
ছবি: সংগৃহীত
প্রতি ২৬ সেকেন্ড পরপর পৃথিবী একবার করে হালকা কম্পিত হয়। মানুষের পক্ষে এই স্পন্দন অনুভব করা না গেলেও, সিসমোমিটার—ভূকম্প মাপার যন্ত্র—এই ধারাবাহিক কম্পনের অস্তিত্ব বহু আগেই শনাক্ত করেছে। বিজ্ঞানীরা এই ঘটনাকে বলেন ‘মাইক্রোসিজম’।
এই রহস্যময় স্পন্দনের সূত্রপাত ধরা পড়ে ১৯৬০-এর দশকে। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জ্যাক অলিভার তখন প্রথমবারের মতো এই কম্পনের অস্তিত্ব খুঁজে পান। তখন এটি ছিল শুধু একটি তাত্ত্বিক পর্যবেক্ষণ। কিন্তু ২০০৫ সালে কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা আধুনিক ডিজিটাল সিসমিক ডেটা বিশ্লেষণ করে সেই পুরোনো তথ্যের সত্যতা পান। এরপর থেকেই বৈজ্ঞানিকদের কৌতূহলের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে এ ঘটনা।
গবেষক মাইক রিটজওলারের নেতৃত্বে পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, পশ্চিম আফ্রিকার উপকূলবর্তী গিনি উপসাগর থেকেই এই ২৬ সেকেন্ডের কম্পন উৎপন্ন হয়। তিনি বলেন, ‘আমরা একটি অদ্ভুতভাবে ধারাবাহিক এবং স্থায়ী সংকেতের সন্ধান পেয়েছি।’
বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, এই কম্পনের পেছনে থাকতে পারে সমুদ্রের বিশাল ঢেউ যখন মহাসাগরের তলদেশের কন্টিনেন্টাল শেল্ফে আঘাত হানে, তখন সৃষ্ট মৃদু কম্পন। তবে এটি একমাত্র ব্যাখ্যা নয়।
২০১৩ সালে চীনের একদল বিজ্ঞানী ভিন্ন একটি তত্ত্ব দেন। তারা জানান, সাও টোম দ্বীপের কাছে একটি সুপ্ত আগ্নেয়গিরির ভেতরকার কার্যকলাপই হয়তো এই স্পন্দনের উৎস।
যদিও এ নিয়ে বহু গবেষণা হয়েছে, এখনো পর্যন্ত এর কোনো চূড়ান্ত বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই। ভূকম্পবিদ রিটজওলার বলেন, ‘এখনো আমরা একটি মৌলিক ব্যাখ্যার অপেক্ষায় আছি। এটি এখনো এক রহস্য, যা সমুদ্রের গভীরে বা আগ্নেয়গিরির পাথরের নিচে লুকিয়ে আছে।’
এই ২৬ সেকেন্ড পরপর হওয়া রহস্যময় কম্পন আজও পৃথিবীর গভীর অজানা রহস্যের একটি অংশ হিসেবে রয়ে গেছে বিজ্ঞানীদের কাছে।
সূত্র: এনডিটিভি।
রাকিব