
ইলন মাস্কের জন্য সময়টা ভালো যাচ্ছে না ব্যক্তিগত জীবনে বিতর্ক, আর পেশাগত দুনিয়ায় এখন তার সবচেয়ে বড় মহাকাশ প্রকল্প স্টারলিংক পড়েছে সূর্যের খপ্পরে। সূর্যের বাড়তি রোদের ঝলকে একের পর এক স্যাটেলাইট কক্ষপথ হারিয়ে ভূপতিত হচ্ছে।
সম্প্রতি নাসার এক গবেষণা জানায়, সূর্যের ক্রমবর্ধমান তেজস্ক্রিয়তা পৃথিবীর চারপাশে ঘুরে বেড়ানো স্যাটেলাইটগুলোর ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলছে। এর বড় শিকার হচ্ছে ইলন মাস্কের স্পেসএক্স-এর স্টারলিংক স্যাটেলাইটগুলো।
নাসার গবেষকদের মতে, সূর্য এখন তার ১১ বছর মেয়াদি চক্রের সর্বোচ্চ সক্রিয়তায় রয়েছে। এই সময় সূর্যের তেজ হঠাৎ বেড়ে গিয়ে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। ফলে বায়ুমণ্ডল প্রসারিত হয়, বাড়ে ঘর্ষণ, আর সেই চাপেই নিচে নামতে শুরু করে কক্ষপথে ঘূর্ণায়মান স্যাটেলাইটগুলো।
২০২০ সাল থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ৫২৩টি স্টারলিংক স্যাটেলাইট পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ঢুকে পড়েছে। শুধু ২০২৪ সালেই পড়ে গেছে ৩১৬টি স্যাটেলাইট। আগের বছরগুলোতেও সংখ্যাটা কম ছিল না ২০২১ সালে ৭৮টি, ২০২২ সালে ৯৯টি, আর ২০২৩ সালে ৮৮টি স্যাটেলাইট ভূপতিত হয়।
মহাকাশে সংঘর্ষের ঝুঁকি
স্যাটেলাইটগুলো বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করেই পুড়ে যায় এই খবর যতটা স্বস্তির, ততটাই দুশ্চিন্তার কারণও আছে। কেননা, সেগুলো যখন নিচে নামতে শুরু করে, তখন পথঘাট একেবারেই অনিশ্চিত। পৃথিবীর নিচু কক্ষপথে যেসব স্যাটেলাইট বা মহাকাশযান আগে থেকেই রয়েছে, তাদের জন্য তৈরি হয় সংঘর্ষের ভয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্টারলিংক স্যাটেলাইটগুলো অপেক্ষাকৃত সস্তা, হালকা এবং গণহারে তৈরি। এগুলোর কক্ষপথ ঠিক রাখতে বেশি উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়নি। ফলে সূর্যের বাড়তি চাপ এলে তারা সহজেই নিচে নামতে শুরু করে।
সূর্যচক্র: এক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের গল্প
সূর্যের এই ১১ বছর মেয়াদি চক্রের নাম সোলার সাইকেল। প্রতি চক্রের শেষে সূর্য তার সর্বোচ্চ উত্তেজনায় পৌঁছে যায়, যেটা ঘটছে এখন। এই সময় সূর্যের ভেতর থেকে তীব্র সৌর ঝড় বের হয়, যেগুলো পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের ওপর ধাক্কা মারে। তখন বায়ুমণ্ডল ফুলে ওঠে, যার ফলেই স্যাটেলাইটগুলো আরও বেশি ঘর্ষণের মুখে পড়ে এবং ধীরে ধীরে কক্ষপথ হারিয়ে ফেলে।
এই প্রসঙ্গে বেইজিংভিত্তিক মহাকাশবিষয়ক ম্যাগাজিন 'অ্যারোস্পেস নলেজ'-এর প্রধান সম্পাদক ওয়াং ইয়ানান বলেছেন, “যখন সূর্যের সক্রিয়তা বাড়ে, তখন বায়ুমণ্ডলের উচ্চতা বাড়ে। ফলে নিচু কক্ষপথের স্যাটেলাইটগুলো বায়ুর সঙ্গে বেশি ঘর্ষণে পড়ে, কক্ষপথে থাকাটা কঠিন হয়ে পড়ে।”
ভাগ্য ভালো, স্টারলিংক স্যাটেলাইটগুলো পৃথিবীর মাটিতে পড়ে বড় কোনো ক্ষতি করছে না। কারণ, সেগুলো উচ্চতর বায়ুমণ্ডলে ঢুকেই পুরোপুরি পুড়ে যাচ্ছে। তবে সমস্যা অন্য জায়গায় অন্য মহাকাশযান বা নতুন উৎক্ষেপণকৃত স্যাটেলাইটের জন্য এই ধরণের অনিয়ন্ত্রিত পতন এক নতুন ঝুঁকি তৈরি করছে।
মহাকাশ এখন শুধু গবেষণার জায়গা নয়, ব্যবসা আর প্রযুক্তির নতুন সীমান্ত। কিন্তু প্রকৃতির নিয়মের কাছে সবই নরম। ইলন মাস্কের স্টারলিংক প্রকল্প পৃথিবীর ইন্টারনেট-সংযোগে বিপ্লব আনতে চেয়েছিল, কিন্তু সূর্যের অতিরিক্ত উত্তাপ সেই পরিকল্পনাতেই ছন্দপতন ঘটাচ্ছে।
গবেষকরা বলছেন, আগামীর পৃথিবীতে মহাকাশকে নিরাপদ রাখতে হলে সূর্যচক্রের এই স্বাভাবিক গতিবিধি মাথায় রেখেই স্যাটেলাইট ডিজাইন করতে হবে। না হলে কক্ষপথে সংঘর্ষ, তথ্য বিপর্যয় এবং প্রযুক্তির ব্যাঘাত সবই হঠাৎ করে সামনে এসে দাঁড়াতে পারে।
সূত্র:https://tinyurl.com/m5pyake8
আফরোজা