ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

তাইজুলের ঘূর্ণিতেই বিপর্যস্ত নিউজিল্যান্ড

মো. মামুন রশীদ

প্রকাশিত: ০১:৫১, ২ ডিসেম্বর ২০২৩

তাইজুলের ঘূর্ণিতেই বিপর্যস্ত নিউজিল্যান্ড

কেন উইলিয়ামসনের উইকেট দখলের পর বাংলাদেশ শিবিরকে আনন্দ-উল্লাসে ভাসানোর আরেকটি উপলক্ষ এনে দেন তাইজুল ইসলাম

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৮ টেস্ট খেলে মাত্র এক জয় গত বছর তাদেরই মাটিতে। মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে পাওয়া সেই অবিস্মরণীয় জয়ের স্মৃতি সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ফিরিয়ে আনার কাছাকাছি বাংলাদেশ। সেবার জিতিয়েছেন পেসাররা, এবার পথ তৈরি করেছেন স্পিনাররা। চতুর্থ দিন শেষে সিরিজের প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে সফরকারী নিউজিল্যান্ড ৭ উইকেটে ১১৩ রান তুলেছে। স্বীকৃত ব্যাটার হিসেবে শুধু টিকে আছেন ড্যারিল মিচেল ৪৪ রান নিয়ে। ৩৩২ রানের বড় লক্ষ্য তাদের সামনে, এখনো বাকি ৩ উইকেট নিয়ে ২১৯ রান করতে হবে ম্যাচের পঞ্চম দিনে। সেটি স্পিন স্বর্গ হয়ে ওঠা সিলেটের এই উইকেটে দুরুহ কাজ। কিউইদের এই বিপর্যয় ডেকে এনেছেন বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম। ঘরের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সবেমাত্র ৭ম টেস্ট খেলতে নেমেছে বাংলাদেশ, ৩টি ড্র করলেও একবারও জিততে পারেনি। এবার সেই জয়ের সুবাস পেতে শুরু করেছে টাইগাররা। এর কারণ দ্বিতীয় ইনিংসেও দুর্দান্ত ব্যাটিং পারফর্ম্যান্স। আগের দিন ৩ উইকেটে ২১২ রান তোলা বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৩৮ রানে থামে মুশফিকুর রহিম ও মেহেদি হাসান মিরাজের জোড়া ফিফটিতে। 
স্পিনারদের বিপক্ষে খেলতে হবে সেটি আগেভাগেই জানা কিউইদের। তাই সিলেটে টেস্ট শুরুর আগে থেকেই তারা সেভাবে অনুশীলন করেছেন। সেজন্য বাংলাদেশ সফরেও তারা এসেছে স্কোয়াডে এক ঝাঁক স্পিনার নিয়ে। কিন্তু এরপরও অভিজ্ঞ তাইজুলের বাঁহাতি স্পিনের কাছে অসহায় হয়েছে নিউজিল্যান্ড দল। প্রথম ইনিংসে তিনি ৪ উইকেট নিয়েছেন, এমনকি অনিয়মিত স্পিনার মুমিনুল হক ক্যারিয়ারসেরা বোলিংয়ে ৪ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়েছেন। যদিও প্রথম ও তৃতীয় দিন স্পিনারদের খুব বেশি সুবিধা পেতে দেখা যায়নি সিলেটে। কিন্তু দ্বিতীয় দিন বিকেলে বাংলাদেশের স্পিনাররা দাপট দেখিয়েছেন। অবশ্য বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে নিউজিল্যান্ডের স্বীকৃত বিশ^মানের স্পিনাররা সুবিধা করতে পারেননি। কিন্তু অনিয়মিত স্পিনার গ্লেন ফিলিপস কিউইদের পক্ষে সেরা সাফল্য দেখিয়েছেন ৪ উইকেট নিয়ে। তা ছাড়া উভয় দলেরই একাদশে স্পিনারদের আধিক্য। টেস্ট শুরুর পর তারাই সফলকাম হয়েছেন। দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের ১০টি উইকেটের মধ্যে বাঁহাতি স্পিনার এজাজ প্যাটেল নিয়েছেন ৪ উইকেট। লেগস্পিনার ইশ সোধি নিয়েছেন ২টি ও ফিলিপস একটি। পেসাররা মাত্র ১ উইকেট নিতে পেরেছেন। আর এজাজের মারাত্মক বোলিংয়েই এদিন বাংলাদেশ খুব বেশিদূর যেতে পারেনি। আগের দিনের সঙ্গে আর মাত্র ১২৬ রান যোগ করতেই বাকি ৭ উইকেট হারিয়ে গুটিয়ে গেছে। সেটিও হয়েছে শেষদিকে মেহেদি হাসান মিরাজের লড়াকু ফিফটির সুবাদে। প্রথম ইনিংসে ব্যর্থ হলেও এবার তিনি টেলএন্ডারদের কাছে থেকে তেমন কোনো সহায়তা না পেয়েও ক্যারিয়ারের পঞ্চম অর্ধশতক হাঁকিয়েছেন। তার আগে অবশ্য মুশফিক ক্যারিয়ারের ২৭তম অর্ধশতক হাঁকিয়েছেন। ৪৩ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি তৃতীয় দিনশেষে। সেঞ্চুরিয়ান অধিনায়ক শান্ত র্ছিলেন তার সঙ্গী। কিন্তু শান্ত ১ রান যোগ করেই সাজঘরে ফেরেন। তবু মুশফিক ধৈর্যহারা হননি। মাটি কামড়ে থেকে শেষ পর্যন্ত ১১৬ বলে ৭ চারে ৬৭ রান করেছেন তিনি। আর এতেই তিনশ’ পেরিয়েছে বাংলাদেশের লিড। বাকি ব্যাটাররা ভালো করতে পারলে হয়তো সেটি আরও বড় হতে পারত। কিন্তু শেষ ৫টি উইকেট ৬০ রানেই হারিয়েছে বাংলাদেশ। তবু দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৩৮ রান তুলে ৩৩১ রানের বিশাল লিড পেয়ে যায়। এজাজ ৪টি, সোধি ২টি উইকেট নেন। ৩৩২ রানের লক্ষ্যটা যে কঠিন হবে নিউজিল্যান্ডের জন্য সেটি তারা ব্যাটিংয়ে নামার পরেই স্পষ্ট হয়েছে। তাইজুল শুরু থেকেই কোণঠাসা করেছেন কিউই ব্যাটারদের। যদিও বাঁহাতি পেসার শরিফুল ইসলাম প্রথম ওভারেই টম লাথামকে সাজঘরে ফিরিয়ে শুরু করে দেন। পরবর্তীতে তাইজুল তার ঘূর্ণিতে বেসামাল করেছেন কিউইদের। প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। ক্যারিয়ারে ১২তম বার ৪ উইকেট নেওয়ার ঘটনা সেটি। এবারও ৪ উইকেট নিয়েছেন। প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি পাওয়া কেন উইলিয়ামসন ১১, ডেভন কনওয়ে ২২, টম ব্লান্ডেল ৬ ও কাইল জেমিসন ৯ রানে তার শিকার হয়েছেন। এ ছাড়া যখনই বোলিংয়ে এসেছেন ব্যাটারদের সমস্যায় ফেলেছেন। তারা র্ঠিকভাবে খেলতে পারেননি তাইজুলকে। 
তাকে বাকি দুই অফস্পিনার মিরাজ ও নাঈম হাসান দারুণ সমর্থন দিয়েছেন। তারাও দুর্দান্ত বোলিংয়ে নাজেহাল করেছেন কিউই ব্যাটারদের। তাইজুল ২০ ওভারে ৭ মেডেনে মাত্র ৪০ রান দিয়ে ৪টি, নাঈম ১০ ওভারে ২৪ ও মিরাজ ১১ ওভারে ৩১ রান খরচায় একটি করে উইকেট নিয়েছেন। এতেই ১১৩ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে পরাজয়ের প্রহর গুনছে নিউজিল্যান্ড।

×