
সিঙ্গাপুরের বিরুদ্ধে জয় উদ্যাপন বাংলাদেশের নারী ফুটবলারদের
বিজয়ের মাসে সোমবার কমলাপুর স্টেডিয়ামে গোলোৎসব করেছেন বাংলাদেশের মেয়েরা। ফিফা আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে তারা ৮-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে সিঙ্গাপুরকে। তিনদিন আগে প্রথম ম্যাচে এই ভেন্যুতে একই প্রতিপক্ষকে ৩-০ গোলে হারিয়েছিলেন সাবিনারা। ঘরের মাঠে এবার প্রতিপক্ষকে গোলবন্যায় ভাসালেন তারা। বাংলাদেশের হয়ে তহুরা খাতুন ও ঋতুপর্ণা চাকমা জোড়া গোল করেন। এ ছাড়া ১টি করে গোল করেন সানজিদা আক্তার, মাতসুশিমা সুমাইয়া, শামসুন্নাহার জুনিয়র ও অধিনায়ক সাবিনা খাতুন। এটা ছিল আন্তর্জাতিক নারী ফুটবলে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বাধিক ব্যবধানে জয়ের কৃতিত্ব। সবচেয়ে বেশি গোলের ব্যবধানে জিতেছিল ২০১০ সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে, ভুটানকে ৯-০ গোলে হারিয়ে। এ ছাড়া আরেকটা ৮-০ গোলে জেতার নজির আছে লাল-সবুজ বাহিনীর। সেটাও ভুটানের বিরুদ্ধেই (২০২২ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে)।
প্রথম ম্যাচে খেলতে না পারলেও দ্বিতীয় ম্যাচে সিঙ্গাপুরের হয়ে খেলেন ফরোয়ার্ড দানেলে তান। জার্মান ক্লাব বরুসিয়া ডর্টমুন্ডে খেলেন বিধায় তাকে নিয়ে বাংলাদেশ শিবির কিছুটা চিন্তিত ছিল। কিন্তু তাদের এই দুশ্চিন্তা ছিল অমূলক। কেননা তাকে বোতলবন্দি করে রাখেন বাংলাদেশের ডিফেন্ডাররা। আসলে সিঙ্গাপুরের মিডফিল্ড থেকে দানেলে সেভাবে বল সরবরাহ পাননি। সেই অর্থে বাংলাদেশই মিডফিল্ডে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ রাখে। যার কারণে নিষ্ক্রিয় ছিলেন দানেলে।
ম্যাচ শেষে বাংলাদেশের কোচ সাইফুল বারী টিটু বলেন, আমি আগেও বলেছি ওদের কথা। মেন্টালি ওরা কতটা টাফ। আমি নিজে প্লেয়ার ছিলাম। কখনো বিশ^াস করতে পারিনি যে প্রথম ম্যাচে ৩-০ গোলে জিতেছি। সেই ম্যাচটি অত কঠিন ছিল না। আমরা খুব সহজেই জিতেছিলাম। কিন্তু একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে এবার আট গোলে জেতা, এটার পুরো কৃতিত্ব ফুটবলারদের। ভিন্ন মাত্রার মেন্টালিটি দেখিয়েছে মেয়েরা।’
টিটু বলেন, ‘আগেই বলেছিলাম বরুসিয়া ডর্টমুন্ডে খেলা এক ফুটবলার আছে ওদের। তবে ওর বাবার সঙ্গে আমার একটা পার্টিতে দেখা হয়েছিল, তখন সে আমাকে বলেছে ডর্টমুন্ডের মেয়েদের টিম মাত্র শুরু করেছে। আগে ছিল না। প্রথম ম্যাচে যেহেতু নামেনি, ফলে ধরে নিয়েছিলাম দ্বিতীয় ম্যাচে নামবে। এবং ওই নাম্বার নাইন আমাদের সমস্যায় ফেলবে। কিন্তু ম্যাচে ও যতগুলো বল পেয়েছে, সবই অফসাইড ছিল। তো আমার কখনো তাকে নিয়ে ওইভাবে প্ল্যান ছিল না।’ প্রথমার্ধে বল পজিশন একটু কম ছিল বাংলাদেশের, তবে গোল পেতে সমস্যা হয়নি।
নিজ দলের রিজার্ভ বেঞ্চ নিয়ে গর্ব করলেন টিটু, ‘আমার সবচেয়ে পজিটিভ দিক হচ্ছে- যাদের বদলি হিসেবে নামিয়েছি, সেই সুমাইয়া, শামসুন্নাহার জুনিয়র... ওরা বেঞ্চ থেকে মাঠে নেমে যেভাবে পারফর্ম্যান্স করেছে, তাতে বলতেই হয় এই টিমটা কতটা ভালো। বলতে পারেন বেঞ্চও অনেক শক্তিশালী।’ আমার ধারণা সাফের পর দেশের মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছে মেয়েরা। সেই ধারাটা ধরে রাখাই ছিল ওদের কাজ। সেটা তারা করে যাচ্ছে। আর বিদেশের মাটিতে গিয়ে আমরা যে দুটি টাফ ম্যাচ খেলেছিলাম, বিশেষ করে জাপানের বিপক্ষে, তো ওই জিনিসটা একটা বিরাট অভিজ্ঞতা।
আমার ধারণা ওই ম্যাচের পর মানসিকভাবে তারা আরও শক্ত হয়েছে। অধিনায়ক সাবিনা খাতুন বলেন, ‘প্রথমত ফিটনেস অনেক বড় একটা বড় ব্যাপার। নেপালের সঙ্গে যে দুটো ম্যাচ খেলেছিলাম, সেখানে মেয়েদের পারফর্ম্যান্স প্লাস ফিটনেসের অনেক ঘাটতি ছিল। তবে গত তিন-চার মাস যে প্র্যাকটিস এবং মেয়েরা যে পরিশ্রম করেছে, সেটার ধারাবাহিকতাই আসলে মাঠে দিয়েছে।’ নিজের গোল মিস নিয়ে সাবিনার স্বীকারোক্তি, ‘যেসব গোল মিস করার পর যে গোল করেছি, সেটা দর্শনীয় না। সাবিনা যোগ করেন, ‘গত বছরের জুনে মালয়েশিয়ার সঙ্গে খেলার পর আমাদের একটা অভিজ্ঞতা হয়েছে। সেবার প্রথম ম্যাচ জেতার পর (৬-০) দ্বিতীয়টি ড্র (০-০) করেছিলাম। ওটা এবার মেয়েদের মাথায় ছিল। আমাদের টার্গেটই ছিল ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে গোল আদায় করা।’
জোড়া গোলের মালকিন ঋতুপর্ণা চাকমা বলেন, ‘এই প্রথম সিনিয়র দলে খেলে ম্যাচে জোড়া গোল করলাম। এর আগে ২টি গোল করেছিলাম (২০২২ সাফে পাকিস্তান ও ভুটানের বিরুদ্ধে ১টি করে)। ম্যাচে হাটট্রিক করতে পারিনি বলে কোনো আক্ষেপ নেই। বরং দল জিতেছে বলেই আনন্দটা বেশি।’
সিঙ্গাপুর কোচ করিম বেঞ্চেরিফা ম্যাচ শেষে বলেন, ‘যদি চার-পাঁচ বছর আগের বাংলাদেশ দলটার দিকে তাকান, তাহলে দেখবেন, তারা শূন্য থেকে শুরু করেছিল। আমাদের এই দলেরও এখন একই অবস্থা। কারণ দলটা একেবারেই নতুন। এশিয়ান গেমসে খেলা কোনো প্লেয়ারই এই দলে নেই। বাংলাদেশ-জাপানের মধ্যে এই পার্থক্যটা ছিল, তারাও জাপানের বিপক্ষে ৮-০ গোলে হেরেছে এশিয়ান গেমসে। এখন বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের সেই পার্থক্য।’ করিম আরও বলেন, ‘এটা এমন নয় যে, মাত্র দুদিনের ফল পাচ্ছে বাংলাদেশ। অনেক সহকর্মীর কঠোর পরিশ্রমের ফল এটা, যেটা আমি কুর্নিশ করি। বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানাই; অবশ্যই এর আগে যে কোচরা এই মেয়েদের নিয়ে কাজ করেছেন, অনুশীলন করিয়েছেন, প্রস্তুত করেছেন, তাদেরও স্যালুট।