ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জাতীয় স্কুল ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ

প্রতিশোধ নিয়ে চ্যাম্পিয়ন নীলফামারীর ছমির উদ্দিন স্কুল

স্পোর্টস রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২১:৩৫, ৬ জুলাই ২০২২; আপডেট: ২১:৪৭, ৬ জুলাই ২০২২

প্রতিশোধ নিয়ে চ্যাম্পিয়ন নীলফামারীর ছমির উদ্দিন স্কুল

শিরোপা জিতে ছমির উদ্দিন স্কুলের ফুটবলারদের উল্লাস

আগেরদিন সংবাদ সম্মেলনে স্কুল ফুটবলের চেয়ারম্যান বিজন বড়ুয়া বলেছিলেন, “এই আসরে ফুটবলাররা অসাধারণ ফুটবল খেলছে। আমার কাছে অনেকের খেলা দেখে মনে হয়েছে তারা ভবিষ্যতের মেসি-রোনালদো, কায়সার হামিদ, মুন্না, সাব্বির হতে পারে। আপনারা দয়া করে ফাইনাল খেলা দেখতে আসুন। ওদের খেলা দেখে যদি ভাল না লাগে, তাহলে আমাকে দুটি গালি দিয়ে চলে যাবেন’!

আজ বুধবার দুপুরের দিকে ঢাকার পল্টনের আউটার স্টেডিয়ামে গিয়ে বিজনের কথার সত্যতা পাওয়া গেল। সকালে একপশলা বৃষ্টি হওয়ার কারণে মাঠ ছিল পিচ্ছিল ও কিছুটা কর্দমাক্ত। তারপরও এমন মাঠে যথেষ্ট ভালমানের ফুটবল উপভোগ করেছেন হাজার দুয়েক দর্শকরা। যশোরের বেনাপোল মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয়কে ১-০ গোলে হারিয়ে জাতীয় স্কুল ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয়েছে নীলফামারীর ছমির উদ্দিন স্কুল এ্যান্ড কলেজ। বিজয়ী দলের অধিনায়ক-ফরোয়ার্ড নাইম ইসলাম ম্যাচের ১০ মিনিটে জয়সূচক ও একমাত্র গোলটি করেন।

যুব ও ক্রীড়া সচিব মেজবাহ উদ্দিন ফাইনাল খেলা শেষে প্রধান অতিথি হিসেবে বিজয়ী ও বিজিত দলের খেলোয়াড়দের পুরস্কৃত করেন। প্লেয়ার অব দ্য ফাইনাল হন জিলকত হোসাইন (ছমির উদ্দিন স্কুল), প্লেয়ার অব দ্য টুর্নামেন্ট হন সাইদুর রহমান রাহুল (বেনাপোল স্কুল), সর্বোচ্চ গোলদাতা হন নাইম ইসলাম (৮ গোল, ছমির উদ্দিন স্কুল), সেরা গোলরক্ষক হন সৌরভ সরকার (অরুণ চন্দ্র হাই স্কুল, নোয়াখালী)। চ্যাম্পিয়ন দলকে ট্রফি এক লাখ টাকা ও রানার্সআপ দলকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার দেয়া হয়। হবিগঞ্জের আলী ইদ্রিস হাইস্কুলকে ফেয়ার প্লে ট্রফি দেয়া হয়।

৮০ মিনিটের (৪০+৪০ মিনিট) জমজমাট ম্যাচে দুই দলই আক্রমণাত্নক ও গতিশীল ফুটবল খেলেছে। প্রথমার্ধে উভয় দলই সমানতালে খেলে। তবে দ্বিতীয়ার্ধে বেনাপোল স্কুল অনেকটা একতরফা খেলে এবং কমপক্ষে চারটি গোলের সুযোগ নষ্ট করে। রেফারি খেলা শেষের বাঁশি বাজালে নীলফামারীরর স্কুলের খেলোয়াড়রা যখন পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে উল্লাসে মাতোয়ারা, তখন বেনাপোল স্কুলের খেলোয়াড়রা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আকুল কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। সবচেয়ে বেশি কেঁদেছেন অধিনায়ক রাহুল। তার কান্না থামছিলই না। তাকে চ্যাম্পিয়ন দলের খেলোয়াড়ররা তো বটেই, এমনকি দর্শকরাও গিয়ে স্বান্তনা দেন।

চ্যাম্পিয়ন দলের অধিনায়ক নাইম ইসলাম এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী। তিনি বলেন, ‘ফাইনালে গোল করবো-ফুল কনফিডেন্স ছিল। গ্রুপ পর্বে আমরা বেনাপোল স্কুলের কাছে ৪-০ গোলে হেরেছিলাম। এজন্য আমরা পণ করে মাঠে নেমেছিলাম-আমরা ফাইনালে প্রতিশোধ নেব এবং ওদেরকে ৫ গোল দেব।’ তবে ৫ গোল দিতে না পারলেও নাইমদের ১ গোলে জিতেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। নাইম আরও বলেন, ‘তবে আমরা চ্যাম্পিয়ন হলেও এটা স্বীকার করতে হবে ওরা আমাদের চেয়ে অনেক ভাল দল এবং ফাইনালেও আমাদের চেয়েও অনেক ভাল খেলেছে। গ্রুপ পর্বে আমরা ওদের কাছে বড় ব্যবধানে হারায় ফাইনালে হয়তো ওরা আমাদের আন্ডার এস্টিমেন্ট করে খেলেছিল। ম্যাচে শুরুতে কোচ আমাদের ৪-৩-৩ ফর্মেশনে খেলান। পরে আমরা পরিস্থিতি অনুযায়ী ৪-৪-২ ফমের্শনে খেলি।’

রানার্সআপ দলের অধিনায়ক রাহুলকে নিজেদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক খেলোয়াড় মানেন নাইম, ‘আজ অসাধারণ খেলেছে রাহুল। তাকে মার্ক করার জন্য আমাদের পরিকল্পনা ছিল।’

নিজের গোল নিয়ে নাইমের প্রতিক্রিয়া, ‘আমি খুবই খুশি যে ফাইনালে আমার গোলেই দল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য ছিল সেটাই। লক্ষ্যপূরণ হয়েছে। এর আগে সুপার মক কাপে খেলতে পারিনি, এজন্য আক্ষেপ ছিল। আমার ভবিষ্যত লক্ষ্য জাতীয় দলে খেলা।’ ফাইনালে নিজের গোলটি নিয়ে নাইমের ভাষ্য, ‘উইথ বলে পা চালিয়ে গোলটি করেছি। আত্মবিশ্বাস ছিল এক চান্সেই গোল করতে পারবো। আমাদের টিম কম্বিনেশন ভালো ছিল।’ বিপিএলেও তো স্ট্রাইকাররা এভাবে গোল করতে পারে না। তারপরও টিভিতে নিয়মিত বিপিএল ফুটবল দেখে নাইম।

ঈদের আগে চ্যাম্পিয়ন হওয়া নিয়ে নাইমের উচ্ছ্বাস, ‘ঈদের আনন্দ, তার ওপর জাতীয় স্কুল ফুটবলেও শিরোপা। ফলে ঈদের আনন্দটা দ্বিগুণ হবে আমাদের। এই বাড়তি আনন্দ নিয়ে বাড়ি যাচ্ছি। তাছাড়া ক্যারিয়ারে এই প্রথম ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হলাম। এই আসরে এ নিয়ে আমাদের স্কুল চারবার সেমিফাইনাল খেলেছে আর এবারই প্রথম ফাইনালে উঠেছে। প্রথম ফাইনালেই চ্যাম্পিয়ন-এটাও দারুণ আনন্দদায়ক ঘটনা।’ 

রানার্সআপ দলের অধিনায়ক রাহুল বিষন্নচিত্তে বলেন, ‘সত্যি বলতে কি, আমরা ফাইনালে অধিপত্য বজায় রেখে ভাল খেলেছি ঠিকই। কিন্তু আজকে ভাগ্যের কাছে হেরে গেছি। তাছাড়া রেফারিও আমাদের বিপক্ষে ছিল। তিনি আমাদের দুটি পেনাল্টি দেননি। একটা হ্যান্ডবল হয়েছিল, একটা ফাউল হয়েছিল। রেফারি অন্তত একটা পেনাল্টি দিতে পারতো। কিন্তু কোনটাই দেয়নি। তাছাড়া ফাইনালে আমাদের দলের দুজন কার্ডের কারণে খেলতে পারেনি। একজন স্ট্রাইকার আকাশ। আরেকজন ডিফেন্ডার অলিদ হাসান।’

লেফট উইং দিয়ে বারবার ঢুকে জিরো এ্যাঙ্গেল থেকে কাটব্যাক করছিলেন রাহুল। কিন্তু সতীর্থরা একটা বলেও ফিনিশ করতে পারেনি। এ নিয়ে রাহুলের ভাষ্য, ‘কি আর বলবো, আর কিছু বলার নেই।’ অপর প্রশ্নের জবাবে রাহুল বলেন, ‘ছমির উদ্দিন স্কুলকে আমরা গ্রুপ পর্বে ৪-০ গোলে হারালেও ফাইনালে কিন্তু আমরা তাদের মোটেও আন্ডার এস্টিমেট করে খেলিনি। তাদেরকে সমীহ করেই খেলেছি।’     

 

×