্রীরামের নামটা বেশ জড়িয়ে আছে। ভারতের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলের প্রথম জয় ২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে। ১৫ রানের সেদিন ভারতকে হারিয়ে ঐতিহাসিক জয় পায় বাংলাদেশ দল। ওই ম্যাচে ক্যারিয়ারসেরা ৫৭ রান করেন শ্রীরাম ৪ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে।
দলের সর্বোচ্চ স্কোরার হয়েও ১৫ রানের হার ঠেকাতে পারেননি। সেটি আবার ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ ছিল শ্রীরামের। বাঁহাতি এই মিডলঅর্ডার ব্যাটার আবার বাঁহাতি স্পিনেও ছিলেন কার্যকর। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ার তেমন সমৃদ্ধ না হলেও প্রথম শ্রেণী ও লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে দারুণ পারফর্মেন্স দেখানো শ্রীরামের কোচিং ক্যারিয়ারটা বেশ সমৃদ্ধ। তাকেই এবার সঙ্কটাপন্ন বাংলাদেশ টি২০ দলের টেকনিক্যাল কনসালটেন্ট হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।
টি২০ ক্রিকেটে বাংলাদেশের দুর্বলতা কাটাতেই তাকে আগামী টি২০ বিশ্বকাপ পর্যন্ত দায়িত্ব দিচ্ছে বিসিবি। যদিও প্রধান কোচ রাসেল ডোমিঙ্গোর জায়গায় শ্রীরামই কোচ হচ্ছেন এমন গুঞ্জন আছে, কিন্তু বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন পরিষ্কার করে কিছু বলেননি। রবিবার বাংলাদেশে আসার কথা রয়েছে ৪৬ বছর বয়সী শ্রীরামের।
বাংলাদেশ টি২০ দলের কোচ হিসেবে ডোমিঙ্গো নাও থাকতে পারেন। এশিয়া কাপ থেকেই টি২০ দলে ব্যাপক পরিবর্তনের ঘোষণা ১ দিন আগেই দেন বিসিবি সভাপতি পাপন। তারই প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে শ্রীরামের নিয়োগকে বিবেচনা করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে ডোমিঙ্গোকে শুধু ওয়ানডে ও টেস্টের দায়িত্বে রাখার সম্ভাবনা রয়েছে।
আর শ্রীরাম পুরোপুরি টি২০ দলের দায়িত্ব নেবেন। যদিও ডোমিঙ্গোকে টি২০ দল থেকে সরিয়ে দেয়ার বিষয়ে পাপন কিছু বলেননি। তিনি এ বিষযে বলেছেন, ‘শ্রীরামকে আমরা সংক্ষিপ্ত তালিকায় রেখেছিলাম। আমাদের এখানে ২১ তারিখ (আগস্ট) দুপুর বেলা আসার কথা তার। অবশ্যই হেড কোচ হিসেবে আসছে না। সে আসছে টেকনিক্যাল কনসালটেন্ট হিসেবে।’ ভারতের হয়ে ২০০০ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত অনিয়মিতভাবে মাত্র ৮ ওয়ানডে খেলার সুযোগ পেয়েছেন বাঁহাতি ব্যাটিং অলরাউন্ডার শ্রীরাম।
এই ৮ ম্যাচে মিডলঅর্ডারে ব্যাটিংয়ে নেমে ১৩.৫০ গড়ে মাত্র ৮১ রান করেছেন এবং বাঁহাতি স্পিনে ৯ উইকেট নিতে পেরেছেন তিনি। বিতর্কিত টি২০ আসর ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লীগ (আইসিএল) এবং পরবর্তীতে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগে (আইপিএল) কিছু ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছেন ক্যারিয়ারের শেষদিকে। স্বীকৃত টি২০ খেলেছেন তিনি ১৫টি। মাত্র ২১.১৮ গড়ে ২৩৩ রান ৯৯.৫৭ স্ট্রাইকরেটে এবং ৪ উইকেট আছে শ্রীরামের।
এমন ক্যারিয়ার যার তাকে কেন বিসিবি টি২০ দলের দায়িত্বে আসীন করছে? এর মূল কারণ খেলোয়াড়ি ক্যারিয়ার তেমন ভাল না হলেও কোচিং ক্যারিয়ার দারুণ সমৃদ্ধ শ্রীরামের। এ বিষয়ে পাপন বলেন, ‘কতগুলো বিবেচনায় তাকে আনা হয়েছে। যেহেতু আইপিএলের সঙ্গে সম্পৃক্ততা আছে। আমরা এমন কাউকে চাচ্ছিলাম যার সঙ্গে টি২০ সম্পৃক্ততা আছে, অভিজ্ঞতা আছে। আর যেহেতু খেলা অস্ট্রেলিয়ায়, সে অস্ট্রেলিয়ায় অনেক দিন কাজ করেছে। এই দুটি কারণে তাকে আমরা বিশ্বকাপ পর্যন্ত নিয়েছি।’
২০১৮ থেকে ২০২২ পর্যন্ত শ্রীরাম অস্ট্রেলিয়ার সহকারী কোচ হিসেবে কাজ করেছেন। এছাড়া ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার (সিএ) কনসালটেন্ট হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়া ‘এ’ দলের ভারত সফরে দারুণ কাজ করার পর তিনি একই বছর বাংলাদেশ সফরে অসি জাতীয় দলের স্পিন কোচ হিসেবে আসেন। পরে ২০১৬ টি২০ বিশ্বকাপেও অস্ট্রেলিয়ার স্পিন কোচ ছিলেন। ২০১৮ সালে অবারও অস্ট্রেলিয়ার স্পিন কোচ হন ভারতের বিপক্ষে ৪ টেস্টের হোমসিরিজে।
২০২১ টি২০ বিশ্বকাপ জয়ী অসি দলেরও স্পিন কোচ ছিলেন তিনি। ২০১৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার টি২০ গ্লোবাল লীগের প্রথম আসরেই শ্রীরাম জোহানেসবার্গ জায়ান্টসের কোচ হিসেবে কাজ করেন। এছাড়া ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগে (আইপিএল) দিল্লী ডেয়ার ডেভিলসের সহকারী কোচ এবং পরবর্তীতে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যঙ্গালুরুর (আরসিবি) দায়িত্ব পালন করেছেন শ্রীরাম। ২০১৯ সালে একাধারে দলটির ব্যাটিং ও স্পিন বোলিং কোচ ছিলেন তিনি। টি২০ ক্রিকেটে শ্রীরামের এত কোচিং অভিজ্ঞতার কারণেই তাকে বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তবে ডোমিঙ্গোকে টি২০ দলের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়ার যে গুঞ্জন, সে বিষয়ে পাপন বলেন, ‘এটা আমরা এখনও ঠিক করিনি। ২২ তারিখ (আগস্ট) সবার সঙ্গে বসা হবে। বসে আমরা সিদ্ধান্টত নেব। অনেক পরিবর্তনই আসবে।’
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের বিপক্ষে একমাত্র অর্ধশতক হাঁকানোর ম্যাচে ভারতের হার দেখেন শ্রীরাম। সেটি তার শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ। তবে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট ও লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে দুর্দান্ত ছিলেন শ্রীরাম। এমনকি রঞ্জি ট্রফিতে এক মৌসুমে ১০৭৫ রান করার রেকর্ডও আছে তার। সবমিলিয়ে প্রথম শ্রেণীর ১৩৩ ম্যাচে ৩২ সেঞ্চুরি ও ৩৬ হাফ সেঞ্চুরিতে ৫২.৯৯ গড়ে এ বাঁহাতি ৯৫৩৯ রান করেন। সর্বোচ্চ ২৮৮। উইকেট নেন ৮৫টি।
আর ৫০ ওভারের স্বীকৃত ১৪৭টি ম্যাচে ৩৩.৬২ গড়ে ৪ সেঞ্চুরি ও ২৬ হাফ সেঞ্চুরিতে ৪১৬৯ রান করেন তিনি। সর্বোচ্চ অপরাজিত ১৪৮। এছাড়া ১১৫ উইকেট নিয়েছেন এ-ই ফরম্যাটে। ২০১২ সালে পেশাদার ক্রিকেটে সর্বশেষ লিস্ট ‘এ’ ম্যাচ খেলে কোচিংয়ে মনোযোগী হন শ্রীরাম। আর কোচিং পেশায় নজর কাড়েন সবারই। অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্বে গত বছর আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে ভারতের দায়িত্বও পালন করেন শ্রীরাম। এখন বাংলাদেশ দলের টি২০ ক্রিকেটে উন্নতি আনার ক্ষেত্রে এ ভারতীয় কোচ কেমন করেন সেটাই দেখার অপেক্ষা। তিনি নিজে অবশ্য বাংলাদেশের হয়ে কাজ করতে মুখিয়ে আছেন।
শ্রীরাম বলেন, ‘২৫ বছরের ক্রিকেট অভিজ্ঞতা এবং এলিট পর্যায়ে ৯ বছরের কোচিং অভিজ্ঞতা নিয়ে আমি আসছি। বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের সঙ্গে কাজ করার জন্য সত্যিই মুখিয়ে আছি। আমি বিশ্বাস করি বাংলাদেশের সাদা বলের ক্রিকেট অনেক বেশি সামর্থ্য আছে। এই মেধাসম্পন্ন দলের সঙ্গে দুটি উচ্চ পর্যায়ের ইভেন্টে সংযুক্ত থাকার ভাবনাটা আমাকে বেশ উদ্বেলিত করছে।’