
ছবিঃ সংগৃহীত
আধুনিক সমাজে ৪০ বছর বয়সকে অনেক সময় "মিডলাইফ ক্রাইসিস" বা মধ্যবয়স সংকট হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মৃত্যুর প্রতি দ্রুতগতির এগিয়ে চলা, ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা এবং অতীতের ভুলের বোঝা অনেককে এই বয়সে উদ্বিগ্ন করে তোলে। তবে ইসলাম এই বয়সকে দেখেছে সম্পূর্ণ ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে—একটি দায়িত্বপূর্ণ, আত্মসমালোচনার এবং কৃতজ্ঞতার বয়স হিসেবে।
পবিত্র সূরা আল-আহকাফ-এর ১৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেছেন:
"যখন মানুষ পরিপক্বতা লাভ করে এবং চল্লিশ বছরে পৌঁছে, তখন সে বলে, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে অনুগ্রহ করো যেন আমি তোমার সেই অনুগ্রহের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি যা তুমি আমার ওপর এবং আমার পিতামাতার ওপর করেছ। আর যেন আমি এমন সৎকর্ম করতে পারি যা তুমি পছন্দ করো, এবং আমার সন্তানেরাও যেন সৎ হয়। আমি তোমার দিকে ফিরে এসেছি, আর আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত।"
জীবনের মধ্যবিন্দুতে এক নতুন উপলব্ধি
ইসলামে চল্লিশ বছর বয়সকে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে ধরা হয়। এটি জীবনের এমন একটি সময়, যখন মানুষ তার অতীত জীবনের ভুলত্রুটি মূল্যায়ন করে ভবিষ্যতের জন্য একটি নতুন লক্ষ্য নির্ধারণ করে। আয়াতটিতে বলা হয়েছে, এই বয়সে পৌঁছে মানুষ যেন নিজের এবং পিতামাতার ওপর আল্লাহর অনুগ্রহের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। একইসাথে ভবিষ্যতের জন্য নেক আমলের দোয়া করে।
বিশেষত এই দোয়ায় সন্তানেরাও অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ, একজন ব্যক্তির দ্বীনদারি কেবল নিজ জীবন পর্যন্ত সীমাবদ্ধ নয়, বরং তার ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেও ইসলামী নীতিমালায় গড়ে তোলার দায়িত্ব রয়েছে।
পরিবার এবং উত্তরাধিকার নিয়ে উদ্বেগ নয়, দায়িত্ববোধ
এখানে আল্লাহ আমাদের শেখাচ্ছেন—নিজ সন্তানদের সৎভাবে গড়ে তোলার জন্য দোয়া করা এবং প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি। কারণ কিয়ামতের দিনে আল্লাহ প্রশ্ন করবেন: "তুমি তোমার সন্তানদের কীভাবে লালন-পালন করেছ?" যদি একজন অভিভাবক তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়, তবে তা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে নৈতিক অবক্ষয়ের সূচনা করতে পারে।
পরিণতি: জান্নাতের সুসংবাদ
পরবর্তী আয়াতে আল্লাহ তাআলা সেইসব ব্যক্তিদের জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন, যারা এই বয়সে পৌঁছে নিজেদের সংশোধন করে, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এবং সৎকর্মে মনোনিবেশ করে। তাদের ভালো কাজগুলো গ্রহণ করা হবে এবং খারাপগুলো ক্ষমা করে দেওয়া হবে।
উপসংহার
৪০ বছর বয়স ইসলামে এক সংকট নয় বরং আত্মোপলব্ধি ও কর্তব্য পালনের একটি অনন্য সুযোগ। এই বয়সে পৌঁছে একজন মুসলমানের উচিত, অতীত জীবনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা, ভবিষ্যতের জন্য সৎকর্মে মনোনিবেশ করা এবং নিজের সন্তানদের দ্বীন ও নৈতিকতা অনুযায়ী গড়ে তোলা।
এই দৃষ্টিভঙ্গি সমাজে প্রচলিত ‘মিডলাইফ ক্রাইসিস’-এর ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে, এবং একজন মানুষকে পরিণত বয়সে আরও অর্থপূর্ণ ও লক্ষ্যনির্দিষ্ট জীবনযাপনের দিকে আহ্বান জানায়।
আলীম